

‘মিনিস্ট্রি অডিটে ঘুষের রেট এক মাসের বেতন’ সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক কালবেলা। গত রোববার এই প্রতিবেদনে ঘুষের চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘুষের তথ্য যাচাইয়ের জন্য পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে দপ্তরটির যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ইদ্রিস আলীকে। অন্য দুই সদস্য হলেন- উপপরিচালক সাহানুল কবির এবং শিক্ষা পরিদর্শক আফরুজ জামান।
কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে ডিআইএর ভেতরেই কয়েকজন কর্মকর্তা অবশ্য তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
তাদের মতে সঠিক তদন্তের স্বার্থে নিজ দপ্তরের বাইরের একজন বা দুজন কর্মকর্তাকে কমিটিতে রাখা উচিত ছিল। কারণ অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য ও শাস্তিমূলক সুপারিশ করা কঠিন হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক এমএম সহিদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘কমিটিকে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে প্রকৃত সত্য বের করতে বলা হয়েছে। আশা করি তারা সেটি পারবেন। বাইরের সদস্য রাখার প্রসঙ্গে তিনি জানান, ডিআইএ সারা দেশে হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তদন্তের সক্ষমতা রাখে এবং এই তদন্তও করতে পারবে।
কালবেলার প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সারাদেশে কর্মরত হাজার হাজার শিক্ষকের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অসংখ্য শিক্ষক প্রতিবেদনটি নিজেদের ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
শিক্ষকরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানান, এই ঘুষ গ্রহণ নতুন কোনো ঘটনা নয়। তাদের ভাষ্যমতে, ‘যুগের পর যুগ মিনিস্ট্রি অডিটের নামে শিক্ষকদের কাছ থেকে এক মাসের বেতন নেয় কর্মকর্তারা কিন্তু কেউ মুখ খোলেনি। চাকরির ভয়ে কিছু বলতে পারি না। এবার এই ঘুষ বন্ধ করতে হবে।
কালবেলার প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা দেশে ৩৭ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অডিট করার নামে দপ্তরের ১৬ কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ডিআইএ কর্মকর্তাদের এই পরিদর্শন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পরিচিত মিনিস্ট্রি অডিট নামে। এই অডিটের নামে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এক মাসের বেতন নেওয়া হচ্ছে ঘুষ হিসেবে। কোথাও কোথাও দুই মাসের বেতনের সমপরিমাণ টাকাও দাবি করা হয়েছে। মোট ৩০ কর্মকর্তার মধ্যে ১৬ জনের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এই সিন্ডিকেটের রাজা বলা হয় পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদকে।
আলোচিত এই অফিসার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন শিক্ষা ভবনে শেখ হাসিনার পক্ষে স্লোগান দেওয়া এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে খুনি বলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মিছিলে অংশ নেওয়া অন্য কর্মকর্তারা বদলি হলেও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। আলোচিত পলাতক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের স্ত্রী অপসারিত অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানার হাত ধরে তিনি ডিআইএতে পদায়ন পান।
মনিরুলের ভগ্নিপতি শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা কাজী সাইফুদ্দীনের সঙ্গে ফরিদপুরের সারদা সুন্দরী কলেজে চাকরি করার সুবাদে তারা দুজন একসঙ্গে কাজী কনস্ট্রাকশন নামে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেছেন।
শিক্ষা সচিবের কাছে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, পরিদর্শক আজাদ মনিরুলের অবৈধ টাকা দেখাশুনা করছেন। এমনকি বসুন্ধরা এলাকায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণের টাকা আজাদের মাধ্যমে গিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সারদা সুন্দরী কলেজে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলায় ওই সময় কয়েকজন শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পর উল্টো সেই শিক্ষকদের শোকজ করানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মন্তব্য করুন