আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, গণপরিষদ নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্য ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও। আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফেরা বা নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে বিরাজমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বেড়েছে অস্থিরতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে দফায় দফায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করছেন ছাত্ররা। গণপরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি ফেরানোর প্রশ্নে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে এতদিন সরকারের বক্তব্যে মিল থাকলেও গত দুদিন থেকে কিছুটা বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ছাত্র-জনতার সমর্থনে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা ইস্যুতে ছাত্রদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল সরকারের। বিশেষ করে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে এ দূরত্ব বেশ দৃশ্যমান হয়। ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কোনো কোনো দল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ছা্ত্র প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে থাকা উপদেষ্টারাও এ বিষয়ে একমত। তারা প্রয়োজনে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে। তাদের মতে, গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিচার এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হতে হবে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ নামে রাজনীতি এ দেশে নিষিদ্ধ করারও দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।
কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য উপদেষ্টাদের মধ্যে এ বিষয়ে তেমন তোড়জোড় নেই। বরং জাতীয় নির্বাচন ঘিরেই সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনও জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীতে বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। কোনো ধরনের হুমকি-ধমকি মোকাবিলা করে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জানান, জাতীয় নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য যে দুটি সময়সীমা ঘোষণা করা হয়েছে, কোনো দাবির মুখেই তা থেকে সরবে না সরকার। শুধু তাই নয়, প্রধান উপদেষ্টা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার চিন্তা বা পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে তাদের মধ্যে অভিযুক্তদের যথাযথ বিচার হবে।
প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পর রাজনীতিতে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নানা মন্তব্য আসতে থাকে। আর ওইদিন রাতেই এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ফেসবুকে দীর্ঘ বক্তব্য প্রকাশ করেন। তিনি লিখেছেন, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন ও তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। আমাদের আরও বলা হয়—রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে—এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।’ এতে সরকার এবং ছাত্রদের মধ্যে দূরত্বের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়া হাসনাতের পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীসহ সারা দেশের নিরাপত্তা জোরদার করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। গতকাল অন্য দিনের তুলনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অধিক হারে তৎপর দেখা যায় রাজনীতিতে। হাসনাতের বক্তব্যের পর বৃহস্পতিবার রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ থেকে হাসনাত আব্দুল্লাহসহ ছাত্রনেতাদের নিরাপত্তা এবং অবিলম্বে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়। গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’ নামে একটি নতুন প্ল্যাটফর্মেরও আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এদিন বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী এবি জুবায়ের। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে এই প্ল্যাটফর্ম আন্দোলন চালিয়ে যাবে। যতদিন পর্যন্ত এই সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে না, ততদিন পর্যন্ত এই প্ল্যাটফর্ম আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং রাজনীতিতে তাদের ফেরা না ফেরার প্রশ্নে কথা বলেছেন অন্যান্য ছাত্রনেতা, উপদেষ্টা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। শুক্রবার নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে লড়াইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের জন্য প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন এনসিপির অন্য মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘লড়াইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের জন্য আমরা প্রস্তুত। গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ পর্যন্ত এ লড়াই চলবে।’
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিবাদের সব সহযোগী ব্যক্তি ও সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংঘটিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, আগ্রাসন, বিগত আন্দোলনের হত্যাকাণ্ড, গুম, ক্রসফায়ার ভোট, ডাকাতিসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নে কার্যকর অগ্রগতি দৃশ্যমান হওয়ার আগে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পথ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত।
এদিকে, শুক্রবার এ নিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও। গণহত্যার বছর না ঘুরতেই আওয়ামী লীগকে ফেরানোর খায়েশ বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি পোস্টে লেখেন, ‘আমরা কবে থেকে জার্মানি, ইতালির চেয়ে বেশি ইনক্লুসিভ ডেমোক্রেটিক হয়ে গেলাম? গণহত্যার বছর না ঘুরতেই আওয়ামী লীগকে ফেরানোর খায়েশ বিপজ্জনক।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘নির্বাচন পিছিয়ে যাবে, অনিশ্চয়তা তৈরি হবে—এসব শঙ্কার কথা বলে কেউ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে জনতার ঐক্যে ফাটল ধরাতে আসবেন না। গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ শুধু জাতীয়ভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে ইউএন রিপোর্টের মাধ্যমে স্বীকৃত।
হাসনাতের পোস্টে যা আছে: হাসনাত লিখেছেন, ‘তিনিসহ আরও দুজনের কাছে সেনানিবাস থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায়।’ তিনি লিখেছেন, ‘আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদের বলা হয়, এরই মধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা নাকি ভালো। ফলে আপনি দেখবেন গত দুই দিন মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছেন। আমাদের এই প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করি এবং জানাই যে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করুন। এর জবাবে আমাদের বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোনো ধরনের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং ‘আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক।’
আলোচনার একপর্যায় বলি, “যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কীভাবে ক্ষমা করে দেবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর অ্যাটলিস্ট ফোরটি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ‘ইনক্লুসিভ’ ইলেকশন হবে না।” জবাবে বলি, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে ফেরাতে হবে। আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।’ পরে মিটিং অসমাপ্ত রেখেই আমাদের চলে আসতে হয়।
হাসনাত লিখেছেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময়ও আমাদের দিয়ে অনেককিছু করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কখনো এজেন্সি, কখনো বা ক্যান্টনমেন্ট থেকে নানা ধরনের প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করতে চাপ দেওয়া হয়েছে। আমরা ওসব চাপে নতি স্বীকার না করে আপনাদের তথা জনগণের ওপরই আস্থা রেখেছি। আপনাদের সঙ্গে নিয়েই হাসিনার চূড়ান্ত পতন ঘটিয়েছি। আজকেও ক্যান্টনমেন্টের চাপকে অস্বীকার করে আমি আবারও আপনাদের ওপরই ভরসা রাখতে চাই। এ পোস্ট দেওয়ার পর আমার কী হবে, আমি জানি না। নানামুখী প্রেশারে আমাকে হয়তো পড়তে হবে, হয়তো বিপদেও পড়তে হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনো ধরনের আপস করার সুযোগ নাই।’ তার বক্তব্যে আরও বলা হয়, জুলাইয়ের দিনগুলোতে জনগণের স্রোতে ক্যান্টনমেন্ট আর এজেন্সির সব প্রেসক্রিপশন আমরা উড়িয়ে দিয়েছিলাম। আজ আবারও যদি আপনাদের সমর্থন পাই, রাজপথে আপনাদের পাশে পাই, তবে আবারও এই আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের ভারতীয় ষড়যন্ত্রও আমরা উড়িয়ে দিতে পারব।’
আসুন, সবাইকে পাশে নিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমাদের শহীদদের রক্ত আমরা বৃথা হতে দেব না। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের আর কোনো সুযোগ নেই; বরং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ হতেই হবে।
মৌলিক সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন দাবি: এদিকে এনসিপির পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার এবং গণপরিষদের দাবি জানানো হয়েছে। বরিশালে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘নির্বাচন করতেই আমরা রাজনৈতিক দল গড়ে তুলেছি। তবে এই নির্বাচন হতে হবে গণপরিষদ নির্বাচন। কারণ, গণপরিষদ নির্বাচন ছাড়া নতুন সংবিধান বা সংবিধানের মৌলিক সংস্কার সম্ভব নয়।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অনেকেই ন্যূনতম সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু আমরা বলতে চাই, ন্যূনতম সংস্কার বলে কিছু নেই। এই সরকারের সময়ই সংস্কারের ভিত্তি স্থাপন করতে হবে। দেশের ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে এই সরকারকে এনেছে পরিবর্তন ও বিচারের আশায়। জনগণের প্রতি সেই ওয়াদা সরকারকে পূরণ করতে হবে।’
এদিকে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে হত্যাকারীদের বিচার ও সংস্কার দৃশ্যমান হবে। ’৭২ ও ’৭৫-এ দিল্লি থেকে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানো হয় এবং সেখান থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।’ জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিকে অন্তর্কোন্দলে ব্যস্ত না থেকে সবাইকে এক থাকার আহ্বানও জানান তিনি।’
ছাত্রদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব কাম্য নয়: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাহাবুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুকে বক্তব্য নিয়ে যে আলোচনা সারা দেশে তৈরি হয়েছে, সেটি দুঃখজনক এবং কষ্টকর। গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার দেশে যে নৈরাজ্যজনক অবস্থার সৃষ্টি করেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এ দেশের তরুণ সমাজ বুকের রক্ত ঢেলে তার জবাব দিয়ে দিয়েছে। হাসনাতের বক্তব্য অনুযায়ী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার যে প্রচেষ্টা কেউ কেউ করছেন, সেটি এককথায় আগস্টের শহীদদের রক্তের সঙ্গে সরাসরি বেইমানি করা। এই মুহূর্তে সব রাজনৈতিক শক্তি এবং দেশপ্রেমিক জনগণকে একত্রিত করে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা রুখে দেওয়ার বিকল্প কিছু নেই।’ এ ছাড়া সম্প্রতি আমরা লক্ষ করেছি, সরকারের কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তি বিভিন্ন ফরমেটে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়ার কথা বলছে। এই বিষয়টিও দুঃখজনক। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী আচরণের কারণে দেশে জুলাই বিপ্লব হয়েছে। এখন তাদেরকে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা নিয়ে সরকারের সঙ্গে ছাত্রদের দূরত্ব বাড়ছে। অথচ এই অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্রদের আন্দোলনের ফসল। এই দূরত্ব কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
মন্তব্য করুন