হৃদরোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই ‘রিং’ স্থাপন করতে হয়। চিকিৎসকরা যত দ্রুত সম্ভব প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে চান। ফলে রোগীর স্বজনদের স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে হয়। হার্ট বা হৃদযন্ত্রে যে স্টেন্ট বা রিং স্থাপন করা হয়, সেটির গুণ-মান সম্পর্কে রোগী বা তার স্বজনের জানার কোনো সুযোগ থাকে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর মূল্য নিয়েও মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকে না তাদের। এ অসহায়ত্বের সুযোগে দেশে হার্টের রিং নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন একশ্রেণির সরবরাহকারী ও চিকিৎসক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশে মূলত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা চিকিৎসকদের মাধ্যমেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করোনারি স্টেন্ট বা হার্টের রিং সরবরাহ করে। রোগীর হার্টে একেকটি রিং স্থাপনের জন্য চিকিৎসকরা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন নেন। কখনো কখনো কমিশনের একাংশ চলে যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। এতে রিংয়ের মূল্য বেড়ে যায়। অনৈতিক এ কমিশন বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ক্যাথল্যাবে প্রায় এক সপ্তাহ সরেজমিন দেখা গেছে, রোগীকে ক্যাথল্যাবে নিয়ে যাওয়ার পর বাইরে স্বজনরা অপেক্ষা করেন। চুক্তি অনুযায়ী চিকিৎসকই পছন্দের কোম্পানির স্টেন্ট বা রিং সরবরাহ ও খরচের কথা জানাচ্ছেন। ক্যাথল্যাবের পাশেই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীরা অপেক্ষা করেন। পছন্দের চিকিৎসক চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানির প্রতিনিধিকে ডেকে স্টেন্ট সংগ্রহ করছেন। এ প্রক্রিয়ায় রোগীর স্বজনদের পছন্দের সুযোগ নেই।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ মৃত্যু হয় হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ নানা অসংক্রামক রোগে। তার মধ্যে ২৫ শতাংশ মৃত্যু হয় শুধু হৃদরোগে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে হার্টের রিংয়ের বার্ষিক বাজার প্রায় ৩০০ কোটি টাকার। প্রতিবছর দেশে প্রায় ৩৫ হাজার স্টেন্ট বা রিং পরানো হয়। শুধু জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ৯ হাজার স্টেন্ট লাগানো হয়। এর বাইরে সবচেয়ে বেশি স্টেন্ট লাগানো হয় মালিবাগ সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, উত্তরা লুবাবা জেনারেল হাসপাতাল ও কার্ডিয়াক সেন্টার, গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতাল, ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতাল, আনোয়ার খান মডার্ন ও গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে ২৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪৪ ধরনের স্টেন্ট ও হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পেসমেকার, বেলুন গাইডওয়্যার, ক্যাথেটার, ভালভ, অক্সিজেনেটর ইত্যাদি আমদানি করে থাকে। এর মধ্যে এ খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর ভাসটেক লিমিটেড, জহির নামে এক ব্যসায়ীর কার্ডিয়াক কেয়ার, ইশতিয়াক আহমেদ নামে অন্য এক ব্যবসায়ীর ওমেগা হেলথ কেয়ার, ওরিয়েন্ট এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোং. লিমিটেড, মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালকের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান এইচআরএস কার্ডিয়াক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
১০ জন রোগী এবং কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু কমিশন বাণিজ্যের কারণে রোগীর স্বজনদের বেশি দামের রিং পরাতে উৎসাহিত করে থাকেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা। ১ লাখ টাকার রিংয়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা কমিশন পান চিকিৎসক। পেসমেকার, ভালভ, এপিজেনেরেটিক্স যন্ত্র থেকেও চিকিৎসকরা কমিশন পান বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
প্রবীণ এক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কালবেলাকে বলেন, ‘কমিশন বাণিজ্য চিকিৎসকদের স্বভাব নষ্ট করে দিয়েছে। আগে শুধু ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা প্যাথলজিক্যাল টেস্ট থেকে কমিশন দেওয়া হতো, ওষুধ কোম্পানি থেকে দেওয়া হতো গিফট। এখন একশ্রেণির কার্ডিওলজিস্ট রীতিমতো রিং থেকেও কমিশন খান, যা শুনে আমরাই লজ্জিত।’
অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসক-সরবরাহকারী সিন্ডিকেটে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন চিকিৎসক যুক্ত আছেন।
হার্টের রিং ব্যবসায় কমিশনের লোভে চিকিৎসকরা: রাজধানীর হাজারীবাগের বাসিন্দা শামীম হোসেন। গত ১৭ নভেম্বর তার বাবা হার্ট অ্যাটাক করেন। মুমূর্ষু অবস্থায় নিয়ে আসা হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। ইসিজি পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে ধরা পড়ে হার্টে ব্লক। তাকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে। ৭৩ বছর বয়সী এ বাবা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিক রোগী। ভর্তির পরদিন চিকিৎসক জানান, রোগীর এনজিওগ্রাম করতে হবে। রোগীকে বাঁচাতে হার্টে পরাতে হবে স্টেন্ট বা রিং। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত রোগীকে এ অবস্থায় হার্টে রিং পরানো ঠিক হবে কি না—জানতে চাইলে চিকিৎসক উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তার সময় নষ্ট না করে রুম থেকে বেরিয়ে যেতেও বলেন। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডাও হয়।
শামীম হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘রোগী বাঁচল কি মরল, সেটা নিয়ে ডাক্তারের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। তার চিন্তা শুধু ব্যবসা। তিনি আমার বাবার ডায়াবেটিসের মাত্রা ২৩-এর ওপরে থাকার পরও হার্টে রিং বসাতে চান। এতে আমরা আস্থা হারিয়ে ফেলি। চিকিৎসক পরিবর্তনের জন্যও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাই। সেটা সম্ভব হয়নি, পরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে আমার বাবাকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসি।’
তথ্য বলছে, অভিযুক্ত ওই চিকিৎসক জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীদের হার্টে রিং পরানোর জন্য আগের দিন একটি তালিকা তৈরি করেন। এ ধরনের একাধিক তালিকা কালবেলার হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, একজন চিকিৎসক শুধু জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে দিনে গড়ে ২০ থেকে ২৫ রোগীর হার্টে রিং পরান।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ওই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘একজন চিকিৎসক হিসেবে ইথিকস মেনেই রোগীর দরকার হলে স্টেন্ট বা রিং পরাতে পরামর্শ দিই। রোগীর পরিবারের সম্মতিতেই স্টেন্ট প্রতিস্থাপন করে থাকি। আমি ও পরিবারের কোনো সদস্য হৃদরোগের চিকিৎসা-সংক্রান্ত ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। এসব অভিযোগ অবান্তর ও ভিত্তিহীন।’
গত মার্চে ধানমন্ডির ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন খান (৫০) হৃদরোগজনিত ব্যথা নিয়ে ধানমন্ডি গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যান। এরপর ভুল চিকিৎসার অভিযোগ করে পরিবার। রোগীর স্ত্রী নূরুন নাহার বলেন, জাকির হোসেনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া হার্টে রিং পরানো হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে চিকিৎসক ছাড়পত্র দেননি। এ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি রোগীর বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসকরা তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। রোগীর মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব দোষ স্বীকার করে অফিসিয়াল প্যাডে লিখিত দেন। এমনকি রোগীর চিকিৎসায় হাসপাতালের পরিশোধিত বিল স্বজনদের ফেরত দেন।
রিং বাণিজ্যে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক: সরকারি চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘন করে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন তার স্ত্রী খুরশীদ জাহানের মাধ্যমে হার্টের রিং ও পেসমেকার ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। পরিচালকের স্ত্রী এইচআরএস কার্ডিয়াক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান। কোম্পানিটি হার্টের রিং ও পেসমেকার ব্যবসায় যুক্ত। এ প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা যায়, এইচআরএস কার্ডিয়াক ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহাবুবুর রহমান ডালিম, তার স্ত্রী মাসুমা আক্তার ও হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ওয়ার্ড মাস্টার হাসানুজ্জামান টিপুর স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তার কোম্পানিটির পরিচালক। চলতি বছরের শুরুতে মাহাবুবুর রহমান ডালিম এইচআরএস ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির নামে বাংলাদেশে হার্টের রিং ও পেসমেকার সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ম্যাট্রোনিক বাংলাদেশ লিমিটেডের ডিলারশিপ নেন। আর্থিক সংকটে পড়লে এইচআরএস ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির অধীনে তিনি এইচআরএস কার্ডিয়াক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে একটি সাব-কোম্পানি খোলেন। এখানেই চেয়ারম্যান করা হয়েছে এনআইসিভিডি পরিচালকের স্ত্রী খুরশীদ জাহানকে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ডালিম গত মে মাসে এইচআরএস ইন্টারন্যাশনালের অধীনে নতুন কোম্পানিটি খোলেন। ডিলারশিপ নিতে তাকে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। এ বিনিয়োগের একটি বড় অংশ আসে ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মীর জামাল উদ্দিনের স্ত্রীর কাছ থেকে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে মাসে ২০০ থেকে ২৫০ হার্টের রিং এবং ৩০০ পেসমেকার পরানো হয়, যার প্রায় অর্ধেক নেওয়া হয় ম্যাট্রোনিক বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে। প্রতিটি রিংয়ের দাম পড়ে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা। দেশের অনেক বড় হাসপাতালও এ কোম্পানি থেকে হার্টের রিং ও পেসমেকার নেয়।
এইচআরএস কার্ডিয়াক ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান খুরশীদ জাহান মূলত গৃহিণী। ডালিম এক সময় হার্টের রিং ও পেসমেকার সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং বিভাগে কাজ করতেন। তার স্ত্রী মাসুমা আক্তার ও ওয়ার্ড মাস্টার হাসানুজ্জামান টিপুর স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তারও গৃহিণী।
ইনস্টিটিউটের একাধিক চিকিৎসক বলেন, নতুন কোম্পানিতে পরোক্ষভাবে বিনিয়োগ করেছেন ডা. মীর জামাল উদ্দিন, যা সরকারি চাকরির বিধিমালার লঙ্ঘন।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এইচআরএস কার্ডিয়াক একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান ছিল। সেখান থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছি। এইচআরএস কার্ডিয়াকের সঙ্গে আমার ও পরিবারের সদস্যদের আর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
এইচআরএস কার্ডিয়াক ইন্টারন্যাশনালে বর্তমানে আর কারও শেয়ার নেই দাবি করে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাহবুবুর রহমান (ডালিম) এবং তার স্ত্রী ও পরিচালক মাসুমা আক্তার বলেন, ‘আমরা হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালকের স্ত্রী ও ওয়ার্ডবয় টিপুর স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তারের শেয়ার কিনে নিয়েছি। তারা এখন আর এই প্রতিষ্ঠানে নেই।’
সংশ্লিষ্ট নথিপত্র বলছে, এইচআরএস কার্ডিয়াকে চারজনের ব্যবসা রয়েছে। মীর জামাল উদ্দিন তাদের অন্যতম।
দেশে দেশে হার্টের রিংয়ের দাম: চলতি বছরের জুনে ড্রাগ রেগুলেটরি অথরিটি অব পাকিস্তান (ডিআরএপি) চারটি কার্ডিয়াক স্টেন্টের জন্য নতুন দাম প্রকাশ করেছে। সূত্র অনুযায়ী, ইউএস প্রোমোস প্রিমিয়ারের দাম ৫৮ হাজার ৭৬৫ পাকিস্তানি রুপি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিইসিন এক্স টু এনইসিএসএস নোভোলিমাস ড্রাগ-ইলুটিং স্টেন্ট সিস্টেমের দাম সর্বোচ্চ ৭২ হাজার ৪৫০ রুপি। জাপানের আল্টিমাস্টার সিরোলিমাস এলুটিং করোনারি স্টেন্ট সিস্টেমের মূল্য নির্ধারণ করেছে ৬৫ হাজার ৫০৭ রুপি। তুর্কি ও ইতালির সিআরই ৮ এমফিলিমাস ইলুটিং করোনারি স্ট্যান্টের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ হাজার ১৩০ রুপি। ভারতীয় ওয়েবসাইট কার্ডিওমেটের তথ্যমতে, ভারতে হৃদরোগের একটি স্টেন্টের জন্য ৭ হাজার থেকে ৩৫ হাজার রুপি খরচ করতে হয়।
নতুন মূল্য নির্ধারণ ওষুধ প্রশাসনের: এদিকে গত ১২ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২৭টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ৪৪ ধরনের কার্ডিয়াক স্টেন্টের (হার্টের রিং) দাম ২ হাজার থেকে ৫৬ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ)। সে হিসাবে স্টেন্ট প্রতি ৩ শতাংশ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত দাম কমছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এ নতুন দাম কার্যকর হবে। একই সঙ্গে হৃদরোগের চিকিৎসা প্রদানকারী সব হাসপাতালের নোটিশ বোর্ডে করোনারি স্টেন্টের মূল্যতালিকা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে ডিজিডিএ।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র উপপরিচালক ও আইন কর্মকর্তা মো. নূরুল আলম কালবেলাকে বলেন, ‘হার্টের রিংয়ের (স্টেন্ট) দাম কমিয়েছে সরকার। নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত কেউ বিক্রি করতে পারবে না। অধিক মূল্যে কেউ বিক্রি করলে ওষুধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩ অনুযায়ী দুই বছরের কারাদণ্ড কিংবা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার ইক্যুইপমেন্ট অ্যান্ড ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর স্টেন্টের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভ্যাট ও ট্যাক্স সংযুক্ত করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। স্টেন্টের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে এসব ইনক্লুড করা হলে আমদানিকারকদের জন্য ভালো হতো।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে আমরা সরাসরি রিটেইল করি। বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে অনেক কোম্পানি কমিশনের ভিত্তিতে রিটেইল করে থাকে। চিকিৎসকদের কোনো কমিশন দিয়ে স্টেন্ট বিক্রি করি না।’
কার্ডিয়াক কেয়ারের বিক্রয় প্রতিনিধি তারেক কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকদের কমিশন দিয়ে স্টেন্ট বিক্রি করি না। মাদার কোম্পানি (অ্যাব্রড) বিভিন্ন সময়ে হৃদরোগের চিকিৎসা বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। এর বাইরে স্টেন্ট বিক্রির জন্য চিকিৎসকদের কোনো কমিশন বা সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই।’