সানাউল হক সানী
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:১২ এএম
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৪ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বালাইনাশকের দেশি বাজার খাচ্ছে বিদেশি পুঁজিপতিরা

নিয়মনীতির সুযোগ নিচ্ছে বিদেশি কোম্পানিগুলো
বালাইনাশকের দেশি বাজার খাচ্ছে বিদেশি পুঁজিপতিরা
ছবি: কালবেলা গ্রাফিক্স

বাংলাদেশের কৃষির অন্যতম বৈশিষ্ট্য বালাইনাশক নির্ভরতা। এই বালাইনাশক বা পেস্টিসাইড মূলত ফসলের ক্ষতিকর উদ্ভিদ বা প্রাণী, যেমন—পোকামাকড়, জীবাণু, আগাছা, ইঁদুর ইত্যাদি দমনে ব্যবহৃত হয়। দেশে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার বালাইনাশকের বাজার রয়েছে। যার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে হাতে গোনা কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি। একচেটিয়া ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে এসব কোম্পানিকে সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে দেশের নিয়মনীতি। যদিও বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বহু দেশে ওষুধ রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে দেশ।

বালাইনাশকের ক্ষেত্রে দেশীয় কোম্পানিগুলোর জন্যে নানা নিয়মের খড়্গ থাকলেও উল্টো বহুবিধ সুযোগের সমাহার বহুজাতিক কোম্পানির ক্ষেত্রে। এসব কোম্পানি উচ্চমূল্যে ফিনিশড পণ্য (কাঁচামাল থেকে উৎপাদিত সম্পূর্ণ পণ্য) আমদানি করে দেশীয় বাজারে আরও বেশি মূল্যে বিক্রি করে। আর প্রান্তিক কৃষকরা বহুগুণ দামে কৃষিকাজে এসব বালাইনাশক ব্যবহার করেন। ফলে বিপুল বিনিয়োগেও লাভ তুলতে পারছেন না কৃষকরা। ২০১৪ সালের পর থেকে বালাইনাশকের বাজার বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্যে নানা সুযোগ-সুবিধার জোয়ার দেখা দিলেও নতুন করে এসব সুবিধা বিধিবদ্ধ আইনে পরিণত করতে চাচ্ছে মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার বালাইনাশকের কাঁচামাল এবং ‘ফিনিশড’ বালাইনাশক আমদানি করা হয়। এরপর বিভিন্ন হাত ঘুরে নানা প্রক্রিয়া শেষে দেশীয় বাজারে যায়, যার বিক্রির পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তবে ফিনিশড পণ্যের অন্তত ৮০ ভাগ আমদানি করা হয় চীন থেকে এবং ২০ ভাগ আমদানি করা হয় ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে। এরমধ্যে ১০ ভাগ কাঁচামাল এবং বাকিগুলো ফিনিশড পণ্য। তথ্য বলছে, সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি বহুজাতিক কোম্পানি সবচেয়ে বেশি বালাইনাশকের ফিনিশড পণ্য আমদানি করে। সে হিসাবে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা রয়েছে তাদের। তবে কোম্পানিটির ৪৬ ভাগ মালিকানা বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের। এর বাইরে জার্মানভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি বায়ার ক্রপসায়েন্স। প্রতি বছর প্রায় ৪শ থেকে ৫শ কোটি টাকার ফিনিশড পণ্যের ব্যবসা করে তারা। এ ছাড়াও ভারতীয় বহুজাতিক কোম্পানি ইউপিএল, জার্মানভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি বিএএসএফ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি এফএমসি করপোরেশন পরোক্ষভাবে এখানে ব্যবসা করছে।

কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সালফার ৮০ ডব্লিউডিজি নামের বালাইনাশক জমিতে সালফারের ঘাটতি পূরণ ও পোকামাকড় দমনে সাহায্য করে। কৃষক সাধারণত নানা ফসলের জন্য ব্যাপকভাবে এই বালাইনাশকটি ব্যবহার করেন। তবে নথি বলছে, সিনজেনটা এই কীটনাশক আমদানি করেছে প্রতি কেজি ১ দশমিক ৫৪ ডলারে। তবে একই পণ্য দেশীয় কয়েকটি কোম্পানি আমদানি করেছে মাত্র শূন্য দশমিক ৪৭ ডলারে। একইভাবে এমামেকটিন বেনজোয়েট ৫ এসজি হলো কৃষিক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত একটি কীটনাশক। এই কীটনাশক বিশেষভাবে লেপিডোপটেরা গোত্রের পোকামাকড় দমনে কার্যকর। এই বালাইনাশক সিনজেনটা আমদানি করেছে প্রতি কেজি ৩৩ দশমিক ৬৪ ডলারে। তবে দেশীয় ফিনিশড পণ্য আমদানিকরক কয়েকটি কোম্পানি এটি আমদানি করেছে মাত্র ৫ দশমিক শূন্য ২ ডলারে। কেবল সিনজেনটাই নয়, অন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এভাবেই বেশি দামে বালাইনাশকের ফিনিশড পণ্য আমদানি করে থাকে। যার প্রভাব পরে কৃষকদের ওপরে। বাড়তি দামে তারা এসব বালাইনাশক কিনতে বাধ্য হন।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফিনিশড পণ্যের পরিবর্তে যদি কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে অবাধ এবং সহজ করা হতো সেক্ষেত্রে এসব পণ্যের দাম কমপক্ষে ৩০ ভাগ কমে কৃষকের কাছে পৌঁছাত। শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ হওয়ার কারণে ওষুধ এবং বালাইনাশকের একচেটিয়া বাজার করার সুযোগ নেই। এ সংক্রান্ত আইনও রয়েছে জাতীয় সংসদে। এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ১১৬তম পিটাক সভায় একচেটিয়া বাজার সৃষ্টিকে সমর্থন করে দেশের কৃষকদের অধিকার বঞ্চিত করেছে।

তথ্য বলছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে দেশীয় বাজারে একচেটিয়া প্রভাব তৈরিতে সহায়তা দিচ্ছে বালাইনাশক কারিগরি উপদেষ্টা কমিটি (পিটাক)। উল্টো দেশীয় কোম্পানিগুলোকে নানা নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ করে আটকে রাখা হয়। জানা যায়, পিটাক সভা একসময় সচিবের সভাপতিত্বে হতো। তখন রেজিস্ট্রার্ড বালাইনাশকের সংখ্যা ছিল ৩০০। এর পরে অধিদপ্তরের হাতে এলে এটি ১২ হাজার অতিক্রম করে। এমনকি নতুন করে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ এর বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এই বিপুলসংখ্যক বালাইনাশকের ল্যাব টেস্ট করতে তিন শতাধিক যন্ত্র দরকার। তবে সেই পরিমাণ সক্ষমতা নেই মন্ত্রণালয়ের। তথ্য বলছে, এমন টেস্ট করার মতো মাত্র দুইটি যন্ত্র রয়েছে।

বালাইনাশক নিয়ে কাজ করেন এমন কর্মকর্তারা বলছেন, সোর্স উন্মুক্ত না রেখে কয়েকটি কোম্পানিকে লাভবান করার মিশন নিয়ে কাজ করছেন কিছু কর্মকর্তা। সোর্স পরিবর্তন বন্ধ করায় ক্ষতির মুখে পড়ছে মূলত দেশীয় কোম্পানিগেুলো। কারণ নির্দিষ্ট কোম্পানি দাম বেশি রাখলেও সেই কোম্পানির বাইরে অন্য কোনো কোম্পানি কিংবা দেশ থেকে কাঁচামাল বা ফিনিশড পণ্য আমদানি করার সুযোগ নেই। আর এই সুযোগটাই নিয়েছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। কারণ তারা কান্ট্রি অব অরিজিন পরিবর্তন করেই সোর্স পরিবর্তন করতে পারে।

পিটাটের ৬৮তম সভা অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ৯ জুলাই। এর আগ পর্যন্ত যে কোনো কীটনাশক রাসায়নিক পরীক্ষায় ফলাফল যথাযথ থাকলে কোম্পানিগুলো সোর্স পরিবর্তন করতে পারত। অর্থাৎ বিদেশের যে কোনো কোম্পানি থেকে কাঁচামাল বা ফিনিশড পণ্য আমদানি করা যেত। ল্যাব টেস্টে উত্তীর্ণ হলেই সোর্স পরিবর্তনের সুযোগ পাওয়া যেত। তথ্য বলছে, ওই সময় পর্যন্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বালাইনাশকের সোর্স ছিল ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড এবং জার্মানি। তবে তারা পরিবর্তন করে সোর্স হিসেবে ভারত এবং চীনসহ আশপাশের দেশগুলোতে নিয়ে আসে। পরে পিটাক সভায় দেশীয় কোম্পানির ক্ষেত্রে সোর্স পরিবর্তনের জন্যে ল্যাব টেস্টের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষার শর্ত আরোপ করা হয়। তবে বহুজাতিক কোম্পানির ক্ষেত্রে কেবল কান্ট্রি অব অরিজিন পরিবর্তনের মাধ্যমেই সোর্স পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়।

এরপর ৭৭তম সভায় যে কোনো বালাইনাশকের রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার দুই বছর পর্যন্ত দেশীয় কোম্পানির ক্ষেত্রে সোর্স পরিবর্তনের আবেদন নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি কাঁচামাল আমদানির জন্য ল্যাব টেস্টের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষার বাধ্যবাধকতাও আরোপ করা হয়; কিন্তু কাঁচামাল কখনোই মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা করা যায় না, এগুলো ল্যাব টেস্ট করা যায়। কার্যত পিটাক এই আইনের মাধ্যমে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে স্থায়ীভাবে ব্যবসা থেকে বিতাড়নের উদ্যোগ নেয়। ফলে এখন দাম বেশি হলেও নির্দিষ্ট কোম্পানির বাইরে কাঁচামাল ক্রয়ের সুযোগ নেই।

পরবর্তী সময়ে বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয়ের নজরে এলে সোর্স উন্মুক্ত করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কৃষি মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত গ্রহণ করলে তারাও সোর্স উন্মুক্ত রাখার পক্ষে মত দেয়। তথ্য বলছে, পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে পিটাক কৃষি এবং আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে দেশীয় কোম্পানির সোর্স পরিবর্তন বন্ধ ঘোষণা করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে সাতটি বহুজাতিক কোম্পানি ফিনিশড পণ্য আমদানি করে। এর বাইরে ২২টা দেশীয় কোম্পানি একইভাবে বালাইনাশক উৎপাদন করতে পারে। তবে বিটাক নানা ধরনের শর্ত আরোপ করেছে কেবল দেশীয় কোম্পানির বেলায়। এর মাধ্যমে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, এতদিন এসব সিদ্ধান্ত কেবল পিটাক কর্তৃক প্রণিত সিদ্ধান্ত ছিল। যদিও এসব সিদ্ধান্ত বদলের সুপারিশ করেছিল কৃষি এবং আইন মন্ত্রণালয়। তবে তাদের সিদ্ধান্তও আমলে নেয়নি পিটাক। সর্বশেষ এ-সংক্রান্ত বিষয়ে বিধি প্রণনয়ন কমিটি গঠন করে কৃষি মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার সেই কমিটির সভা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতদিন এসব সিদ্ধান্ত অনানুষ্ঠানিক থাকলেও আজকের সভায় বিধিবদ্ধ করা হতে পারে। এর মাধ্যমে মূলত দেশীয় কোম্পানিগুলো আরও বিপাকে পড়বে। আর বিদেশি কোম্পানিগুলোর ব্যবসা একচেটিয়া প্রতিষ্ঠিত হবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিধি প্রণয়ন কমিটিতে আমন্ত্রিত এবং অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মাহাবুব কবির মিলন কালবেলাকে বলেন, বালাইনাশক আমদানি নির্ভরতা কেমিয়ে দেশীয় শিল্প বিকাশের সুযোগ তৈরি করতে হবে। সিঙ্গেল সোর্সে বালাইনাশক আমদানি করলে মূলত একটা গোষ্ঠীর সুবিধা হয়। এটা ভেঙে দিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশেই বালাইনাশক উৎপাদন শিল্প চালু করতে হবে। এতে ডলার খরচ কমার পাশাপাশি কোয়ালিটি প্রডাক্ট হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোই বাজার ধরার জন্য নিজেরা ভালো পণ্য বাজারে ছাড়বে। উচ্চমানের ল্যাবটেস্ট করে কোয়ালিটি নিশ্চিত করবে।

কুষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উপকরণ) মো. জসিম উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আমরা বালাইনাশক আমদানির ক্ষেত্রে সোর্স কীভাবে হবে, সে বিষয়ে বিভিন্ন উয়িংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা এখন জিয়া মঞ্চের গুরুত্বপূর্ণ পদে

রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিটে’ ক্ষেপেছে যুক্তরাজ্য

৩০ ভারতীয় কামিকাজে ড্রোন ভূপাতিত, নিহত ২

বোমা আতঙ্কে কাঁপছিলেন আইপিএল চিয়ারলিডার, ভিডিও ভাইরাল

ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ 

ভয়ে ভারত ছাড়তে চাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা

পাকিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো পিএসএল

আইভীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ

যমুনার সামনে তৈরি হচ্ছে আ.লীগ নিষিদ্ধের মঞ্চ

বিমানে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে ট্রাম্প প্রশাসন

১০

পারভেজ হত্যায় গ্রেপ্তার টিনা, ৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ

১১

আইভীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের গাড়িবহরে হামলা

১২

ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা, অস্বীকার পাকিস্তানের

১৩

পাকিস্তানে আরেকটি ভারতীয় ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত

১৪

‘৯ মাসেও গণহত্যাকারী দল নিষিদ্ধ হলো না কেন’

১৫

বাদ জুমা বড় জমায়েতের ডাক হাসনাত আবদুল্লাহর

১৬

এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা / নিহত ৪ জনের দুজন ছিলেন মসজিদের ইমাম

১৭

রাতে শিবির মাঠে নামায় পাল্টে গেল দৃশ্যপট

১৮

যমুনার সামনে রাতভর যা যা হলো

১৯

কয়টি রাফায়েল আছে ভারতের, একেকটির দাম কত?

২০
X