রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনার চতুর্থ দিনেও হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি কাটছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার মাইলস্টোন কলেজ কর্তৃপক্ষ হতাহতের তথ্য দিয়েছে। এতেও তৈরি হয়েছে নতুন বিভ্রান্তি। তারা জানিয়েছে, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ১৮ জন শিক্ষার্থী, দুজন শিক্ষক ও দুজন অভিভাবক মারা গেছেন। তারা ৫১ জন আহত বললেও হিসাব দিয়েছে ৫০ জনের।
দুর্ঘটনায় নিহত, আহত ও নিখোঁজদের তথ্য নিয়ে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য শিরোনামে প্রকাশ করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছে পাঁচজন। তাদের মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থী ও দুজন অভিভাবক।
এদিকে, গতকাল বিকেলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) রাখা নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করেছে। তারা প্রত্যেকেই শিশু শিক্ষার্থী। যেখানে কোনো অভিভাবক নেই। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা আগে ইস্যু করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মাইলস্টোন জানিয়েছে, তিনজন শিক্ষার্থী ও দুজন অভিভাবক নিখোঁজ।
মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২১ জুলাই দুর্ঘটনার পর ২২ জুলাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরই ধারাবাহিকতায় শুধু এ প্রতিষ্ঠানে নিহত, আহত ও নিখোঁজের তথ্য তুলে ধরছে। এতে বলা হয়েছে, তথ্য হালনাগাদকরণের কাজ চলমান আছে।
মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ এমন তথ্য তুলে ধরলেও গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত হিসাব করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৩১ জন। আর ভর্তি আছে ৫১ জন। গত বুধবার ও গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) হতাহত নিয়ে কোনো হালনাগাদ না দিলেও দুর্ঘটনার দিন সোমবার ও পরদিন মঙ্গলবার সময়ে সময়ে হালনাগাদ দিয়েছে তারা। সবশেষ মঙ্গলবার দুপুরে আইএসপিআর জানিয়েছিল, মারা গেছে ৩১ জন এবং আহত হয়েছে ১৬৫ জন।
এর মধ্যে মঙ্গলবার রাত পৌনে ১টার দিকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সেই হিসাবে বুধবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছিল ৩২।
গতকাল আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে দগ্ধ দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে মারা যায় শিশু মাহতাব রহমান ভূঁইয়া (১৪)। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশু মাহিয়া তাসনিম ওরফে মায়া (১৫)। এই দুজনের সংখ্যা যোগ করলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৪ জন। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলছে, গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৩১ জন।
সরকার নিহতের সংখ্যা কম দেখাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বুধবার নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হচ্ছে। সামরিক বাহিনীও এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করছে। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, হতাহতের সংখ্যা কম করে দেখানোর কোনো কারণ সরকারের নেই।’
এদিকে দুর্ঘটনায় হতাহতের তথ্য গোপনের কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছেন আইএসপিআরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী। তিনি বলেছেন, মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক গুজব ছড়ানো হচ্ছে, যা অনেকে না বুঝে এসবে বিশ্বাস করছেন।
আহতদের সহায়তায় বার্ন ইনস্টিটিউট ও সিএমএইচে সমন্বয় সেল গঠন: বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও তথ্য সহায়তার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) সমন্বয় সেল গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ তথ্য জানিয়েছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটে গঠিত সমন্বয় সেলটির অবস্থান ৮১১ নম্বর কক্ষে। যোগাযোগের জন্য হটলাইন নম্বর ০১৭৬৯৯৯৩৫৫৮। সিএমএইচে গঠিত সেলে যোগাযোগ করা যাবে ০১৮১৫৯১২৬১৭ নম্বরে।
মন্তব্য করুন