ঢাকায় আজ বুধবার শুরু হবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দশম প্রতিরক্ষা সংলাপ। দুই দিনব্যাপী চলা এ সংলাপে ইন্দো-প্যাসিফিক বা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস) এবং ওয়াশিংটন প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তির অংশ হিসেবে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) ও দি অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট (আকসা) গুরুত্ব পাবে। সংলাপে উভয় দেশই বিষয়গুলোতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবে বলে সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, সংলাপে অংশ নিতে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশে এসেছেন ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের কৌশলগত পরিকল্পনা ও নীতিবিষয়ক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল টমাস জে জেমস। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) অপারেশন ও পরিকল্পনা অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুসাইন মুহাম্মাদ মাসীহুর রাহমান।
ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনের আধিপত্য ঠেকাতে চায় বাইডেন প্রশাসন। এজন্য ভারতসহ এ অঞ্চলের বন্ধু দেশগুলোকে নিজেদের পাশে রাখতে মরিয়া দেশটি। আইপিএস সংলাপেও গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দেবে তারা। এবারের প্রতিরক্ষা সংলাপ বিষয়ে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেন, অবাধ, মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মনোভাব অভিন্ন। পারস্পরিক লক্ষ্য অনুসরণে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড ঢাকায় ২৩ ও ২৪ আগস্ট দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সংলাপে বসবে। সামরিক শিক্ষা, প্রতিরক্ষা এবং আগামী বছর অনুষ্ঠেয় দুর্যোগ মোকাবিলা অনুশীলনসহ আসন্ন সামরিক অনুশীলন নিয়ে আলোচনা হবে।
ওয়াশিংটন সূত্র জানায়, সংলাপে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, সে ব্যাপারে জানতে চাইবে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে জিসোমিয়া ও আকসা নিয়েও কথা বলবেন মার্কিন প্রতিনিধি।
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা সেনানিবাসের এএফডি মাল্টিপারপাস হলে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় এ সংলাপ শুরু হবে। বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আলোচনায় গুরুত্ব পাবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, সামরিক বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা ও সফর বিনিময়, দুর্যোগ মোকাবিলা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন।
সূত্র জানায়, ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নে সরকার সামরিক বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে চায়। একই সঙ্গে নিজেদের সক্ষমতা, যুগোপযোগী হওয়া ও ভূ-রাজনৈতিক কৌশল বিবেচনায় সমরাস্ত্র ক্রয়ে রাশিয়া নির্ভরতা কমিয়ে অন্য দেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র কেনার কথা ভাবা হচ্ছে। গত বছর মে মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত নবম প্রতিরক্ষা সংলাপেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে চুক্তি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সমরাস্ত্র বিক্রি করতে পারে না বলে জিসোমিয়া স্বাক্ষরে জোর দিয়েছে। এরই মধ্যে প্রস্তাবিত চুক্তির ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এবারের প্রতিরক্ষা সংলাপে তা স্পষ্টভাবে জানানো হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুই প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে ধীরে চলার পক্ষে সরকার। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তির সম্ভাবনা নেই।
মন্তব্য করুন