

দুধ আর মধু— দুটি উপাদানই বহু প্রজন্ম ধরে আয়ুর্বেদ এবং ঘরোয়া টোটকায় ব্যবহার হয়ে আসছে। ঘুমের সাহায্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হাড়ের স্বাস্থ্য— সব কিছুর জন্য গরম দুধে মধু মেশিয়ে খাওয়ার চল বহু পরিবারে দেখা যায়। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কি সত্যিই উপকারী, নাকি কিছু ঝুঁকি রয়েছে?
এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। চলুন তাদের বিশ্লেষণ দেখে নিই—
গরম দুধে মধু মেশানোর উপকারিতা
১. ভালো ঘুমের সহায়ক
গরম দুধে মধু মিশালে অনিদ্রা দূর হতে সাহায্য করে। কারণ দুধে থাকা ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড মেলাটোনিন হরমোনে রূপান্তরিত হয়, যা ঘুমকে উদ্দীপিত করে। মধুর প্রাকৃতিক চিনি ট্রিপটোফ্যানকে সহজে মস্তিষ্কে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
২. হাড়ের স্বাস্থ্য
দুধ ক্যালসিয়ামের একটি চমৎকার উৎস। মধু এই ক্যালসিয়ামের শোষণে সহায়তা করে, ফলে হাড়ের ঘনত্ব বজায় থাকে।
৩. গলার আরাম
ঠান্ডা বা কাশির সময় গরম দুধে মধু মিশিয়ে খেলে গলায় আরাম আসে এবং কফ দূর হয়।
৪. হজমের উন্নতি
মধু প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এটি পেটের উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে সক্রিয় রাখে, ফলে হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে।
ঝুঁকি ও বিতর্ক
১. আয়ুর্বেদিক মতবাদ
আয়ুর্বেদ অনুযায়ী মধুকে উচ্চ তাপমাত্রায় গরম করা উচিত নয়। কারণ এতে মধুর আণবিক গঠন পরিবর্তিত হয়ে টক্সিন (‘আম’) তৈরি হতে পারে, যা হজমতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।
২. পুষ্টিগুণ নষ্ট হওয়া
আধুনিক বিজ্ঞানও বলে, ৬০-৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় মধু গরম করলে এর এনজাইম, ভিটামিন সি এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া HMF নামক যৌগ কিছুটা বেড়ে যেতে পারে, তবে সাধারণ গরম দুধে মেশালে এটি ক্ষতিকর নয়।
নিরাপদ ব্যবহারের নিয়ম
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ : দুধ ফুটন্ত গরমের আগে খেতে উপযুক্ত তাপমাত্রায় আসলে মধু মেশান।
কাঁচা মধু ব্যবহার : প্রক্রিয়াজাত মধুর চেয়ে কাঁচা বা প্রাকৃতিক মধু ব্যবহার করুন।
সতর্কভাবে খেলে গরম দুধে মধু মিশিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যকর, বিশেষ করে রাতের ঘুমের জন্য। তবে ফুটন্ত গরম দুধে মধু মেশানো এড়ানোই ভালো।
মন্তব্য করুন