সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার আসামি বকুল মিয়া। ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পাঁচ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও মহানগর দায়রা জজ আদালতে একাধিকবার তার জামিন চেয়ে আবেদন করলে তা নামঞ্জুর হয়। ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান। রাষ্ট্রপক্ষ এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট আবেদন খারিজ করে আসামি বকুলের জামিন বহাল রাখেন চেম্বার আদালত। এর সাড়ে পাঁচ বছর পার হলেও হাইকোর্ট থেকে বিচারিক আদালতে সেই আদেশ এসে পৌঁছায়নি। তবে বাসার দারোয়ান পলাশ ও সাগরের বন্ধু তানভীর হাইকোর্ট থেকে জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন। আসামি বকুলসহ ছয় আসামি কারাগারে রয়েছেন।
বকুলের আইনজীবী আব্বাস উদ্দিন মাতুব্বর কালবেলাকে বলেন, ২০১৬ সালে হাইকোর্ট থেকে আসামি বকুল জামিন পান। ২০১৮ সালে রাষ্ট্রপক্ষের জামিন স্থগিতের আবেদন খারিজ করে দেন চেম্বার বিচারপতি। তবে হাইকোর্ট থেকে জামিনের অর্ডার এখন পর্যন্ত বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়নি। যে কারণে তার জামিননামা জমা দিতে পারেনি।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনির লাশ পাওয়া যায়। সাগর তখন মাছরাঙা টিভিতে সাগর আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। এ মামলায় আট আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কেউ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। ডিএনএ পরীক্ষায় তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর বনানী থানার একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার থাকা পাঁচ আসামি মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুণ, রফিকুল ইসলাম এবং আবু সাঈদকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে এ মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড নেওয়া হয়। ওইদিনই গ্রেপ্তার আসামি রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান ও বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পালের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি অপর দারোয়ান আসামি এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আট দিনের রিমান্ড শেষে ওই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর থেকে এনাম কারাগারে রয়েছেন। ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. নিজামুল হক ও বিচারপতি এস এইচ মো. নূরুল হুদা জায়গীরদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তানভীর রহমানকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। রাষ্ট্রপক্ষ এ জামিনাদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করে। ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর তার জামিন বহাল রাখেন চেম্বার বিচারপতি। এ ছাড়া ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ আসামি নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পালের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেন। এর ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। ওই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পলাশের জামিন স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি। পরে তিনি জামিনে কারামুক্ত হন।
তবে ছেলে বকুলের কারামুক্তি না হওয়ায় হতাশ তার মা সুফিয়া খাতুন। তিনি কালবেলাকে বলেন, ১২ বছর ধরে আমার একমাত্র ছেলে জেলে রয়েছে। ছেলের কামাই খেতে পারলাম না। আমাকে সহযোগিতা করার মতো কেউ নাই। কোনো কর্ম নেই, টাকা পয়সা নেই। আইনজীবীকেও খরচ দিতে পারি না। আমার একটাই চাওয়া আমার ছেলের জামিন দিক, না হয় বিচার হোক।
আদালতের শেরেবাংলা থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপপরিদর্শক জালাল উদ্দিন বলেন, আসামি বকুলের জামিনের বিষয়ে হাইকোর্টের কোনো আদেশ আমরা পাইনি। জামিনের আদেশ পেলে আমরা জামিননামা গ্রহণ করব।