আমজাদ হোসেন হৃদয়
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৫, ০২:৫০ এএম
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

১০ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে এনসিপির ইশতেহার

থাকবে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের পথরেখা
১০ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে এনসিপির ইশতেহার

রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বড় জমায়েতের মধ্য দিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর পরদিন ১ মার্চ গভীর রাতে ২১৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে দলটির দর্শন, ইশতেহার, গঠনতন্ত্র সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা পাওয়া যায়নি। শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, চলতি মাসের মধ্যেই সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে।

এনসিপি সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে নতুন দেশ গড়তে মোটাদাগে ১০ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে। যেখানে থাকবে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিকভাবে দেশকে তারা কীভাবে গড়ে তুলতে চান, সেসব বিষয়। থাকবে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের পথরেখা। পারিবারিক পরিচয় নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে যেন তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে উঠে আসতে পারে—এমন বিষয় প্রাধান্য পাবে দলের গঠনতন্ত্রে। এনসিপির ইশতেহারে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে সেকেন্ড রিপাবলিক, গণপরিষদ নির্বাচন এবং নতুন সংবিধানকে। সেকেন্ডে রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা ও গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান রচনার সংকল্প তুলে ধরবেন তারা। যেটি তাদের ঘোষণাপত্রেও উল্লেখ করতে দেখা যায়। এ ছাড়া পরিবারতন্ত্রের অবসান, সিন্ডিকেট ও গোষ্ঠীস্বার্থ নির্মূল, ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্নির্মাণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অগ্রগতি, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, জাতীয় অর্থনীতির পুনর্গঠন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় অন্তর্ভুক্তি করাকে প্রাধান্য দিচ্ছে দলটি।

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিল, তা আসলে প্রথম ব্যর্থ হয়েছে মুজিববাদী সংবিধানের মাধ্যমে। তাই সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনের মাধ্যমে মুজিববাদী সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে ব্যক্তিতান্ত্রিক ও পরিবারতন্ত্রবিহীন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির জন্যে কাজ করবে এনসিপি।

তিনি বলেন, বর্তমান সংবিধান এবং রাষ্ট্রব্যবস্থাতে সংবিধানে যেভাবে এক ব্যক্তির কাছে সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকে তাতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও হয় একক ব্যক্তির দাস। যেভাবে মুজিব পরিবারকে দেবতার আসনে বসানো হয়েছিল, ভবিষ্যতেও যেন এরকম কোনো কাল্ট গড়ে না ওঠে এবং প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র গড়ে ওঠে, সে লক্ষ্যে এনসিপির অঙ্গীকার অব্যাহত থাকবে।

পরিবারতন্ত্র বিলোপের কথা জানিয়ে এনসিপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, পরিবারতন্ত্র ও গোষ্ঠীতন্ত্রের মাধ্যমে যে ফ্যাসিবাদ তা পূর্ণাঙ্গ বিলোপের লক্ষ্যে প্রচেষ্টার পাশাপাশি একুশ শতকের সময়োপযোগী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে গুরুত্বারোপের মাধ্যমে আধুনিক জাতি গঠনের লড়াইয়ে এনসিপি থাকবে। বাংলাদেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতি, পাশাপাশি বহিঃশত্রুর মোকাবিলায় নিজস্ব প্রতিরক্ষার ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার লিডিংয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া হবে অন্যতম প্রধান কাজ। বাংলাদেশের সব জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তথা পাহাড়ি, তপশিলি এবং চা বাগান শ্রমিকদেরও অন্তর্ভুক্ত করবে এনসিপি।

আরেক যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ কালবেলাকে বলেন, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে (ইমিডিয়েট) ১০টি লক্ষ্য ঠিক করেছি। গত সাত মাসের কার্যকলাপে আমরা দেখেছি এখানে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিদ্যমান যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, এগুলো অটুট রেখে আমরা বড় ধরনের পরিবর্তন দেখতে পাব না। এরই প্রেক্ষাপটে আমাদের রাজনৈতিক দল তৈরি করা। এখন আমাদের প্রধান কাজ হলো গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান রচনা করা। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও সেটি আছে। এ ছাড়া স্বাভাবিকভাবে আমরা পরিবারতন্ত্রের অবসান চাই। স্বাধীনতার পর থেকেই এই দেশ একটি গোষ্ঠীর কাছে বন্দি হয়ে আছে। তারাই পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। আমরা এর পরিবর্তন চাই। এ ছাড়া বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্নির্মাণ করাই আমাদের লক্ষ্য।

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া কালবেলাকে বলেন, আমরা কেন বলছি নতুন সংবিধান প্রয়োজন এবং তার জন্য গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন। বিএনপির ক্ষেত্রে যদি দেখেন তারা সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রায় ৬২ জায়গায় সংস্কার চায়। সংবিধানে আছেই ১৫৪টি আর্টিকেল, তার মধ্যে তারা ৬২ জায়গায় সংস্কার চায়। তার মানে বিএনপিও চায় সংবিধানের বড় একটি অংশ পরিবর্তন হোক। জামায়াতও ৩০ থেকে ৩৫ জায়গায় সংবিধান সংস্কার চায়। জাতীয় নাগরিক কমিটির যে সংবিধান প্রস্তাবনা দিয়েছে, সেখানে তারা ৭০ জায়গায় সংস্কার চেয়েছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনগুলো বিদ্যমান সংবিধানের কোনো একটি ধারার সংশোধন চায় না, তারা বৃহৎ পরিবর্তন চায়। তাই আমরা বলছি এই পরিবর্তন যেহেতু পার্লামেন্ট করতে পারে না, যে কারণে পার্লামেন্টের সদস্যরাই প্রথম একটা নির্দিষ্ট সময় তারা গণপরিষদ হিসেবে কাজ করবে এবং সংবিধানটা প্রণয়ন করবে।

নতুন সংবিধানের কথা উল্লেখ করে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা বিশ্বাস করি, নতুন একটি সংবিধানের বাস্তবতা রয়েছে। এর ভিত্তিতে আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলেছি। একই সঙ্গে সেই গণপরিষদ নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন, তারা সংসদ সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন এমন প্রস্তাবও আমাদের আছে।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বারবার দীর্ঘায়িত করা হয়েছে জানিয়ে এমসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, পুরোনো সংবিধান এবং পুরোনো শাসনকাঠামো রেখে একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। কেবল সরকার পরিবর্তন করেই জনগণের কল্যাণ ও প্রকৃত গণতন্ত্র বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ জন্য আমরা বলছি, চব্বিশের যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে—তাতে কেবল সরকার পরিবর্তন নয়, বরং শাসনকাঠামো ও সাংবিধানিক পরিবর্তন করে নতুন একটি বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করতে চাই, যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র, ইনসাফ ও সাম্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দু-তিন দিন ধরে ফ্ল্যাট বন্ধ, পুলিশ এসে উদ্ধার করল পাঁচটি মৃতদেহ

‘বৈষম্য আর আধিপত্যবাদের আগ্রাসন থেকে সেফ এক্সিট দরকার’

২০২৭ বিশ্বকাপ সরাসরি খেলতে বাংলাদেশের সামনে যে সমীকরণ

আপনার হোয়াটসঅ্যাপ অন্য কেউ ব্যবহার করছে না তো!

আন্দোলনরত শিক্ষকদের কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

বাড়িভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে কর্মসূচি দিল শিক্ষকরা

পিআর নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টা চলছে : মির্জা ফখরুল 

চাকসুতে চার্লি চ্যাপলিন হয়ে ভোট চাচ্ছেন রাকিব

শীত আসছে, এসির যেসব কাজ না করলে বিপদ

প্রকাশ্যে এলো কারিনার সৌন্দর্যের গোপন রহস্য

১০

সেনাবাহিনীর অভিযানে ইউপিডিএফ পোস্ট কমান্ডারসহ আটক ২

১১

ঢাকা থেকে আ.লীগের ৭ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার 

১২

মোটরসাইকেল চুরির ২০ দিন পর পাম্পে তেল নিতে এসে ধরা!

১৩

ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি পদে নিয়োগ দিচ্ছে প্রাণ গ্রুপ

১৪

সর্বকালের সেরা টি-টোয়েন্টি একাদশ বাছাই করলেন সিকান্দার রাজা

১৫

নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা 

১৬

সড়ক দুর্ঘটনায় কাতারের ৩ কূটনীতিক নিহত

১৭

যেভাবে ধরা পড়লেন প্রেমিকাকে ‘ধর্ষণ’ করা সেই ২ যুবক

১৮

জামায়াতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল উপহার পেল ২৬ শিক্ষার্থী

১৯

সেনাবাহিনীকে নিয়ে যা বললেন জামায়াত আমির

২০
X