দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল অনুযায়ী আজ রোববার শেষ হচ্ছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ। আগামীকাল সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হবে ভোটারদের মন জয়ে মাঠের লড়াই। জোটগত নির্বাচনের জন্য এরই মধ্যে আসন সমঝোতা শেষ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আসন ভাগাভাগিতে প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি শরিক ও মিত্রদের। এ কারণে অনেকটা মন খারাপ নিয়েই নির্বাচনী প্রচারে নামতে হচ্ছে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোট শরিকদের। প্রার্থিতা বহাল থাকলেও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটের আগে মাঠ ছেড়ে দেবেন—অনেকেই এমনটা আশা করছেন।
জানা গেছে, শরিক ও মিত্র দলগুলোর আশা ছিল, বিএনপি নির্বাচনে না আসায় এবার তারা একাদশ সংসদ নির্বাচনের চেয়ে বেশি আসন পাবেন। কিন্তু সীমিত আসনে তাদের ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেইসঙ্গে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বহাল রাখার সিদ্ধান্তও ভালোভাবে নেয়নি শরিকরা। জানা গেছে, ১৪ দলের শরিকদের যে সাতটি আসেন ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেখানে তারা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জোটগত প্রার্থীদের নৌকা প্রতীক বরাদ্দের জন্য চিঠি দেওয়া হবে। ওই আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা আজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন। আর কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলেও নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগের দেওয়া সর্বশেষ চিঠির ভিত্তিতে দলের মনোনীতদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে।
অন্যদিকে, জাতীয় পার্টিকে যে ২৬টি আসনে ছাড় দেওয়া হচ্ছে, সেসব আসনেও নৌকার প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন।
আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান কালবেলাকে বলেন, ‘রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের একটি চূড়ান্ত নতুন তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে, যারা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন।’
আসন সমঝোতা অনুযায়ী ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাসদকে তিনটি করে এবং জাতীয় পার্টিকে (জেপি) একটি আসন দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বরিশাল-২, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী-২ এবং মোস্তফা লুৎফুল্লা সাতক্ষীরা-১ আসনে জোটের মনোনয়ন পেয়েছেন। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২, এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন বগুড়া-৪ এবং মোশাররফ হোসেনকে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পিরোজপুর-২ আসনে জোটের প্রার্থী। তিনটি দলেরই প্রত্যাশা ছিল এর চেয়ে বেশি আসন। অন্তত ২০১৮ সালের নির্বাচনে যেসব আসনে তারা জোটগতভাবে লড়েছিলেন, এবার সেই আসন পাওয়ার আশা ছিল তাদের। কিন্তু আওয়ামী লীগ সাতটির বেশি আসনে ছাড় দিতে রাজি হয়নি। এ কারণে এসব দলের অভ্যন্তরে অসন্তোষ রয়েছে।
জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার গত দুটি নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি হলেও এবার তাকে ছাড় দেয়নি আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘এখনো আশা ছাড়িনি। কথাবার্তা চলছে। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয়।’ শেষ পর্যন্ত জোটের মনোনয়ন না পেলে কী করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরেরটা পরে দেখা যাবে।’
অবশ্য যেসব আসনে শরিক দলের নেতাদের জোটের মনোনয়ন নিশ্চিত হয়েছে, তারা এরই মধ্যে নির্বাচনে নেমে গেছেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন কালবেলাকে বলেন, ‘আসন বণ্টন নিয়ে নতুন কোনো অগ্রগতি নেই। আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় চলে এসেছি।’
অন্যদিকে, ১৪ দলের আরেক শরিক তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর গত দুটি নির্বাচনে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হলেও এবার তাকে ছাড় দেয়নি আওয়ামী লীগ। এ কারণে তিনি মনঃক্ষুণ্ন। এ আসনে নতুন দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদকে ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ। তিনি গতকাল শনিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর কালবেলাকে বলেন, ‘জোটের পক্ষ থেকে এখনো আমাকে হ্যাঁ বা না জানানো হয়নি। অপেক্ষায় আছি, দেখি কী করে। আসন ছাড় না দিলেও আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তো জানাবে। জোটের শরিক হিসেবে তাদের কাছ থেকে এতটুকু সৌজন্য প্রত্যাশা করি।’
অন্যদিকে, আগের তিনটি নির্বাচনে বঞ্চিত হলেও এবারের প্রেক্ষাপটে জোটগতভাবে ভোট করার আশা ছিল ১৪ দলের অন্য শরিকদের, বিশেষ করে সাম্যবাদী দল ও গণতন্ত্রী পার্টি আওয়ামী লীগের কাছে আসন চেয়েছিল। কিন্তু এবারও এসব দলকে কোনো ছাড় দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া কালবেলাকে বলেন, ‘জোটের মনোনয়ন চেয়েছিলাম; কিন্তু পাইনি। কী আর করা। এখন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করব।’
তার দলের অন্য প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন দিলীপ বড়ুয়া।
এদিকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির প্রধান দাবি, স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যাহারের বিষয়টি মেনে না নিলেও গত শুক্রবার রাত পর্যন্ত ২৬টি আসনে সমঝোতা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বর্তমানে দলটির সংসদ সদস্য ২৩ জন। এর মধ্যে রওশনপন্থি চারজন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রথমে বর্তমান ১৯টি আসনে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ধারাবাহিক আলোচনার মধ্য দিয়ে এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে ২৬ আসনে ছাড় দিতে সম্মত হয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল শনিবার রাতেও জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আজ দুপুরের মধ্যে আসন ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু শনিবার বলেছেন, ‘আলোচনার টেবিলে আসন মুখ্য নয়, ভালো পরিবেশে উভয়পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা চলমান। নির্বাচন নিয়ে সব কৌশল আমরা প্রকাশ করতে চাই না। কৌশলে সব দলই চায় সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি আসনেও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করব না। নির্বাচন থেকে চলেও যাব না।’