থানায় বাধ্যতামূলকভাবে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিতে হবে। কোনোভাবেই জিডি প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। দেশের সব থানায় শতভাগ অনলাইন জিডি করতে হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থেকে আশু বাস্তবায়নযোগ্য ১১টি সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার মধ্যে আরও রয়েছে এজাহার গ্রহণে কোনো ধরনের অনীহা বা বিলম্ব করা যাবে না, ফৌজদারি মামলার তদন্তে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া, চাকরির জন্য সব পুলিশ ভেরিফিকেশন দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা, আটক ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে বিশেষ ধরনের কাচে ঘেরা কক্ষ স্থাপন, বেআইনি সমাবেশে ৫ ধাপে বলপ্রয়োগ, এসপি এবং ওসিদের ফিটলিস্ট তৈরি করা, নারী পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা ও পুলিশের জন্য যুগোপযোগী আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন বিষয়। পুলিশ সংস্কার কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত সুপারিশ বাস্তবায়নবিষয়ক সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ২৩ জুলাই পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় একটি সভা হয়। সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, আইজিপি বাহারুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মো. সাইফুল্লাহ পান্না, পিএসসির সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সমন্বয় ও সংস্কারবিষয়ক সচিব জাহেদা পারভীন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল খালেক, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বিলকিস জাহান রিমি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের জিআইইউর ডিজি ড. মোহাম্মদ আবদুল লতিফ উপস্থিত ছিলেন।
সুপারিশ বাস্তবায়নবিষয়ক সভায় থানায় জিডি রেকর্ড, মামলা রুজু, তদন্ত ও পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পর্কে বলা হয়েছে থানায় জিডি গ্রহণ বাধ্যতামূলক, কোনোক্রমেই জিডি গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় যে, অনলাইন জিডি গ্রহণ সর্বোত্তম সমাধান। অনলাইনে জিডি করা হলে সেটি না নেওয়ার সুযোগ নেই। আইজিপি বলেন, ইতোমধ্যে দেশের ৭৫ শতাংশ থানায় অনলাইন জিডি কার্যক্রম চালু হয়েছে। সব থানায় পর্যায়ক্রমে অনলাইন জিডি কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ২২ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, হারানো জিনিস উদ্ধার ছাড়া মোট ৪২ হাজার ৯৩৪টি জিডি দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে ৫ হাজার ৮০৬টি জিডি অনলাইনে হয়েছে। দেশের সব থানার মোট জিডির ২৫ শতাংশ বর্তমানে অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছে, যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।
সভায় আরও আলোচনা হয় মামলার এফআইআর গ্রহণে কোনোরূপ অনীহা বা বিলম্ব করা যাবে না। এ নির্দেশনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ ছাড়া অনলাইন এফআইআর চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। এরই মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে অনলাইন এফআইআর চালু করার জন্য প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ফৌজদারি কার্যবিধিতে সংশোধনীর প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনলাইন এফআইআরের ফরম্যাট তৈরির কার্যক্রম চলছে। এই কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।
সুপারিশ ছিল ফৌজদারি মামলার তদন্তের জন্য একটি বিশেষায়িত দল গঠন করতে হবে, যাদের তদন্ত-সংক্রান্ত ইউনিট ও থানা ব্যতীত অন্যত্র বদলি করা যাবে না। ভবিষ্যতে মামলা পরিচালনা ও তদন্ত একটি ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের অধীনে পরিচালিত হতে হবে এবং তারা ফৌজদারি মামলা প্রসিকিউশন-সংক্রান্ত একটি বিশেষ তদন্ত দল হবে। এবিষয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে সিআইডি এবং পিবিআই বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে ফৌজদারি মামলার তদন্ত করছে। স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজিপি বলেন, প্রতিটি থানায় মামলার তদন্ত তদারকি করার জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) নিয়োজিত আছেন। বিদ্যমান কাঠামোতে আলাদা বিশেষায়িত দল গঠন করা ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। এর জন্য নতুন নিয়োগের প্রয়োজন হবে এবং পৃথক ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের প্রয়োজন হবে। তাই বিদ্যমান কাঠামোতে, বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, অন্ততঃপক্ষে পাইলটভিত্তিতে হলেও পৃথক বিশেষায়িত তদন্ত ইউনিট প্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা করতে হবে। বিদ্যমান কাঠামোতে কর্মরতদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
চাকরি প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন
পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রসঙ্গে কমিশনের সুপারিশ ছিল, চাকরিপ্রার্থীর বিভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা। শিক্ষা সনদপত্র, মার্কশিট ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করার দায়দায়িত্ব নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তাবে। এগুলো পুলিশ ভেরিফিকেশনের অংশ হবে না। পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীর রাজনৈতিক মতাদর্শ গৃহীত হয়। রাজনৈতিক মতাদর্শ যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তা রহিত করাসহ এতদসংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংস্কার করা যেতে পারে। তবে চাকরিপ্রার্থী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা সংক্রান্ত কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে সেটা ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনে প্রতিফলিত করতে হবে। ভেরিফিকেশন এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আরও ১৫ দিন বাড়ানো যেতে পারে। এবিষয়ে আলোচনার প্রর সিদ্ধান্ত হয় যে, চাকরিপ্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, শিক্ষা সনদপত্র, মার্কশিট ইত্যাদি যাচাই-বাছাই পুলিশ ভেরিফিকেশনের অংশ হবে না। রাজনৈতিক মতাদর্শ চাকরিপ্রার্থীর ভেরিফিকেশন রিপোর্টের অংশ হবে না। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়ার বিধান বাতিলের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চাকরি প্রার্থীদের কেউ দেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তা প্রতিফলিত হবে। চাকরির জন্য সকল ভেরিফিকেশন রিপোর্ট সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
আটক গ্রেপ্তার, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গ
কমিশনের সুপারিশে গ্রেপ্তার, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। অধিকন্তু রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক দায়েরকৃত আপিল বিভাগের উক্ত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনটি প্রত্যাহার কিংবা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে তার আলোকে, প্রয়োজনে, ফৌজদারি কার্যবিধিসহ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-প্রবিধান সংশোধনের কথা বলা হয়। এ বিষয়ে বলা হয় এই সুপারিশটি বাস্তবায়িত হয়েছে এবং এ-সংক্রান্ত দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর অর্ডিন্যান্স ২০২৫ জারি করা হয়েছে।
কমিশনের সুপারিশে আটক বাক্তি বা রিমান্ডে নেওয়া আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিটি থানায় স্বচ্ছ কাচের ঘেরাটোপ দেওয়া একটি আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ বাধ্যতামূলকভাবে রাখার কথা বলা হয়। পাশাপাশি পুলিশের তত্ত্বাবধানে থানাহাজত ও কোর্ট হাজতের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং বন্দিদের কোর্ট থেকে আনা-নেওয়ার সময় ব্যবহারকারী যানবাহনগুলোতে মানবিক সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচ্ছন্নতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সুপারিশ ছিল। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে নির্মিতব্য ও নির্মাণাধীন থানাগুলোতে এ ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যান্য সব থানায় এ ধরনের কক্ষ স্থাপনের সম্ভাব্যতার বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের তত্ত্বাবধানে থানাহাজত ও কোর্ট হাজতের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং বন্দিদের কোর্ট থেকে আনা-নেওয়ায় ব্যবহৃত যানবাহনগুলোতে মানবিক সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচ্ছন্নতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কমিশনের সুপারিশ ছিল নারী আসামিকে যথেষ্ট শালীনতার সঙ্গে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, নারী আসামিকে নারী পুলিশের উপস্থিতিতেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মর্মে আইজিপি সভাকে অবহিত করেন। বিষয়টি অব্যাহত রাখতে হবে এবং এর যেন কোনো ব্যত্যয় না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়াও তল্লাশির সময় পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিতে অস্বীকার করলে অথবা সার্চ ওয়ারেন্ট না থাকলে জরুরি যোগাযোগের জন্য নাগরিক নিরাপত্তা বিধানে একটি জরুরি কল সার্ভিস চালু করার সুপারিশ ছিল। এ ছাড়া জব্দকৃত মালপত্রের যথাযথ তালিকা না হলে এবং তল্লাশি কার্যক্রমটি সন্দেহজনক মনে হলে তা তাৎক্ষণিক জানানোর জন্য মেট্রো এলাকায় ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বা জেলা পুলিশ সুপারের বরাবর জরুরি কল সার্ভিস চালু করার প্রস্তাব ছিল। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, পৃথক হেল্পলাইন চালুর পরিবর্তে বর্তমান জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সক্ষমতা বৃদ্ধি করে এর মাধ্যমে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা।
সুপারিশ ছিল অভিযান পরিচালনা করার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের কাছে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ (বডি ওর্ন ক্যামেরা) ভেস্ট বা পোশাক পরিধান করতে হবে। এ বিষয়ে আইজিপি জানান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে এই পাইলটিং শুরু হয়েছে। সারা দেশে কার্যক্রমটি শুরু করতে প্রায় ৪০ হাজার জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ ভেস্ট ও পোশাক প্রয়োজন হবে। সভা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সুপারিশে ছিল, রাতের বেলায় (সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যবর্তী সময়) গৃহ তল্লাশি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি বা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। আইজিপি জানান, বর্তমানে প্রচলিত আইনে বিষয়টি সন্নিবেশিত আছে। এর কার্যকর প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। সুপারিশ ছিল থানায় মামলা রুজু তথা এফআইআর গ্রহণ ও তদন্ত কঠোরভাবে সার্কেল অফিসার বা পুলিশ সুপার কর্তৃক নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে মর্মে পুলিশ মহাপরিদর্শক জানান। এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, থানায় মামলা করা ও তদন্ত কঠোরভাবে সার্কেল অফিসার বা পুলিশ সুপার কর্তৃক নিয়মিত তদারকি জারি রাখতে হবে।
সুপারিশে ছিল কেস ডায়েরি আদালতে দাখিল করে আদালতের আদেশ ব্যতীত কোনোক্রমেই এফআইআর বহির্ভূত আসামি গ্রেপ্তার করা যাবে না। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজপি জানান প্রতিক্ষেত্রে কেস ডায়েরি আদালতে দাখিল করে আদালতের আদেশক্রমে আসামি ধরতে হলে প্রকৃত অপরাধীর পালিয়ে যাওয়া অথবা ধরা না পড়ার আশঙ্কা বাড়বে। এক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতি অধিক কার্যকর বিধায় তা অব্যাহত রাখা হবে।
সুপারিশে ছিল ভুয়া গায়েবি মামলায় অনিবাসী, মৃত বা নিরপরাধ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য করতে হবে। সভায় জানানো হয়, প্রচলিত আইনে এর বিধান রয়েছে। এর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। প্রয়োজনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সুপারিশে ছিল অজ্ঞাতপরিচয়দের নামে মামলা দেওয়ার অপচর্চা পরিহার করতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাউকে এ ধরনের মামলায় হয়রানি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, টিআই প্যারেডের মাধ্যমে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি শনাক্তকরণের ব্যবস্থা রয়েছে। অপপ্রয়োগ অবশ্যই পরিহার করতে হবে। পুলিশ সদস্য কর্তৃক উদ্দেশ্যমূলকভাবে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করার বিষয়টি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সুপারিশ ছিল বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দোষীসাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে কোনো অপরাধীকে উপস্থাপন করা যাবে না। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হয় যে, দোষীসাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে কোনো আসামিকে হাজির না করার বিষয়টি মেনে চলা হবে।
বেআইনি সমাবেশে বলপ্রয়োগ
কমিশনের সুপারিশে ছিল যথাযথ আইনের অনুসরণ করে আধুনিক বিশ্বে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে যেসব প্রযুক্তিগত কৌশল ব্যবহার করা হয় তা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক পাঁচ ধাপে বলপ্রয়োগের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রণীত ধাপগুলোকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী কর্তৃক বলপ্রয়োগের জন্য নির্ধারিত নীতিমালা অনুসরণ করে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। এই পদ্ধতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসরণের লক্ষ্যে আইনগত বৈধতা দেওয়ার জন্য কমিশন সুপারিশ করছে। এতে ন্যূনতম ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঝুঁকি এড়িয়ে চলা সম্ভবপর হবে। এক্ষেত্রে জাতি সংঘের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজম্যান্ট অনুসরণ করে ৫ ধাপে বল প্রয়োগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এ লক্ষ্যে পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ চলছে।
মানবাধিকার ও জুলাই ভূমিকার জন্য বিচার
এই প্রসঙ্গে র্যাবের অতীত কর্ম কাণ্ডসহ বিভিন্ন আলোচনা হয়। সভায় জানানো হয় র্যাব সদস্য কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি পর্যালোচনা করে পুনর্মূল্যায়নের কাজ চলছে। এবিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর শিগগিরই একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে। এ ছাড়াও কশিমনের সুপারিশ ছিল, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও আহত করার জন্য দোষী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও আহত করার জন্য দোষী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ক্ষেত্রভেদে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী আইসিটিতে মামলা করা হচ্ছে। আইজিপি জানান, ইতোমধ্যে সাবেক আইজিপি হতে পুলিশ কনস্টেবল পর্যন্ত ৩৩ জন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তারপূর্বক আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং ৪৭ জন বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয় দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখতে হবে।
নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি
পুলিশে নিয়োগের জন্য বর্তমান প্রচলিত ব্যবস্থাকে গতিশীল এবং কাঠামোগত দক্ষতা বৃদ্ধির স্বার্থে পিএসপির আওতায় এএসপি নিয়োগে শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার প্রয়োজন, তা উপেক্ষিত হচ্ছে। এ জন্য বর্তমান বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগের জন্য আলাদাভাবে শারীরিক যোগ্যতা (উচ্চতা ও ওজন ইত্যাদি পরিমাপ, ফিজিক্যাল এনডিউরেন্স টেস্ট, মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ইত্যাদি) অন্তর্ভুক্ত করে আবেদনের যোগ্যতা নিরূপণ করা যায়। এতে, আগ্রহী এবং যোগ্য প্রার্থীরা পুলিশ ক্যাডারে আবেদন করার জন্য সহজে বিবেচিত হতে পারবেন। বিদ্যমান নীতিমালায় পুলিশ এবং আনসার ক্যাডারের জন্য আলাদা শারীরিক যোগ্যতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট সুপারিশ বাস্তবায়নে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনাপূর্বক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পিএসপি প্রতিবেদন দেবে।
সভায় সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সভায় বাংলাদেশ পুলিশের এজেন্ডা থাকলে আইজিপিকে বোর্ডে উপস্থিত রাখার সুপারিশ করা হলো। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সভায় এসপি ও ওসি পদায়নের জন্য ফিটলিস্ট প্রস্তুত করে নিয়মিত বিরতিতে হালনাগাদ করতে হবে। হালনাগাদকৃত তালিকা থেকে পুলিশ সুপার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদায়ন করতে বলা হয়। এ বিষয়ে সভায় জানানো হয়, একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় বিষয়ে সুপারিশ দেবে। সুপারিশ কনস্টেবল থেকে এএসআই এবং এএসআই থেকে এসআই পদোন্নতিতে প্রতি বছর পরীক্ষা দেওয়া ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার রীতি বাতিল করে একবার উত্তীর্ণ হলে তাকে শারীরিক যোগ্যতাসাপেক্ষে পরবর্তী তিন বছরের জন্য পদোন্নতির যোগ্য হিসেবে বিবেচনার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া বিভাগীয় পদোন্নতির নীতিমালা সংস্কার করে কনস্টেবল ও এসআই নিয়োগ স্তর থেকে একটি ক্যারিয়ার প্ল্যানিং প্রণয়ন করতে হবে। পুলিশ মহাপরিদর্শক জানান যে, দীর্ঘদিনের প্রচলিত এ রীতি হঠাৎ করে বাতিল করলে সার্ভিসের অপেক্ষাকৃত নবীন সদস্যগণ পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন এবং তাদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হবে। বিষয়টি ফোর্সের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ হতে পারে মর্মে তিনি জানান। এমতাবস্থায় সুপারিশটি বাস্তবায়নের সমস্যা ও সম্ভাবনা উল্লেখপূর্বক পুলিশ সদর দপ্তর একটি প্রতিবেদন দেবে।
সুপারিশে ছিল বর্তমানে থানাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নারী পুলিশের সংখ্যা শতকরা মাত্র ৮ শতাংশ যা জনসেবা বৃদ্ধিতে নিতান্ত অপ্রতুল। থানাসহ, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন এবং অন্যান্য ইউনিট ও অফিসে কাঙ্ক্ষিত নারী পুলিশের সংখ্যা বর্তমানে ১৬ হাজার ৮০১ থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ২৯ হাজার ২৪৮ করা। সভায় বলা হয় নারী পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বর্তমান অর্গানোগ্রামে পদ সৃষ্টি করতে হবে। এ ছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নারী আবেদনকারীর সংখ্যা অপ্রতুল। এমতাবস্থায়, সংখ্যা নির্দিষ্টকরণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। সংস্কার অগ্রাধিকার হিসেবে ৮ হাজার এএসআই নিয়োগের প্রস্তাব সরকার কর্তৃক বিবেচনাধীন আছে। এর মধ্যে এক হাজার নারী পুলিশ সদস্য নিয়োগের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত আছে।
প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা
সুপারিশে পুলিশের জন্য একটি পরিপূর্ণ মেডিকেল সার্ভিস করার কথা হয়। এবিষয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জানান, মেডিকেল সার্ভিস গঠন করা হলে এর আওতায় নিয়োগকৃত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পদোন্নতি ও পদায়নের বিষয়ে জটিলতা সৃষ্টি হবে। ফলে তাদের মধ্যে পেশা নিয়ে হতাশা তৈরি হবে এবং তাদের কাছ থেকে সেবা প্রাপ্তি ব্যাহত হবে। এমতাবস্থায়, নিচের দিকের পদে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্টসহ সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্যসেবা থেকে প্রেষণে এবং সিনিয়র পর্যায়ে প্রেষণে বা চুক্তিভিত্তিক কনসালট্যান্ট নিয়োগ করে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়।
পুলিশ কমিশন গঠনের জন্য প্রতিবেদন
পুলিশ সংস্কার কমিশন সামগ্রিক বিষয় ধর্তব্যে নিয়ে একটি নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করে। প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশন আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে নাকি সাংবিধানিক কাঠামোভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হবে তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে হওয়া বাঞ্ছনীয়। পুলিশ কমিশনের গঠন, কার্যপরিধি, সাংবিধানিক বা আইনি বাধ্যবাধকতা, আইনে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিষয়াদি বিচার-বিশ্লেষণ ও যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। সুপারিশগুলো পর্যালোচনাপূর্বক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর একটি প্রতিবেদন দিবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা
মামলা প্রদানের ক্ষেত্রে বডিওর্ন ক্যামেরাসহ উন্নত প্রযুক্তির সুপারিশ ছিল। এ ছাড়া মামলা, রেকার বিল চার্জ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। রাস্তায় যানবাহনে নিয়মিত চেকিং বা চেকপোস্টের মাধ্যমে চেকিংয়ের ক্ষেত্রে বডিওর্ন ক্যামেরা বা সিসি ক্যামেরার সন্নিবেশন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। আইজিপি জানান, সারা দেশে কার্যক্রমটি শুরু করতে প্রায় ৪০ হাজার জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ ভেস্ট/পোশাকের প্রয়োজন হবে। মামলা করা, রেকার বিল চার্জ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কারাগার ও পুলিশ লাইন কাছাকাছি করা
এ ছাড়াও কারাগারের নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামীতে নতুন কারাগার ও পুলিশ লাইন্সের মধ্যবর্তী দূরত্ব যথাসম্ভব কম রাখতে হবে, যাতে একটি সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যায়। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কারাগার ও পুলিশ লাইন্স স্থাপনের ক্ষেত্রে সুপারিশটি বিবেচনা করতে হবে।
সিডিএমএসে সাধারণ নাগরিকরা প্রবেশ করতে পারবে না
সুপারিশে ছিল মাদক অপরাধ দমনে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর জন্য একটি সমন্বিত সফটওয়্যার বা ডাটাবেজ তৈরি করা। বাংলাদেশ পুলিশের ক্রিমিনাল ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যারে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকার দেওয়া বা বিকল্পে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিজস্ব সিডিএমএস তৈরি ও সময় সময় জনগণের প্রবেশাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করা হলো। সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশ পুলিশের ক্রিমিনাল ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যারে অনেক স্পর্শকাতর তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এ সফটওয়্যারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বাইরে যে কারো প্রবেশাধিকার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে মর্মে পুলিশ মহাপরিদর্শক উল্লেখ করেন। এ কারণে সফটওয়্যারটিতে জনগণের সরাসরি প্রবেশাধিকার দেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। তিনি জানান যে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নিজস্ব সিডিএমএস তৈরি করতে পারে এবং এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। তবে, জনসাধারণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকাটাই যৌক্তিক।
মন্তব্য করুন