চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ভিপি মো. নাজিম উদ্দিন ও চাকসুর জি এস আজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হচ্ছে। সারা দেশ থেকে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী দলটিতে যোগ দিতে পারেন বলে জানিয়েছেন নতুন দলকে সংগঠিত করা নেতারা।
প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম নামের দলটি আজ রোববার সংবাদ সম্মেলন করে আত্মপ্রকাশের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সাবেক নেতার নেতৃত্বে গঠিত হওয়া দলটি নিয়ে এরই মধ্যে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকবেন বিএনপির সাবেক নেতা ও চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন। মহাসচিব হবেন আজিম উদ্দিন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯০ সালে চাকসুর নির্বাচনে ছাত্রলীগ থেকে ভিপি পদে নাজিম উদ্দিন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট থেকে জিএস পদে আজিম উদ্দিন বিজীয় হন। আজিম উদ্দিন ফেনীর দাগনভূঞার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ছিলেন কানাডায়।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন নাজিম উদ্দিন। বিএনপির বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে থাকতেন সামনের সারিতে। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে দলটির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটিতেও তাকে কোনো পদ দেওয়া হয়নি। এজন্য ভিপি নাজিমের নতুন দল নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে বেশি।
এ বিষয়ে নাজিম উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, কলেজজীবন থেকে রাজনীতি শুরু। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে চাকসুর ভিপি হয়েছি। পরে আবার বিএনপির রাজনীতি করেছি। খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছি। কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। কতদিন এভাবে বসে থাকব। তাই নতুন দল গঠনের চিন্তা করেছি।
তিনি আরও বলেন, নতুন দলের মূলনীতি হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা, সংবিধান সমুন্নত রাখা, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আস্থা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অক্ষুণ্ন রাখা এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ।
নাজিম উদ্দিন জানান, নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করতে চাই। যেখানে মেধাহীন রাজনীতি পরিহার করে শিক্ষিতরা প্রাধান্য পাবে। ছাত্রসমাজকে নতুন ধারায় উপযোগী করে গড়ে তোলা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করব। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যে ১০ দফা নিয়ে ছাত্রসমাজ কাজ করেছে, তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে নতুন এ দল। রাজনীতিতে অন্ধ আনুগত্যের বদলে মেধাভিত্তিক স্বাধীন রাজনীতিক চর্চা করা হবে।
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, সারা দেশেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে আমাদের অবস্থান ভালো। চাকসু, ঢাকসু, জাহাঙ্গীর নগর ছাত্র সংসদসহ প্রাক্তন অনেক মন্ত্রীও সঙ্গে থাকবেন।
নিজাম উদ্দিন জানান, নিবন্ধন নিতে চেষ্টা করব। না হলে যে কোনো জোটকে সমর্থন জানাব। সময়ই বলে দেবে কাকে সমর্থন করব। জাতির সংকটময় মুহূর্তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে দলটির আত্মপ্রকাশ।
দল সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনের পর ঢাকায় কনভেনশন হবে। সেখানে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির ঘোষণা করা হবে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আরিফ মঈন উদ্দিন দলটিতে যোগ দিতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ বিষয়ে নাজিম উদ্দিন বলেন, অনেকেই আসবেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামে, অনেক চমক থাকবে।
বিএনপি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, সাবেক নেতারা নতুন দল গঠন করলে বিএনপির কোনো ক্ষতি হবে না। যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের যোগাযোগ নেই। বিএনপির নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ আছেন। সবাই এক দফা ও খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন করছেন।