নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস। শহর কিংবা গ্রামের প্রতিটি ঘরে এখন অন্তত একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। দেশের প্রতি পাঁচজনের একজন রোগটি বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ রোগী জানেন না, তাদের ডায়াবেটিস। অন্যান্য জটিলতা নিয়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়ে জানতে পারেন এ রোগে আক্রান্তের কথা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চের সমীক্ষায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ বুধবার বাডাসের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও জাতীয় ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য—‘ডায়াবেটিস প্রতিরোধের এখনই সময়’।
ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আইডিএফ) বরাত দিয়ে বাডাস জানিয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তার মধ্যে প্রায় অর্ধেক নারী। তাদের মধ্যে আবার অর্ধেক মানুষ জানেন না তার ডায়াবেটিস। এ ছাড়া বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের প্রতি ১০০ জনের ২৬ জন নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে আবার ৬৫ শতাংশ নারী পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারী ও গর্ভস্থ শিশুদের পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের আশঙ্কা বেশি। পরিকল্পিত গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
তাদের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, শারীরিক পরিশ্রম না করলে, নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে, স্বাভাবিকের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে, অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি রোগটি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে পক্ষাঘাত, হৃদরোগ, পায়ে পচনশীল ক্ষত, অন্ধত্ব ও কিডনি-সংক্রান্ত জটিলতার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। আশার দিক হলো, নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সম্পর্কে দেশের মানুষকে জানাতে পারলে এবং সাধারণ মানুষ ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারলে রোগটি অনেকাংশে প্রতিরোধ সম্ভব।
বাডাসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। শহর অঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামেও এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বারডেমে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন। আমরা সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। বারডেমে ৩০ শতাংশ শয্যা ও পরীক্ষা গরিব রোগীদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সরকার বাডাসের পরামর্শে টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীদের বিনামূল্যে ইনসুলিন প্রদান শুরু করেছে।
তিনি বলেন, অপর্যাপ্ত শরীরচর্চা এবং ফাস্টফুড নির্ভর খাদ্যাভ্যাসসহ অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনের জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস এবং জিনগত কারণসহ অনেক কারণ ডায়াবেটিস রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি আমরা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করি, তাহলে ৭৫ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারি। ২৫ শতাংশ রোগী স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
দিবসের কর্মসূচি: বাডাসের আয়োজনে আজ সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর শাহবাগ বারডেমের পাশে ওভারব্রিজের নিচ থেকে জাতীয় টেনিস ক্লাবের গেট পর্যন্ত ‘সচেতনতামূলক স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান’ কর্মসূচি পালন করা হবে। দুপুর ১২টায় বারডেম অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাডাসের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। অনুষ্ঠানে আদর্শ ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে অভিনন্দনপত্র ও ক্রেস্ট প্রদান করা হবে। এ ছাড়া বারডেমের ডেন্টাল সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরীর ডায়াবেটিস ও মুখের স্বাস্থ্য গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হবে।
সকাল ১০টায় বারডেম অডিটোরিয়ামে (তৃতীয় তলা) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে আলোচনা এবং প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বারডেম ক্যাম্পাস এবং এনএইচএন ও বিআইএইচএসের বিভিন্ন কেন্দ্র সংলগ্ন স্থানে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে ‘কান্তি’র বিশেষ প্রকাশনা, সচেতনতামূলক লিফলেট ও পোস্টার বিতরণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত (চতুর্থ তলা) হ্রাসকৃতমূল্যে হার্ট ক্যাম্পেরও আয়োজন করা হয়েছে। বারডেম ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগ ও বারডেম নার্সিং কলেজ এ উপলক্ষে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করবে।