পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই ‘১০০ কর্মদিবসের অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা’ ঘোষণা করেন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা জানান মন্ত্রী। তার ঘোষণার পর মন্ত্রণালয়ের শাখা, অধিশাখা, অনুবিভাগ ও দপ্তর-সংস্থার কাছে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের রূপরেখা চাওয়া হয়। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে মাত্র দুটি শাখা ছাড়া অন্যরা রূপরেখা দেয়নি। এজন্য তাদের তাগাদা দিয়ে ফের চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখা-২।
সূত্র জানায়, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থাগুলোর অনেক কর্মকর্তাই নতুন মন্ত্রীর সঙ্গে একাত্ম হতে পারছেন না। কারণ অবৈধ ইটভাটা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সঙ্গে অনেকেরই অবৈধ স্বার্থ জড়িত। ফলে এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের মনোযোগ কম। এজন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পরও ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের রূপরেখা পাওয়া যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন-২ শাখা) জেসমিন নাহার কালবেলাকে বলেন, ‘যাদের কাছে রূপরেখা চেয়েছি, তারা তা দিচ্ছেন। আমরা শুধু তাদের তাড়া দিয়ে আরেকটি চিঠি দিয়েছি। আজকেও (গতকাল) অনেকে রূপরেখা জমা দিয়েছেন। এটাকে নিগেটিভলি (নেতিবাচক) দেখার সুযোগ নেই।’
পরিবেশমন্ত্রীর ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা চেয়ে গত ৩১ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন সব দপ্তর-সংস্থাকে চিঠি দেয় প্রশাসন-২ শাখা। ৭ কার্যদিবসের মধ্যেই রূপরেখা পাঠাতে বলা হয়। সেই ৭ কার্যদিবস শেষ হয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু মাত্র মন্ত্রণালয়ের দুটি শাখা বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে রূপরেখা দিয়েছে। বাকি দপ্তর সংস্থা ও শাখা-অধিশাখা কিংবা অনুবিভাগ তাদের রূপরেখা দেয়নি। এ অবস্থায় তাদের তাগাদা দিয়ে গতকাল সোমবার নতুন করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তাদের কেউ কেউ অভিযোগ করে বলছেন, মন্ত্রণালয় কিংবা
দপ্তর-সংস্থার অনেকেই নতুন মন্ত্রীর এ কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে একমত হতে পারছেন না। ফলে তারা এ কর্মপরিকল্পনায় সাড়া দিচ্ছেন না বলে তাদের মনে হচ্ছে।
নতুন করে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘১০০ কর্মদিবসের অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা’ এর মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কাজগুলো সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শাখা/ অধিশাখা/ অনুবিভাগ এবং দপ্তর/সংস্থাভিত্তিক বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের রূপরেখা/ পরিকল্পনা প্রণয়ণপূর্বক প্রশাসন-২ শাখায় পাঠাতে অনুরোধ জানানো হলেও প্রশাসন-১ এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ-১ (পদূনী-১) শাখা ছাড়া বাস্তবায়নের রূপরেখা বা পরিকল্পনা পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবশ্যিকভাবে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের রূপরেখা/ পরিকল্পনা পাঠাতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বিদেশে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাই এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আর মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফাহিনা আহমেদকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন সাতটি দপ্তর-সংস্থা রয়েছে। এগুলো হলো—পরিবেশ অধিদপ্তর, বন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ রাবার বোর্ড। এর মধ্যে ১০০ কর্মদিবসের অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনার বেশিরভাগ কাজই পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সবচেয়ে বেশি কাজ করতে হবে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।
১০০ কর্মদিবসের পরিকল্পনায় যা আছে
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদে পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ এবং উন্নয়নকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নির্বাচনী ইশতেহারে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও পরিবেশ সুরক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এজন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছেন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। ২৫ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুনের মধ্যে এসব অগ্রাধিকার বাস্তবায়ন করতে চান তিনি। বায়ুদূষণ, প্লাস্টিক দূষণ, পাহাড় কাটা, জলাধার ভরাট রোধসহ পরিবেশ সুশাসনের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান মন্ত্রী। কিন্তু তার মন্ত্রণালয় ও পরিবেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত অন্যান্য মন্ত্রণালয় কিংবা দপ্তর-সংস্থা যৌথভাবে কাজ করতে না পারলে পরিবেশ সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।