জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকালে আকস্মিক মৃত্যু হয় চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতার। এ বছরের শুরুতে হওয়া বিয়ের আড়ম্বর আয়োজন করতে চেয়েছিলেন গ্রামের বাড়ি পাবনায়। কিন্তু হায়! সেই বাড়িতে স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা এসেছেন ঠিকই, তবে তাকে শেষবার দেখার জন্য, চিরবিদায় দিতে!
জান্নাতুল ফেরদৌস জাকসু নির্বাচনের পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। গতকাল শুক্রবার সকালে ভোট গণনার কক্ষে প্রবেশের সময় তিনি অচেতন হয়ে পড়ে যান। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এদিন বাদ জুমা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার মরদেহ নেওয়া হয় পাবনা পৌর এলাকার কাচারীপাড়ায়। সেখানে রাত ৮টায় মসজিদে বাদ এশা তার শেষ জানাজা অনুষ্ঠানের পর আরিফপুর কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।
বাবা রুমি খন্দকার জানান, নির্বাচনের দায়িত্ব শেষে রাত ১২টার দিকে শিক্ষক কোয়ার্টারে নিজের বাসায় গিয়েছিলেন মৌমিতা। পরে সকালে যখন তাকে নির্বাচনের ভোট গণনার কক্ষে ডাকা হয়েছিল, তখন সেখানে যান। কিন্তু কক্ষে ঢোকার আগেই দরজার সামনে সে পড়ে যায়।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ভোটগ্রহণের পর আমার সঙ্গে ওর কথা হয়। ও নির্বাচন নিয়ে বেশ খুশি ছিল। কিন্তু এ কী হয়ে গেল!’
বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত জানাজায় উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক শামসুল আলমসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘হঠাৎ করে এক সহকর্মীর মৃত্যু আমাদের মধ্যে চরম শোকের বার্তা নিয়ে এসেছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে এবং তার পরিবারকে এ শোক কাটানোর তৌফিক দান করুন। আমরা তার আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করি।’
নির্বাচন কমিশনার রেজওয়ানা করিম বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে আমি আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ করব, উনার (জান্নাতুল) জন্য দোয়া করবেন। এ মুহূর্তে আমরা যেহেতু একটা কাজের মধ্যে আছি, আমরা চাইলেও তা অসম্পূর্ণ রাখতে পারছি না। আমাদের এই কাজটাও চালিয়ে যেতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রীতিলতা হলে ভোট গণনার কাজে দায়িত্বরত ছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। সেটির ভোট গণনার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
১৯৯৫ সালে জন্ম জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতা ছোট থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০০৯ সালে পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং পাবনা মহিলা কলেজ থেকে ২০১১ সালে গোল্ডেন জিপিএ ৫ নিয়ে পাস করার পর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেই অনার্স ও মাস্টার্স শেষে ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন।
মন্তব্য করুন