ঢাকা কাস্টম হাউসের স্বর্ণ চুরির ঘটনা তদন্তে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। প্রায় ৬১ কেজি স্বর্ণ গায়েবের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভয়ভীতি দেখান। পরে ইনভেন্টরির নাম করে দুই গুদাম কর্মকর্তারা কর্তৃপক্ষের পরামর্শে চুরির নাটক সাজান। গুদামের ভেতরে ঢুকে নতুন লকার ভাঙেন দুই শুল্ক কর্মকর্তা। সেইসঙ্গে পাশে একটি সুড়ঙ্গও করেন। যাতে মনে হয় স্বর্ণ চুরি হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা কাস্টম হাউসের দুই গুদাম কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম সাহেদ নতুন দুই কর্মকর্তা আকরাম শেখ ও মাসুম রানাকে চাবি বুঝে নিতে চাপ দেন। তবে গুদামের পণ্য বুঝিয়ে না দিলে তারা চাবি নিতে অস্বীকৃতি জানান। ১ সেপ্টেম্বর গুদামের ইনভেন্টরি শেষে সন্ধ্যা ৬টায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চলে গেলেও পরিষ্কারের অজুহাতে গুদামে অবস্থান করেন গুদাম কর্মকর্তারা। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে লকার ভাঙাসহ চুরির নাটক সাজান সহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম। তখন গুদামের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন নতুন নিযুক্ত হওয়া দুই শুল্ক কর্মকর্তা আকরাম শেখ ও মাসুম রানা। পরের দিন সকাল ৮টায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে বলেও পরিকল্পনা করেন এ চার কর্মকর্তা। ২ সেপ্টেম্বর গুদামের লকার ভাঙা এবং গুদামের ভেতরে এসির কাছে সুড়ঙ্গ দিয়ে স্বর্ণ চুরি হয়েছে বলে জানান গুদাম কর্মকর্তারা। এর আগে গুদামে যেসব আনক্লেইম অর্থাৎ যেসব স্বর্ণ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত বা ডিটেনশন মেমো (ডিএম) হয়নি, এসব থেকে একটা একটা করে নিয়ে যেতেন সহিদুল ও সাহেদ। আর নতুন কর্মকর্তারা এসব স্বর্ণের রেজিস্টার করা হচ্ছে না কেন, এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সাহেদ পরের দিন দেখাবে বলতেন। তবে পরের দিন আর এ স্বর্ণগুলো গুদামে জমা দেননি সাহেদ ও সহিদুল। পিবিআইর তদন্তে এসব বিষয় উঠে এসেছে।
সূত্র আরও জানায়, গুদামের স্বর্ণ গায়েবের ঘটনা নিয়ে গত ১০ আগস্ট থেকে নানা ধরনের আলোচনা ছিল।
২২ আগস্ট কালবেলায় স্বর্ণ গায়েব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ আগস্ট বৈঠক করেন ঢাকা কাস্টম হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেই সময় গুদামের চাবি নিয়ে নতুন নিয়ম চালু করা হয়। গুদামে কর্মরত আগের বা পুরোনো কর্মকর্তাদের কাছেই চাবি থাকবে, এ সিদ্ধান্তের পর থেকে সহিদুল ও সাহেদের কাছেই মূলত গুদামের চাবি ছিল। এ চাবি বিনা প্রশ্নে বুঝে নেওয়ার জন্য তাদের চাপ দিতে থাকেন তারা। পরে তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার ইমতিয়াজ (বর্তমানে ডিএস পুলে) আকরাম শেখ ও মাসুম রানাকে চাবি নেওয়া না নেওয়া নিয়ে ধমক দেন। বলেন, বিষয়টি নিয়ে মাতামাতির প্রয়োজন নেই। যার চাবি সময়মতো তার কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেন।