বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৩, ০৮:৩২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মুদ্রানীতি ঘোষণা আজ, আসছে বড় পরিবর্তন

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের মুদ্রানীতিগুলোর তুলনায় নতুন মুদ্রানীতির কাঠামোগত পদক্ষেপে বড় ধরনের পরিবর্তন থাকছে। এ পরিবর্তন আনার উদ্দেশ্যই হলো মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। সেইসঙ্গে সরকার নির্ধারিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা দেওয়া। তবে এবারের মুদ্রানীতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেই বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এ জন্য সরকারকে ব্যাংক থেকে কম ঋণ গ্রহণের পরামর্শ আসতে পারে। পাশাপাশি বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোর জন্য রিজার্ভ মানি কমানো এবং নীতি সুদহার বাড়ানো হতে পারে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে এতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত প্রতিপালনের ছাপ থাকবে। আজ রোববার বিকেল ৩টায় এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে।

বলা হয়, মুদ্রানীতির মূল কাজ হচ্ছে অর্থপ্রবাহ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সময়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে, যখন দেশের অর্থনীতি নানামুখী চাপ ও সংকটে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী মুদ্রানীতিতে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোতে যে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে কতটা ভূমিকা রাখবে, সেটিই দেখার বিষয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য রিজার্ভ মানি কমিয়ে ১১ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মুদ্রানীতিতে (জানুয়ারি-জুন) ১৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। তারা বলছেন, শিগগিরই দেশে চালু হচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংক। এর মাধ্যমে সব ধরনের লেনদেন হবে অ্যাপের মাধ্যমে। ফলে কাগুজে নোটের ব্যবহার অনেক কমে যাবে। বিদ্যমান ব্যাংকিং ব্যবস্থায়ও আগের তুলনায় বর্তমানে কাগুজে মুদ্রার ব্যবহার অনেক কমে গেছে। সে বিবেচনায় রিজার্ভ মানি কমিয়ে বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পাশাপাশি আগামী মুদ্রানীতিতে বড় পরিবর্তন দেখা যাবে নীতি সুদহারের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ রেপোর ওপরে ও নিচে একটি নির্দিষ্ট করিডোর দেওয়া হবে। নিচেরটির বিনিময়ে ব্যাংকগুলো আমানত রাখতে পারবে এবং ওপরেরটির বিনিময়ে ব্যাংকগুলো প্রচলিত নিয়মে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে পারবে। রেপো এবং রিভার্স রেপোর সুদহারও বাড়ানো হতে পারে। ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহার নিয়ন্ত্রণেই এটি করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে ব্যবস্থায় টাকা ধার নেয়, সেটিই রেপো নামে পরিচিত। এবারের মুদ্রানীতির মূল ফোকাস হবে সুদহার নিয়ন্ত্রণ। ঋণে বেঁধে দেওয়া সুদহারের পরিবর্তে করিডোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ মনিটরি টার্গেটিংয়ের পরিবর্তে এখন থেকে ইন্টারেস্ট রেট টার্গেটিংয়ের দিকে যাত্রা করছে, যা প্রয়োগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতিকেও প্রত্যাশিত মাত্রায় রাখতে চায়। এ পদ্ধতি ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া) ২০১৬ সাল থেকেই মেনে চলছে। এটিকে বলা হচ্ছে মনিটরি পলিসি ফ্রেমওয়ার্কের আধুনিকায়ন। এ পদ্ধতিতে, মুদ্রানীতিতে বেঁধে দেওয়া ঋণের ক্যাপ তুলে দিয়ে বাজারভিত্তিক সুদ হারের ঘোষণা আসতে পারে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ রেট’, সংক্ষেপে স্মার্ট। ৬ মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহারের ভিত্তিতে যা নির্ধারিত হবে। ৬ মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সঙ্গে আপাতত সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সুদ নেওয়ার সুযোগ রাখা হবে। প্রতি মাস শেষে স্মার্ট রেট ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে আলোকে ব্যাংকগুলো সুদহার নির্ধারণ করবে। ট্রেজারি বিলের সুদ বাড়লে-কমলে তখন ফ্লোর রেট বাড়বে বা কমবে। বর্তমানে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার রয়েছে ৭ শতাংশের আশপাশে। এর মানে নতুন ব্যবস্থায় সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশের কাছাকাছিই থাকবে। ব্যাংক এর ওপরে সুদহারে যেতে পারবে না। চাইলে এর চেয়ে কম সুদে ঋণ বিতরণ করতে পারবে।

এ ছাড়া, আসছে মুদ্রানীতিতে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের একক বিনিময় হার নির্ধারণের ঘোষণা থাকবে। একইভাবে রিজার্ভ হিসাব পদ্ধতি আইএমএফ নির্দেশিত পন্থায় নির্ধারণ করারও ঘোষণা দেওয়া হবে এই মুদ্রানীতিতে।

এদিকে, অর্থ বিভাগ যে মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি দিয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক তার মুদ্রানীতিতে মুদ্রা নিয়ন্ত্রণভিত্তিক ব্যবস্থা থেকে সরে এসে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণভিত্তিক ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে।

গত জুলাইয়ে গভর্নরের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এটি হবে আব্দুর রউফ তালুকদারের দ্বিতীয় মুদ্রানীতি। এর আগের গভর্নর ফজলে কবিরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাঝে কিছুদিন বছরে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করার প্রচলন করা হলেও আইএমএফের পরামর্শে এখন আবার ছয় মাস অন্তর মুদ্রানীতি ঘোষণার পথে ফিরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনকি আইএমএফের চাওয়া অনুযায়ী, আগামীতে চার মাস অন্তর অন্তর হতে পারে মুদ্রানীতি প্রণয়ন।

এর আগে, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি নীতি সুদহার বাড়িয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য ‘সতর্ক ও সংকুলানমুখী’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আ.লীগের কর্মী-সমর্থকদের জন্য কেঁদে কেঁদে দোয়া করলেন হাদি

তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারে ভুল উদ্ধৃতি সংশোধনের আহ্বান টিআইবির

‘আবরারের স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে অনেকের গাত্রদাহ দেখেছি’

সৌন্দর্যবর্ধনে সাভার উপজেলা প্রশাসনের নানা উদ্যোগ

ছেলের দায়ের করা মামলায় বাবাসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে কোরআন অবমাননা, সিএমপির জরুরি সতর্কবার্তা

জাতীয়করণ নিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি তারেক রহমানের বার্তা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ

খেলা শেষ হতেই রেফারির ওপর হামলা

জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের জন্য সুখবর

১০

আদালতের ‘ন্যায়কুঞ্জে’ খাবার হোটেল, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে উচ্ছেদ

১১

অ্যানথ্রাক্স ছড়াচ্ছে উত্তরাঞ্চলে, রংপুর-গাইবান্ধায় সরেজমিনে তদন্ত শুরু

১২

চীন থেকে যুদ্ধবিমান কেনা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা / জানলে যে সব বলে দিতে হবে সেটা তো না

১৩

শেখ হাসিনা ও কামালের নির্বাচনী যোগ্যতা নিয়ে যা জানা গেল

১৪

ছাত্রদলকে সমর্থন জানিয়ে চাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন দুই প্রার্থী

১৫

খুন করে আল্লাহর ভয়ে নামাজ পড়ে ক্ষমা চান হত্যাকারীরা

১৬

ইংলিশদের বিপক্ষে মারুফাদের লড়াই করে হার

১৭

পিআর নিয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব : চরমোনাই পীর

১৮

ফুটবলকে বিদায় বললেন মেসির আরও এক সতীর্থ

১৯

প্রথমবারের মতো ইউনেস্কোর সভাপতি বাংলাদেশ

২০
X