১৪ মাস আগে রাজধানীর ওয়ারী থানাধীন এলাকায় অবৈধ মাদকের খবরে অভিযানে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। সেখান থেকে বিদেশি মদের পাশাপাশি ৮০৮ ভরি স্বর্ণালংকার জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে। তদন্তে ২৭৪ ভরি স্বর্ণালংকার ক্রয়ের ‘অস্পষ্ট’ তথ্য পেলেও অবশিষ্ট স্বর্ণের কোনো তথ্য পাননি তদন্ত কর্মকর্তা। মামলার তদন্ত শেষে আসামি মো. হানিফ ও তার ছেলে আসিফ হানিফ চিন্টুকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তবে বাবা ও ছেলে নিজ জিম্মায় জব্দকৃত স্বর্ণালংকার চেয়ে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।
গত ২৯ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবি তেজগাঁও বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ, গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিমের উপপরিদর্শক মো. আল ইমরান আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলাটির অভিযোগ প্রমাণে ১৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছি। আদালত চার্জশিট গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
আদালত ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মামলায় জব্দকৃত আলামত সর্বমোট ৮০৮ ভরি ১২ আনা স্বর্ণালংকার নিজেদের জিম্মায় চেয়ে গত ৭ নভেম্বর বিবাদীপক্ষ আদালতে আবেদন করে। আদালতের আদেশ পেয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসব স্বর্ণের সঠিক মালিকানা যাচাই-বাছাই ও কর প্রদান বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনায় ৮০৮ ভরি ১২ আনা স্বর্ণালংকারের বিপরীতে আনুমানিক ২৭৪ ভরি অলংকারের ক্রয়-সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে। স্বর্ণালংকার প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে বিক্রয়-সংক্রান্ত ক্যাশমেমোর সত্যতা স্বীকার করলেও কোনো প্রতিষ্ঠানই উল্লিখিত ক্যাশমেমো ও অর্ডারের বিপরীতে কোনো কার্বন কপি (মেমো বই) দেখাতে পারেনি। ৮০৮ ভরি ১২ আনা অলংকারের কর আয়কর রিটার্নে বৈধভাবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বিবাদীপক্ষ আদালতে পেশ করা জুয়েলারি ক্রয়ের ক্যাশমেমোর যথাযথ তথ্য যাচাই-বাছাই করে আনুমানিক ২৭৪ ভরি অলংকারের ক্রয়-সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায় এবং অবশিষ্ট অলংকারের ক্রয়-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তারা (বাদীপক্ষ) প্রদর্শন করতে পারেনি। সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জব্দকৃত স্বর্ণালংকার আসামির জিম্মায় প্রদানের আদেশ দেন।
২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর গোয়েন্দা পুলিশ সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারে আসামির বাসায় অবৈধভাবে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য মজুত রয়েছে। বাসায় অভিযান চালিয়ে মো. হানিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন মাদকদ্রব্য মজুত রাখার কথা স্বীকার করেন হানিফ। এ সময় তার দেখানো মতে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন ব্রান্ডের ৩৩ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ির দোতলায় থাকা হানিফের ছেলে আসিফ আগেই পালিয়ে যান। পরে দোতলায় গিয়ে সবার সামনে পুলিশ সিন্দুক থেকে ৮০৮ ভরি ১২ আনা অলংকার জব্দ করে। এ ঘটনায় ৪ ডিসেম্বর ডিবির পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজধানীর ওয়ারী থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। বিশেষ ক্ষমতা আইনে হানিফ ও তার ছেলে আসিফকে এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় হানিফকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তারের পর আসামি হানিফকে কারাগারে পাঠানো হয়। এক মাসের মাথায় গত বছরের ৩ জানুয়ারি তিনি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিনে কারামুক্ত হন। এ ছাড়া এ মামলার এজাহারনামীয় আসামি আসিফ গত বছরের ৫ জুন উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। বর্তমানে তারা জামিনে।
আদালতের ওয়ারী থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) রনপ কুমার বলেন, এ মামলায় আদালতে চার্জশিট জমা হয়েছে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে এ চার্জশিট উপস্থাপন করা হবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম কিবরিয়া জুবায়ের কালবেলাকে বলেন, এ মামলার জব্দকৃত স্বর্ণালংকার বিবাদীপক্ষ জিম্মায় পেয়েছে। এসব স্বর্ণের কর প্রদান করা হয়েছে। এগুলো ব্যবহার্য স্বর্ণালংকার, এটা নিয়ে মামলা হওয়া ঠিক হয়নি। এ মামলার তদন্তে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু দুই আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে ডিবি পুলিশ। আমাদের প্রত্যাশা তারা মামলা থেকে অব্যাহতি পাবেন।