জাকির হোসেন লিটন
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০২:২৮ এএম
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:১৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই রকম প্রস্তুতি

ব্যালট বাক্স। ছবি : সংগৃহীত
ব্যালট বাক্স। ছবি : সংগৃহীত

আগামী জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এক্ষেত্রে সরকারবিরোধীরা নির্বাচনে এলে একরকম প্রস্তুতি এবং না এলে আরেকরকম প্রস্তুতি রয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

গতকাল সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও র‌্যাব ছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ভিডিপি এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তি ও প্রতিনিধির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এক সভায় বাহিনীর পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস দেওয়া হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা এ বৈঠকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ, মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে প্রতীক বরাদ্দ পর্যন্ত কার্যক্রম সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পাদন, সারা দেশ থেকে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ইত্যাদি অপসারণ, বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, নির্বাচন-পূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন-পরবর্তী সম্ভাব্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে করণীয় নির্ধারণ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনী দ্রব্যাদি পরিবহন, সংরক্ষণ ও বিতরণে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, অঞ্চল ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং নির্বাচন অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার বাসস্থানের ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জোরদারকরণ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাচনী তদন্ত কমিটির দায়িত্ব পালনকালে পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স নিয়োজিতকরণ, নির্বাচনী আইন, বিধিবিধান প্রতিপালনে করণীয় নির্ধারণ, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পরামর্শের আলোকে শান্তিশৃঙ্খলা কার্যক্রম গ্রহণ, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা প্রণয়ন, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নির্বাচনী এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ডে সমন্বয় সাধন এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করা হয়।

সূত্র জানায়, বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ও তপশিল ঘোষণা নিয়ে সম্ভাব্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী হতে পারে, সে সম্পর্কে বাহিনী প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চায় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এরপর একে একে সবার বক্তব্য শোনা হয়। এ সময় নির্বাচন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের কাছে থাকা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন আলোচকরা। অধিকাংশের বক্তব্যেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও অনুকূলে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তারা বলেন, অতীতের দুটি নির্বাচন এবং আগামী নির্বাচন পরিস্থিতি একরকম নয়। সে সময়ের তুলনায় বর্তমানে বাহিনীর জনবলও বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নত নানা প্রযুক্তির পাশাপাশি বাহিনীর সক্ষমতাও আগের তুলনায় বেড়েছে। সেজন্য নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। তবে ভোটের আগে বৈধ অস্ত্র জমা এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের পরামর্শ দেন কেউ কেউ। তারা বলেন, আগের দুটি নির্বাচনের আগে এ কার্যক্রম চালানো হয়। এবার সেটি করা উচিত। এ সময় আবার কেউ কেউ বৈধ অস্ত্র উদ্ধারেরও বিরোধিতা করে বলেন, তাহলে ওই ব্যক্তির নিরাপত্তার ঘাটতি হতে পারে। সেজন্য বৈধ অস্ত্র উদ্ধার না করে এসব অস্ত্র যাতে প্রদর্শন করা না হয়, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া উচিত।

সূত্র জানায়, বৈঠকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়—নির্বাচন কমিশন যদি সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া বিজিবি ১১শ প্লাটুন এবং আনসারের পক্ষ থেকে ৬ লাখ সদস্য মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে জানোনো হয়।

বৈঠকে নির্বাচনের দিন সকালে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানোর বিরোধিতা করেন বাহিনীর প্রতিনিধিরা। তাদের দাবি, কেন্দ্রগুলোতে আগেই বিপুলসংখ্যক বাহিনী মোতায়েন থাকবে। সেক্ষেত্রে ভোটের দিন ব্যালট পাঠাতে গেলে কিছু সমস্যা হতে পারে। এ সময় ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোটের দিন ব্যালট পাঠানোর বিষয়টি এখনো আলোচনাধীন। এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ছাড়াও চার কমিশনার আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর, আনিছুর রহমান ও রাশিদা সুলতানা ছাড়াও ইসি সচিব ও কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসিবে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে মহাপুলিশ পরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন এবং আনসার ও ভিডিপির মহপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের (পিএসও) প্রতিনিধি, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহপরিচালকের প্রতিনিধিরা এবং বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান, গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের (এনএসআই) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল টিএম জোবায়ের এবং ডিজিএফআইর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, কোন পদ্ধতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে, নির্বাচনে সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয় ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়গুলো সভায় আলোচনা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের তথ্য উপস্থাপন করেছে, বিভিন্ন বাহিনী প্রধান তাদের সক্ষমতা কী আছে, অতীতে তাদের জনবলকে কীভাবে কেন্দ্রে ও অন্য কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে; দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কীভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা তুলে ধরা হয়েছে। ভোটের আগে আগে এ ধরনের আরও অনেক সভা হবে বলেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সচিব আলোচনার বিষয় তুলে ধরে বলেন, হরতালের পর একটি বড় রাজনৈতিক দল হরতাল শেষে সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদন মতে, কমিশনের কাছে মনে হয়েছে এখন পর্যন্ত পরিবেশ সন্তোষজনক রয়েছে।

তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের যে প্রতিবেদন, এখন পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজনে বড় ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। যেহেতু গতকাল হরতালের পর তিন দিনের অবরোধ দিয়েছে বিএনপি, সে বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছে, যাতে আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি না ঘটে।

নির্বাচন কমিশনের কী বার্তা ছিল—জানতে চাইলে জাহাংগীর আলম বলেন, কমিশনাররা বক্তব্য শুনেছেন এবং কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এ আলোকে পরে পরিপত্র জারি, কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে মোতায়েন করা হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের যেসব ধাপ রয়েছে, ভোটের তপশিল ঘোষণা থেকে প্রতীক বরাদ্দ, তপশিলের আগে-পরে, ভোটের তারিখ, ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার কবে পাঠানো হবে সকালে নাকি আগের রাতে, তা নিয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত হবে। মিটিং হবে, পরিপত্র জারি হবে, ওই সময়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে কমিশন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

সংবিধান অনুযায়ী, আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট হতে হবে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার বিরোধী জোটের অংশগ্রহণে অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন জানুয়ারির শুরুতে ভোটের আয়োজন করতে চায়। নভেম্বরের প্রথমার্ধের যে কোনো সময় তপশিল ঘোষণা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকঢোল পিটিয়ে বেদখলে থাকা জমি উদ্ধার 

‘আর একটা পাথর সরানো হলে জীবন ঝালাপালা করে দেব’

আমাদের দাবি না মানলে নির্বাচন হবে না : জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি

মানুষ ভাত পাচ্ছে না আর উপদেষ্টারা হাঁসের মাংস খুঁজতে বের হচ্ছেন : আলাল

বিচারককে ‘ঘুষ’, বারে আইনজীবীর সদস্যপদ স্থগিত

ট্রাক প্রতীক নিয়ে নিজ এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন আবু হানিফ 

শিক্ষককে ছুরি মারা সেই ছাত্রী এখন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে

নথি সরিয়ে ১৪৬ কোটি টাকার কর ফাঁকি, কর্মকর্তা বরখাস্ত

নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রাসঙ্গিকতা

আগামী সরকারে থাকবেন কিনা জানালেন ড. ইউনূস

১০

বাঁশের পাতার নিচে মিলল ৩৭ হাজার ঘনফুট সাদাপাথর

১১

একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে : মির্জা ফখরুল

১২

‘সবার উপরে ভাত’ নাটকের কোটি ভিউজ উদযাপন

১৩

‘এক পায়ে পাড়া দিয়ে, আরেক পা টেনে ছিঁড়ে ফেলবো’

১৪

সিলেটে পাথর লুটে জড়িত ৪২ জনের নাম প্রকাশ

১৫

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের তৃতীয় হার

১৬

নির্বাচনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সমর্থন ও সহযোগিতা চাইলেন তারেক রহমান

১৭

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কত বছর লাগবে, জানালেন প্রেস সচিব

১৮

স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়লেন বিসিএস ক্যাডারের ৬ কর্মকর্তা

১৯

চাকরি দিচ্ছে এসিআই, আবেদন করুন এখনই

২০
X