বিশ্বের ২০টি বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশের জোট জি-২০-এর ১৮তম শীর্ষ সম্মেলন আজ শনিবার শুরু হচ্ছে ভারতে। আয়োজক দেশটির আমন্ত্রণে সম্মেলনে অতিথি হিসেবে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ। সম্মেলনের দুটি অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেবেন আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার বার্তা। সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর জোটের গুরুত্বপূর্ণ এ সম্মেলনে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হবে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, জলবায়ু, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, কানেক্টিভিটি, নিরাপদ অভিবাসন, নারীর ক্ষমতায়ন ও রোহিঙ্গা সংকট সুরাহার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জি-২০ নেতৃত্বের জোরালো পদক্ষেপ রাখার আহ্বান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র আমন্ত্রিত অতিথি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে ঐতিহাসিক বন্ধুদেশ ভারত।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের বার্তা কী জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়। ইন্দো-প্যাসিফিকে কোনো প্রক্সিওয়ার আমরা দেখতে চাই না। জি-২০ সভাপতি ভারত অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়ে বাংলাদেশকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ায় তিনি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান বিশ্ব সম্প্রদায়, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথে জলবায়ু পরিবর্তন, করোনা মহামারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইউরোপে যুদ্ধের ফলে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার
মতো যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তা মোকাবিলার কথা তুলে ধরবেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী আর্থসামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের অর্জিত অভাবনীয় সাফল্যের অভিজ্ঞতা সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্বনেতাদের সামনে উপস্থাপন করবেন।
এই প্রথম জি-২০-এর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভারতে। দুই দিনের এ সম্মেলন ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে নয়াদিল্লি। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ বিশ্বনেতারা দিল্লি এসে পৌঁছেছেন। এ উপলক্ষে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে দিল্লিকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এবারের এ সম্মেলন আলাদা গুরুত্ব বহন করছে। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবারের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না। তাদের পরিবর্তে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ অংশ নিচ্ছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে সম্মেলনে অংশ নিতে ভারত সফরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিল্লিতে তার সফরসূচি অনুসারে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় দিল্লির প্রগতি ময়দানে অত্যাধুনিক ভারত মণ্ডপ সেন্টারে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি। ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার ও এক ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সম্মেলনে দুটি অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা। সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিকেলে তিনি গ্লোবাল বায়ুফুয়েলস অ্যালায়েন্সের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। রাতে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী দিল্লি সফরে সেখানে বাংলাদেশের হাঁড়িভাঙা জাতের আমের চারা রোপণ করবেন। এ ছাড়া আগামীকাল রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে আসা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর তিনি জি-২০ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন। আগামীকাল বিকেলেই শেখ হাসিনা ঢাকায় ফিরবেন।
মন্তব্য করুন