বিএনপির আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পোড়ে—এটা বিএনপির মনে রাখা উচিত। মানুষের জীবন কেড়ে নেবে, মানুষকে ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস কোথা থেকে পায়! লন্ডনে বসে এক কুলাঙ্গার হুকুম দেয়, আর কিছু লোক এখানে আগুন নিয়ে খেলে। গতকাল বুধবার বিকেলে সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিশাল এ জনসভায় নৌকায় ভোট চাওয়ার মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করলেন শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি হজরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন।
ভোট দেওয়াকে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, ভোট দিতে চায়। আমরা ভোটের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমাদের দলকেও। সবাই দাঁড়াবে, সবাই কাজ করবে। জনগণ যাকে বেছে নেবে, সেই জয়ী হবে। তিনি বলেন, ভোট দিতে জনগণ আসবে, তাদের বাধা দেওয়া, তাদের খুন করা—এটার অধিকার কারও নেই। এটা বাংলাদেশের কেউ মানবে না। উপস্থিত জনতাকে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি
বলেন, কারা কারা ৭ জানুয়ারি নৌকায় ভোট দেবেন, হাত তুলে দেখান এবং ওয়াদা করুন। এ সময় উপস্থিত সবাই হাত তুলে ওয়াদা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, এই নৌকায় ভোট দিয়ে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। আবার নৌকা যখন ক্ষমতায় এসেছে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। এ নৌকা নূহ নবীর নৌকা। এ নৌকায় কিন্তু মানব জাতিকে রক্ষা করেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে মঞ্চে ওঠেন। ৪টা ২৩ মিনিটে বক্তৃতা শুরু করেন। বক্তব্য দেন ৪টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আবার আসিব ফিরে এই সিলেটে’।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে দেশে অরাজকতা শুরু করেছে। তারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। নারী-শিশু, পুলিশ, সাংবাদিক সবার ওপর হামলা করছে। আমি মনে করি, মানুষ তাদের কখনো মেনে নেবে না। তিনি বলেন, মানুষ এত শান্তিতে ছিল। আজ এত কষ্টের পরও, কভিড-১৯-এর অতিমারি, ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন সব কিছুর পরও আমরা অর্থনীতির চাকা ধরে রেখছি, ভর্তুকি দিয়ে দিয়ে তাদের খাবার দিচ্ছি। আমরা সব রকম ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। রাস্তাঘাট সব কিছুই তো উন্নতি করেছি। কিন্তু কোথায়, কোন জায়গাটা আমরা বাদ রেখেছি যে, আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নাম দিয়ে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে?
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস। আমেরিকা আমাদের এই সম্পদ গ্যাস ক্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল আমাকে। কিন্তু আমি এতে রাজি হইনি। আমি বলেছি, আমার দেশের জনগণের কল্যাণে এগুলো ব্যবহার করব। ৫০ বছরের গ্যাস মজুত রেখে অবশিষ্ট থাকলে বিক্রি করব। কিন্তু জনগণ যাদের ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করেছিল, সেই বিএনপি আমেরিকাকে গ্যাস বিক্রয়ের মুচলেকা দিয়ে আবার ক্ষমতায় যেতে চায়। তিনি আরও বলেন, আল্লাহ জন বুঝে ধন দেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে যেসব স্থানে পরীক্ষা করে গ্যাস পায়নি, আওয়ামী লীগের আমলে সেসব স্থানেই গ্যাসের সঙ্গে তেলও পাওয়া গেছে। বিএনপির আমলে মিললে এসব তারা লুটেপুটে খেত, কিন্তু আমরা এসব সম্পদ জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করছি।
সিলেটের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিলেটে ক্বিন ব্রিজের পাশে আরেকটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। সিলেটবাসীও মেট্রোরেল পাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শহর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনের সমীক্ষা করে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সুরমা নদী ড্রেজিং করা হচ্ছে। কুশিয়ারা, মনুসহ অন্য নদীগুলোও ড্রেজিং করা হবে। হাওরপাড়ের মানুষের মৎস্য সম্পদ আহরণের জন্য হ্যাচারি নির্মাণ করা হবে।
এর আগে হজরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে দেশে অরাজকতা শুরু করেছে। তারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। তিনি বলেন, আমার বার্তা একটাই—সেটা দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। যে স্বপ্নটা আমার বাবা দেখিয়েছেন, সেটাই করতে চাই। আমার একটাই কথা, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের কল্যাণ হয়। তিনি বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি, এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষের সব চাহিদা পূরণ করা হবে। কেউ গৃহহীন থাকবে না, কারও দুঃখ থাকবে না।
বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে গতকাল সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। ছোট বোন শেখ রেহানাও তার সঙ্গে ছিলেন। বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের অভ্যর্থনা জানান। দুপুর ১টার দিকে বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে হযরত শাহজালাল (র.) মাজার জিয়ারত ও পরে হযরত শাহপরান (র.) মাজার জিয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী। সার্কিট হাউসে দুপুরের খাবার খেয়ে জনসভাস্থলে যান তিনি।
লোকে লোকারণ্য জনসভাস্থল: লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ। সকাল থেকে মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে আসতে শুরু করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের নেতাকর্মীরা আসেন। জনসভার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় দুপুর ১টায়।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেসা হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেট-৬ আসনের নৌকার প্রার্থী ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও অভিনেত্রী তারিন জাহানসহ কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা।
এ সময় মঞ্চে ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বাহাউদ্দিন নাছিম, মাহবুবুউল-আলম হানিফ, শেখ হেলাল এমপি প্রমুখ।