নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) প্রধান মুফতি জসীমুদ্দীন রাহমানী জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন। গত রোববার গাজীপুরের কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
রাহমানী ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন হত্যা মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও সাইবার সিকিউরিটি আইনে দায়ের আরও পাঁচটি মামলা বিচারাধীন। এসব মামলার মধ্যে একটিতে তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে। অন্য পাঁচটি মামলায় তিনি জামিনে আছেন।
পুলিশ ও কারা সূত্র জানায়, রাহমানী সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে একটি মামলায় জামিন পান। এর আগে বরগুনা জেলার একটি, রাজধানীর গুলশান থানা, উত্তরা পশ্চিম থানার একটি করে এবং মোহাম্মদপুর থানার দুটি মামলায় জামিন নেন তিনি।
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা গতকাল সোমবার কালবেলাকে বলেন, জসীমুদ্দীন রাহমানী নামের ওই বন্দিকে রোববার কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর আগে তার জামিন আদেশ কারাগারে পৌঁছলে যাচাই করে দেখা যায়, অন্য কোনো মামলায় তার আটকাদেশ নেই। পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
শীর্ষ এই জঙ্গি নেতার কারামুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের জঙ্গি দমন ইউনিট কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘জসীমুদ্দীন রাহমানীর বাইরে থাকাটা আমাদের জন্য বড় হুমকি।’
২০১৩ সালের ১২ আগস্ট বরগুনা শহরের উপকণ্ঠে দক্ষিণ খাজুরতলা এলাকার জলিল মাস্টারের বাড়ি থেকে গোপন বৈঠক চলাকালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমুদ্দিন রাহমানীসহ ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডে তাকে গ্রেপ্তার দেখায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পল্লবীতে বাসার সামনে রাজীবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই
মামলায় ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর রায়ে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের দুই জঙ্গিকে ফাঁসি, চারজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, একজনকে তিন বছরের এবং এবিটি প্রধান জসীমুদ্দীন রাহমানীকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন নিম্ন আদালত। রাজীব হত্যায় উসকানিদাতা হিসেবে রাহমানীর সাজা হয়েছিল। পরে উচ্চ আদালতেও ওই সাজা বহাল থাকে। এরই মধ্যে তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে।
জসীমুদ্দীন রাহমানীর বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার দক্ষিণ হেউলিবুনিয়া গ্রামে। তিনি বরগুনা শহরের ইসলামিয়া হাফেজি মাদ্রাসা থেকে হাফেজি পাস করে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জামেয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৯০ সালে প্রথম দাওরা পাস করে তিনি ভারতের দেওবন্দে পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তী সময়ে হায়দরাবাদের সাবেলুস সালাম মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন।
পরে তিনি ঢাকা ও বরিশালের বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা এবং মসজিদের খতিব হিসেবেও চাকরি করেন। কয়েক বছর সৌদিতে অবস্থানের পর দেশে ফিরে প্রথমে ধানমন্ডির একটি মসজিদের খতিব হন। এরপর তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলায় ‘মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া’ নামের একটি এনজিওর পরিচালক হন। এই প্রতিষ্ঠান ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে রাহমানী ওয়াজ, জুমার নামাজের খুতবা, পুস্তিকা ছাপিয়ে ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে উগ্র মতবাদ প্রচার এবং তরুণদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ করেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল।