কোরবানির ঈদের পরে এসব জনপ্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারে বিএনপির হাইকমান্ড। সেটা নারী-পুরুষ পৃথকভাবে বিভাগভিত্তিক হতে পারে অথবা ঢাকায় সবাইকে নিয়ে একত্রে একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হতে পারে
ঈদুল আজহার পর সরকারবিরোধী একদফার আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি। এই আন্দোলন সফলে নানা পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। এর অংশ হিসেবে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের পর এবার সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদের দল সমর্থিত সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যারা ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বা করছেন।
ক্ষোভ, অভিমানসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা এসব জনপ্রতিনিধিকে সক্রিয় করে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। এরপর তৃণমূলে তাদের ইমেজ ও জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সামনের আন্দোলনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি তা সফলে নিজ নিজ এলাকায় সমন্বয়ের ভূমিকায়ও রাখা হতে পারে।
জানা গেছে, হাইকমান্ডের নির্দেশে দলের তৃণমূলের তথ্যে এরই মধ্যে সাড়ে ৫ হাজার নারী জনপ্রতিনিধির একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, যারা উপজেলা পরিষদের সাবেক ও বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য। তাদের মাধ্যমে তৃণমূলে আন্দোলনে দলের নারী নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সমাজের নারী জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের পুরুষ জনপ্রতিনিধিদের তালিকাও প্রস্তুত হওয়ার পথে। যারা সিটি করপোরেশনের সাবেক ও বর্তমান মেয়র এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার। আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে তাদের তালিকাও তৈরি হয়ে যাবে। দল সমর্থিত পুরুষ জনপ্রতিনিধির এই সংখ্যা ১৫ হাজার হতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
কোরবানির ঈদের পরে এসব জনপ্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারে বিএনপির হাইকমান্ড। সেটা নারী-পুরুষ পৃথকভাবে বিভাগভিত্তিক হতে পারে অথবা ঢাকায় সবাইকে নিয়ে একত্রে একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হতে পারে, যেখানে দলসমর্থিত সাবেক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানরাও থাকবেন। আজ সোমবার অনুষ্ঠেয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু কালবেলাকে বলেন, হাইকমান্ডের নির্দেশে সারা দেশের দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচিত বিএনপির সমর্থক সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের তথ্য সংগ্রহ করেছি। সংগৃহীত তথ্য সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যে দলের হাইকমান্ডকে অবগত করেছি। এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।
সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলন সামনে রেখে এর আগে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে ২০০১ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত থাকা ইউনিয়ন পরিষদের দলসমর্থিত সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের একটি তালিকা তৈরি করে বিএনপি। তালিকা অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ধারাবাহিক মতবিনিময় সভা করেন সিনিয়র নেতারা।
সব সভাতেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপিতে যুক্ত ছিলেন। বিএনপি নেতারা জানান, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ফলপ্রসূ হয়েছিল। তাদের পরামর্শ দলকে অনেক গতিশীল করেছে। তাই একদফার আন্দোলন সামনে রেখে এবার স্থানীয় সরকারের দলসমর্থিত বাকি জনপ্রতিনিধিদেরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, জনপ্রতিনিধিদের তালিকা তৈরির জন্য চলতি মাসের শুরুতে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে ১০টি টিম গঠন করে বিএনপি। দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে তাদের সহযোগিতা করেন সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু। গত ১০ জুন থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এরপর সংগৃহীত তথ্য নিয়ে গত শনিবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে টিমগুলোর সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, টিমের পক্ষ থেকে একদফার আন্দোলন সামনে রেখে তৃণমূলের দলসমর্থিত এসব জনপ্রতিনিধিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়—সেটা নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে তৃণমূলের এসব জনপ্রতিনিধিকে সক্রিয় করতে তাদের সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের মতবিনিময়, ঢাকায় পুরুষ ও মহিলাদের নিয়ে আলাদা মতবিনিময় সভা।
এ ছাড়া নারী জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে বিভাগীয় পর্যায়ে মতবিনিময় সভা হতে পারে। সেটিই বেশি ফলপ্রসূ হবে। কারণ, তারা দিনে এসে আবার দিনেই বাসায় ফিরতে পারবে। এর বাইরে সবাইকে নিয়ে একত্রে ঢাকায় ‘স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি সাবেক ও বর্তমান সম্মেলন’ শিরোনামে একটি সম্মেলন করা যেতে পারে, যেখানে ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানরাও থাকবেন।
বৈঠকে বিএনপির হাইকমান্ডকে টিমের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব জনপ্রতিনিধির সঙ্গে দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতারই যোগাযোগ নেই। সে কারণে তাদের দলের যে কোনো পর্যায়ের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে কেন্দ্র থেকে জেলা-উপজেলার নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে তাদের ইউনিয়ন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
কারণ, সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তি ছাড়া তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাবে না। তাদের দিয়ে মহিলা দলের জেলা, উপজেলা বিশেষ করে ইউনিয়ন কমিটি করা যেতে পারে। তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করলে তারা মানুষকে সংগঠিত করে আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একটি টিমের একজন সদস্য বলেন, বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
মন্তব্য করুন