মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৪, ০৪:১৫ এএম
আপডেট : ১৯ মে ২০২৪, ০৭:৩৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ

জিপিএ-৫ পেয়েও অর্থাভাবে কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হালিমার

বাবা মায়ের সঙ্গে শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার। ছবি : কালবেলা
বাবা মায়ের সঙ্গে শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার। ছবি : কালবেলা

পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার নলী চড়কগাছিয়া তমিজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার। ভাঙা বাড়ি, চারদিকে স্পষ্ট দারিদ্র্যের ছাপ। ভাঙা বাড়ি ভাঙা চেয়ারে বসেই বাজিমাত করেছেন দরিদ্র অন্ধ বাবার কন্যা হালিমা আক্তার। দারিদ্র্যকে শুধু চ্যালেঞ্জ নয় রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অর্জন করেছেন মাধ্যমিকের শ্রেষ্ঠ সাফল্য জিপিএ ৫। বাড়িতে নেই সাফল্য অর্জনের ন্যূনতম আনন্দ অথচ হতে পারত ভিন্ন চিত্র মেতে থাকতে পারত চূড়ান্ত সাফল্যের আনন্দে। শিক্ষাজীবনে প্রথম সাফল্য এভাবে যে ভীতু করে হালিমাকে না দেখলে বোঝার উপায় নাই। টাকার অভাবে নিয়মিত প্রাইভেট পড়া হয়নি তার। বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করতেন। কোনোমতে শিক্ষকদের সহায়তায় পড়াশোনা করেও এত কষ্টের সাফল্য ধরে রাখতে পারবেন তো, এটাই এখন ভয়ের বিষয়। প্রতিবেশীরাও জানান, হালিমা সাফল্যের কথা। তারা চান, সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এই অদম্য মেধাবী এগিয়ে যাবে অনেক দূর।

হালিমা আক্তার কালবেলাকে জানান, আমি ডাক্তার হয়ে ফ্রিতে গরিব মানুষের সেবা করতে চাই। টাকার অভাবে আমি কলেজে ভর্তি হতে পারব না মনে হচ্ছে। গরিব হয়ে জন্মেছি বলেই হয়তো টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। বাবা প্রতিবন্ধী। আশপাশে মানুষ ও শিক্ষক লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে। এ ছাড়া সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে বইয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া শেষ করতে পেরেছি। কিন্তু উচ্চশিক্ষা লাভে অর্থের জোগান কোথা থেকে আসবে, কীভাবে আসবে, এ চিন্তা সারাক্ষণ ভাবিয়ে তুলছে আমাকে।

প্রতিবেশী কামরুল কালবেলাকে জানান, হালিমা মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় পড়াশোনার বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। এসএসসিতে ভালো ফলাফলও করেছে। কিন্তু এখন ভালো কলেজে ভর্তি করতে ও কলেজের পড়ালেখা চালাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেটা জোগাড় করা তাদের পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

হালিমার বাবা নাসির হাওলাদার কালবেলাকে জানান, আমার মেয়ে জিপি-৫ পেয়েছে, আমরা অত্যন্ত খুশি। স্কুলের স্যারদের এবং আশপাশের মানুষের সহযোগিতায় মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছি কারণ আমি প্রতিবন্ধী মানুষ কাজ করতে পারি না। আমার চার মেয়েকে কষ্ট করে পড়িয়েছি। আমার থাকার ঘর নেই। আমি রান্না ঘরে বসবাস করি। আমার একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিলে মেয়ে এখানে বসে লেখাপড়া করতে পারবে।

নীল চড়কগাছিয়া তমিজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, আমাদের স্কুল থেকে পাঁচটি জিপিএ-৫ পেয়েছে তার ভেতরে হালিমার পরিবার অত্যন্ত গরিব। আমরা ক্লাস সিক্স থেকে বিনা বেতনে হালিমাকে পড়িয়েছি। বাবা অন্ধ, অত্যন্ত আর্থিক কষ্টে জীবনযাপন করেন। আমরা চাই, মেয়েটির পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটি পেশায় যেন যুক্ত হতে পারে।

মঠবাড়িয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল খায়ের কালবেলাকে জানান, বিভিন্ন সময়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে মাঝে মাঝে তথ্য চাওয়া হয়, আমরা সেখানে তার তথ্য পাঠাব। তাছাড়া জেলা পরিষদ থেকে সহযোগিতা করা হয়। মেধাবী শিক্ষার্থীদের এখানেও সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করব। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার পড়াশোনার ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা করব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

লিবিয়া থেকে দেশে ফিরছেন ১৭৬ বাংলাদেশি

যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে ৩ পুলিশ সদস্য নিহত

প্লাস্টিক পণ্যে ঝুঁকছে মানুষ, ঐতিহ্য হারাচ্ছে বাঁশ-বেতশিল্প

অবশেষে চালু হচ্ছে আল-নাসিরিয়াহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

অনেক কাজ করেছি, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো দিন হয়নি : আসিফ নজরুল

১৮ সেপ্টেম্বর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৮ সেপ্টেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই

১০

ভোট সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে রাকসু নির্বাচনে ৬ দাবি ছাত্রদলের

১১

পানিতে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

১২

সাজেক থেকে ক্যাম্পাসে ফেরা হলো না খুবি ছাত্রীর

১৩

ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ ৩৮ বাংলাদেশির সন্ধান মিলেছে

১৪

বিজিবির অভিযানে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার উদ্ধার

১৫

এশিয়া কাপে পাকিস্তানি ফিল্ডারের থ্রোয়ে আহত আম্পায়ার

১৬

‘ভুল করে মায়ের পাসপোর্ট নিয়ে জেদ্দায় যান পাইলট মুনতাসির’

১৭

শাহীনের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সুপার ফোরে পাকিস্তান

১৮

সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ

১৯

এশিয়া কাপে পাকিস্তান ওপেনারের লজ্জার রেকর্ড

২০
X