দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় ইশতেহার প্রায় চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এতে বিগত নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের হিসাব-নিকাশ যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে নতুন নতুন চমক। ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির কাজ শেষে এরই মধ্যে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে খসড়া পাঠানো হয়েছে। তার নির্দেশনা অনুযায়ী, কিছু সংযোজন-বিয়োজন এবং তথ্য হালনাগাদের পর চলতি মাসের শেষ সপ্তাহেই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।জানা গেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পর আওয়ামী লীগের লক্ষ্য এবার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে রূপরেখা থাকবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে। এজন্য গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশের লক্ষ্য সামনে রেখে আওয়ামী লীগ তিনটি স্লোগান প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে। এর যে কোনো একটিকে এবারের নির্বাচনে দলটির মূল স্লোগান হিসেবে প্রচার করা হবে। স্লোগান তিনটি হলো—‘২০৪১ উন্নত উদ্ভাবনী প্রগতিশীল স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নয়ন দৃশ্যমান লক্ষ্য এবার কর্মসংস্থান,’ ‘আগামীর সম্ভাবনার দলিল’ এবং ‘সোনালি দিনের প্রতিচ্ছবি’। প্রায় এক ডজনেরও বেশি স্লোগান দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনিসহ ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্যরা এ তিনটি স্লোগান প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেন। তবে শেষ মুহূর্তে স্লোগান পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ আওয়ামী লীগের মূল স্লোগান হবে। আওয়ামী লীগ প্রতিটি নির্বাচনের আগে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইশতেহার প্রণয়ন করে। আমরা অতীতে কী করেছি এবং কী অর্জন করেছি, তা আমরা মূল্যায়ন করি। সেই আলোকেই আমরা প্রতিটি নির্বাচনের আগে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করি।’ জানা গেছে আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে দিনবদলের সনদ স্লোগানে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০০৮ সালের ইশতেহার দিয়েছিল। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির ইশতেহারে ছিল ‘শান্তি গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের স্লোগান ছিল ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরের রূপরেখা থাকছে এবারের ইশতেহারে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঘটা করে ইশতেহার ভোটারদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহার প্রণয়নের জন্য সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাককে আহ্বায়ক এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদকে সদস্য সচিব করে ২৬ সদস্যের উপকমিটি করা হয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মতামত চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ধারাবাহিক বৈঠক শেষে ইশতেহারের প্রথম খসড়া তৈরি করে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে জমা দেয় কমিটি। এর আলোকেই স্লোগান চূড়ান্ত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
উপকমিটির একজন সদস্য জানান, ‘আমরা এখনো ছোট্ট একটি টিম ইশতেহারে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করছি। প্রথম খসড়া গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। বিশেষ কিছু বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। চমকও থাকছে ইশতেহারে।’
২০২১ সালকে ‘অর্থনৈতিক মুক্তি’ ও ‘মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর দর্শন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের খসড়া ইশতেহারে বলা হয়েছে, ২০৪১ সাল হবে সাংস্কৃতিক মুক্তির দর্শন, যেখানে অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। ২০৭১ সালে সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাবে স্বাধীনতার শতবর্ষে, ২১০০ সালের মধ্যে ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিরাপদ বদ্বীপে পরিণত করা হবে।
খসড়া ইশতেহারে নির্বাচনী ইশতেহার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৯তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের বক্তব্য থেকে উক্তি দিয়ে শুরু হয়েছে। এর পরেই রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় চারটি মূল স্তম্ভে বিভক্ত করা হয়েছে, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজব্যবস্থা। চারটি স্তম্ভের ক্ষেত্রেই স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে, যা বাস্তবায়নে যথাক্রমে ২০২৫, ২০৩১ ও ২০৪১ সাল নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্মার্ট নাগরিক গড়ে তুলতে শিক্ষাব্যবস্থা আমূল রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যেখানে শিখন-শেখানো পদ্ধতিতে সমস্যাভিত্তিক শিখনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে ব্লেনডেড শিক্ষা এবং ডিজিটাল পাঠ্যক্রম ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ২০২৫ সালে ৫০ শতাংশ, ২০৩১ সালে ৭৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালে ৯০ শতাংশের বেশি নাগরিকের ডিজিটাল দক্ষতা নিশ্চিত করা হবে। অন্যদিকে, স্মার্ট ডিভাইসের ব্যবহার নিশ্চিত করতে একই সময়সীমার মধ্যে ৬০ শতাংশ, ৮০ শতাংশ ও ২০৪১ সালে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ই-পার্টিসিপেশন নিশ্চিত করা হবে, সেই সঙ্গে উদ্যোক্তা ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা হবে।
স্মার্ট সরকার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হবে নাগরিককেন্দ্রিক, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, কাগজবিহীন, উপাত্তনির্ভর, সমন্বিত এবং স্বয়ংক্রিয়। এজন্য ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় কাগজবিহীন সেবা, ২০৩১ সালের মধ্যে শতভাগ ক্ষেত্রে কাগজবিহীন ও ব্যক্তি-চাহিদা অনুযায়ী সেবা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব ধরনের নাগরিক সেবা গ্রহণে স্মার্ট আইডির সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য স্মার্ট ড্যাশবোর্ড তৈরি করা হবে। জাতিসংঘের ই-গভ. ডেভেলপমেন্ট সূচকে ২০২৫ সালের মধ্যে ১০০ ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০-এর মধ্যে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে কর-জিডিপি ১২ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ২০৪১ সালে ২২ শতাংশের বেশি করতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া স্মার্ট লিডারশিপ একাডেমি প্রতিষ্ঠা, স্মার্ট সরকারের জন্য সংসদ সদস্য, প্রশাসনিক ও বিচারিক কর্মকর্তাদের দক্ষতা নিশ্চিত করা হবে। স্মার্ট ভূমিসেবা বাস্তবায়নে ২০২৫ সালে নিশ্চিত করা হবে। ২০৩১ সালের মধ্যে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম ডিজিটাইজেশনে, স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে শেয়ার্ড হেলথ রেকর্ড সিস্টেম চালু ও ২০২৫ সালের মধ্যে স্মার্ট ভিসা ব্যবস্থা চালু করা হবে।
স্মার্ট অর্থনীতি গড়তে ক্যাশলেস, সার্কুলার, উদ্যোক্তামুখী, জ্ঞানভিত্তিক, গবেষণা ও উদ্ভাবন নির্ভর করা হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে গড় মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫০০ ও দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০৩১ সালের মধ্যে শতভাগ ক্যাশলেস লেনদেনের ব্যবস্থা করা হবে।
২০৪১ সালের মধ্যে নাগরিকদের গড় মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে এবং দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে এবং ২০৩১ সালের মধ্যে শতভাগ আর্থিক লেনদেন ক্যাশলেস উপায়ে সম্পন্নকরণের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিতে সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, রোবটিকস, সেমিকন্ডাক্টর, ইলেকট্রিক ভেহিকল, স্পেস, জিওস্পেশিয়াল প্রযুক্তিসহ এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিগুলো নিয়ে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি-ভিত্তিক সেন্টার অব এক্সিলেন্সি/রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার গড়ে তোলা হবে। উচ্চগতি ও নির্ভরশীল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহার ২০২৫ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ এবং ২০৩১ সালের মধ্যে শতভাগে উন্নীত করা হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ই-ট্রেড লাইসেন্সসহ সব গুরুত্বপূর্ণ সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
এ ছাড়া স্মার্ট অর্থনীতি নিশ্চিতে ইশতেহারে সব ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে আর্থিক পেমেন্ট-সংক্রান্ত সব পরিষেবার পারস্পরিক সংযুক্তি নিশ্চিত করা হবে। আইসিটি খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও দেশীয় আইসিটি ব্যয় বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হবে। আইসিটি রপ্তানির পরিমাণ ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়নে উন্নীত করা হবে। সরকারি ক্লাউড ও ডাটা সেন্টারের মাধ্যমে প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোগত মেরুদণ্ড গড়ে তোলা হবে। এগ্রোটেক, ফিনটেক, হেলথটেক, স্মার্টগ্রিড, এডুটেক, স্মার্ট কমার্স, স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা—এসব খাতকে। অগ্রাধিকার দিয়ে এসব খাতে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে পাঁচটি ইউনিকর্ন স্টার্টআপ, ২০৩১ সালের মধ্যে ১০টি ইউনিকর্ন স্টার্টআপ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০টি ইউনিকর্ন স্টার্টআপ স্থাপন করা হবে। জিডিপিতে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ১ শতাংশ এবং ২০৩১ সালের মধ্যে ২.৫ শতাংশ টোটাল ফ্যাক্টর প্রডাক্টিভিটি (টিএফপি) প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা হবে।
স্মার্ট সমাজ গঠনে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে জাতি, ধর্ম, বয়স, পেশা, সামাজিক অবস্থা, শারীরিক সক্ষমতা নির্বিশেষে সবার জন্য সব সুযোগ-সুবিধা সমানভাবে নিশ্চিত করা হবে। ২০২৫ সালে ৫০ শতাংশ ও ২০৪১ সালে শতভাগ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হবে। সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম ‘সিঙ্গেল রেজিস্ট্রি এমআইএস’ সিস্টেম দ্রুত বাস্তবায়ন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ২০৪১ সালের মধ্য প্রথম ২০টি দেশের মধ্যে উন্নীত করা হবে। ২০২৫ সালের মধ্য ডিজিটাল অ্যাক্সেস সুবিধাসম্পন্ন অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তোলা হবে এবং গ্লোবাল ইকুয়ালিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
স্মার্ট নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে, শিক্ষার উন্নয়নে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইন্টারনেট অব থিংস, এআর, ভিআর, রোবটিকস ও বিগ ডাটার ব্যবহার নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং দক্ষতা উন্নয়নে স্পেশালাইজড ল্যাব স্থাপন করা হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত ডিভাইস, পাঠ্যপুস্তক ও কনটেন্ট প্রস্তুত করা এবং নারী-দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ।
দক্ষতা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে চতুর্থ শিল্প চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী বিভিন্ন পেশার মাস্টার ট্রেইনার প্রস্তুত এবং তরুণ প্রজন্মকে সময়ানুগ বিভিন্ন পেশার প্রশিক্ষণ প্রদান। স্মার্ট কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে দক্ষতা উন্নয়নসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চাকরিদাতা ও ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করা। বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে শর্ট কোর্স চালু। দক্ষতা উন্নয়নে বাংলা ভাষায় ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের কলেজকে চাকরি ও উদ্যোক্তা প্ল্যাটফর্মে অন্তর্ভুক্ত করা। কওমি মাদ্রাসাকে কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণে কমন হেলথ আইডি ও শেয়ার্ড হেলথ রেকর্ডের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি নাগরিককে স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। ২০৩০ সালের মধ্য ৪০ শতাংশ জনসংখ্যা ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজে অন্তর্ভুক্তি। প্রাইমারি স্বাস্থ্যসেবায় ডিজিটাল উদ্যোগ যেমন টেলিমেডিসিন, রেফারেল সিস্টেম, অনলাইন পেমেন্ট, অ্যাপয়েনমেন্ট সিস্টেমে পাইলটিং কার্যক্রম চালু ২০২৫ সালে।
সংস্কৃতি বিকাশে সকল ধর্মের শিক্ষা ও মূল্যবোধের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন এবং সামাজিক সচেতনতা, বিজ্ঞানমনস্কতা, সংস্কৃতির চর্চা ও উদার মানবিক চেতনা সৃষ্টির ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হবে। লোকসংস্কৃতি ও লোকঐতিহ্য এবং নৃগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনধারার বৈশিষ্ট্যসমূহ সুরক্ষা করা হবে। শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে শিল্পী-সাহিত্যিকদের সহায়তা বৃদ্ধি করা হবে। লোকঐতিহ্য তথা মেলা, যাত্রাপালা, নাটক, চলচ্চিত্র, নৃত্যগীত ও অন্যান্য সুস্থ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এবং জঙ্গিদের হামলা ও অপপ্রচার নির্মূল করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। অশ্লীলতা, কূপমণ্ডূকতা, গোঁড়ামি এবং অপসংস্কৃতির আগ্রাসন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। দেশের সর্বত্র সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ অব্যাহত রাখার জন্য পাঠাগার, নাট্যশালা, মিলনায়তন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
নারীর ক্ষমতায়নে জেন্ডার বান্ধব স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে জেন্ডার সেন্টার অব এক্সিলেন্স তৈরি, ডিজিটাল ডিভাইড শূন্যতে নামিয়ে আনা, বাল্যবিবাহ শূন্যের কোঠায় আনা ও মেয়ে শিশুর উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করা।
প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ কল্যাণে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৬০ শতাংশ সেবা প্রতিবন্ধী নাগরিকবান্ধব করা, ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় ইনক্লুসিভ ঘোষণা করা। দুই লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা। এক লাখ প্রতিবন্ধীবান্ধব কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
ইন্টারনেটে সংযুক্ত স্মার্ট ডিভাইসের বিস্তৃতির লক্ষ্যে ২০২৫ সালের মধ্য অর্ধেক ও ২০৪১ সালের ৯০ শতাংশ স্মার্ট ডিভাইসের আওতায় আনার পরিকল্পনা। স্থানীয়ভাবে স্মার্ট ডিভাইস উৎপাদন বৃদ্ধি ও স্মার্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে নির্ভুল কৃষি নিশ্চিত করা।
পররাষ্ট্র নীতিকে যুগোপযোগী করতে সুরক্ষিত হটলাইন স্থাপন, ক্রিপ্টো যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বর্ধিত মিশ অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার সক্ষমতা গড়ে তোলা।
স্মার্ট অর্থনীতির জন্য কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টির জন্য খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে নিশ্চয়তায় সব কৃষককে স্মার্ট আইডি নিশ্চিত করা। কৃষির সব তথ্য-উপাত্তভিত্তিক ইকোসিস্টেম তৈরি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সমন্বিত পরিষেবা সরবরাহ এবং ডাটা-চালিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। গুণগত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি সম্প্রসারণ-গবেষণার মধ্যে সহযোগিতামূলক নেটওয়ার্ক হাব তৈরি করা। অর্থায়ন, বাজার এবং প্রযুক্তি অ্যাকসেস সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়ন। স্মার্ট কৃষি বাস্তবায়নে কৃষির আধুনিকীকরণে যান্ত্রিক এবং প্রিসিশন পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য স্মার্ট কৃষি টেক ল্যাব স্থাপন। কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী তাৎক্ষণিক তথ্য-উপাত্তনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি কৃষি সম্পর্কিত সব ডাটা স্ট্যান্ডার্ড ও ইন্টারঅপারেবল করা।
শিল্প উন্নয়নে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া তৈরি, কুটির অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত বিকাশে পরিকল্পনা গ্রহণ।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২০৩০ সালের মধ্য ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য/টেকসই উৎস দ্বারা উৎপাদন করার পরিকল্পনা। ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুতের লাইন ৬.৪৩ লাখ কিমি থেকে ৭.৮৩ কিমিতে উন্নীত করা।
যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকায় যানজট নিরসনে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ৬টি উড়াল ও পাতাল পথ নির্মাণ। ঢাকা-আশুলিয়া পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ। কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী সড়কে পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ পরিকল্পনা। কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলা সদর থেকে করিমগঞ্জ উপজেলার মরিচখালী পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণ। ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কে মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ। বাংলাদেশের তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন। সড়ক পথে সব লজিস্টিক পরিবহনে (যেমন: ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ইত্যাদি) বাধ্যতামূলকভাবে ভেহিকল ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। নৌ পরিবহন ক্ষেত্রেও ভেহিকল ট্র্যাকিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করা।
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে সাড়ে ৬ লাখ ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, তিন হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্কুল অব ফিউচার হিসেবে রূপান্তর। ২০ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রোগ্রামিংবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া। জনশক্তি তৈরিতে আন্তর্জাতিক মানের আইসিটি একাডেমি স্থাপন, ৬৪ জেলায় ৬৪ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা ও এজন্য আন্তর্জাতিক মানের মার্কেটপ্লেস তৈরি।
ক্যাশলেস লেনদেন ও সার্কুলার ইকোনমি বাস্তবায়নের জন্য ডিজিটাল পেমেন্ট ৮০ শতাংশ উন্নীত করা। টাকা ট্রান্সফারের খরচ কমানো। সব ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ও অন্যান্য ওয়ালেটের মধ্য আন্তঃলেনদেনের ব্যবস্থা করা।
ক্রিয়েটিভ ইকোনমি বাস্তবায়নের জন্য আইওটি, এআই, এআর, ভিআরের মতো প্রযুক্তিগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। ক্রিয়েটিভ ইনকিউবেটর বা হাব স্থাপন করা হবে, যা শিল্পী বা সৃজনশীলদের যথাযথ পরামর্শদানসহ কর্মক্ষেত্রে বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি ও সহযোগিতা করবে। ক্রিয়েটিভ ইকোনমি বিকাশের জন্য বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ উদ্যোগকে অনুদান প্রদান, প্রতিযোগিতা চালুকরণ, উদ্ভাবনকে উৎসাহিতকরণ এবং নতুন ধারণার বিকাশে সহযোগিতা করা হবে। ক্রিয়েটিভ ইকোনমিতে সৃজনশীলদের অংশগ্রহণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হবে। ডিজিটাল আর্টওয়ার্ক, কারুশিল্প এবং অন্যান্য সৃজনশীল পণ্য বিক্রির অনুমতি দিয়ে ভোক্তাদের সঙ্গে শিল্পীদের সংযোগকারী অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো বিকাশ এবং প্রচার করার সুযোগ তৈরি করা হবে। সৃজনশীলদের যথাযথ মূল্যায়নের জন্য কপিরাইট আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন এবং শিল্পীদের মেধা সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কে শিক্ষিত করার জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। শৈল্পিক অভিব্যক্তি এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের আইন ও নীতি প্রণয়ন করা হবে।
আমার গ্রাম-আমার শহর এর আওতায় প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ করতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, মিনি পাইপড পানি সরবরাহ ও পানি পরিশোধন প্লান্ট স্থাপনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কালবেলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইশতেহার জাতির আগামী দিনের ইশতেহার। খসড়া ইশতেহার দলের সভাপতির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে তিনি দেখছেন। জাতির জন্য চমক রেখেই ইশতেহার ঘোষণা করা হবে।’