ইসরায়েলের আগ্রাসন, দখল ও গণহত্যার বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এখন আর শুধু স্লোগান, বিবৃতি বা নিন্দা জানানোর সময় নয়। যদি মুসলিম দেশগুলো এই মুহূর্তে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান না নেয়, তবে ইতিহাস তার কঠিন বিচার করবে।
আরাকচি সতর্ক করে বলেন, ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন কেবল ফিলিস্তিনের জন্য নয়, গোটা মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য ভয়ংকর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ইসরায়েলের আগ্রাসন রুখতে শুধু মুখের প্রতিবাদ যথেষ্ট নয়।
জেদ্দায় মুসলিম দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরি বৈঠকের প্রাক্কালে তিনি বলেন, এবার বৈঠকের প্রতি বৈশ্বিক মনোযোগ রয়েছে। বিশেষত ইসরায়েলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ড মুসলিম বিশ্বের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ইসরায়েল গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছে। নারী-শিশুদের ওপর ভয়াবহ গণহত্যা চালানো হচ্ছে, মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে, ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষকে গণহত্যার হাতিয়ার বানানো হচ্ছে। এমনকি খাদ্য বিতরণকেন্দ্রগুলোকে ক্ষুধার্ত নারী-শিশুর জন্য মৃত্যুফাঁদে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের অপরাধ শুধু গাজায় সীমাবদ্ধ নয়। পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ, জেরুজালেমকে ইহুদিকরণ, লেবানন ও ইয়েমেনে হামলা, সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা, এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ওপর সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে এক হাজারেরও বেশি বেসামরিক মানুষ হত্যা- এসবই প্রমাণ করে ইসরায়েল সমগ্র অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক হুমকি।
আরাকচি অভিযোগ করেন, কিছু পশ্চিমা শক্তি বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অব্যাহত সমর্থন দিয়ে এই অপরাধযজ্ঞে শরিক হয়েছে। এর ফলে শুধু মুসলিম বিশ্বই নয়, গোটা বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) আসন্ন বৈঠক মুসলিম দেশগুলোর সম্মিলিত সংকল্পকে শক্তিশালী করবে। এ বৈঠক যদি নিরপরাধ মানুষ হত্যা ও ভূমি দখল রোধে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তবে তা নেতানিয়াহু ও তার সরকারের অতৃপ্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা দমন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরিয়ে দেবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমাদের ধর্মীয় ও মানবিক দায়িত্ব হলো গাজা ও পশ্চিম তীরে নির্যাতিত ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়ানো। এখনই সময় কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ, গণহত্যা বন্ধ করা, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা এবং ইসরায়েলের সম্প্রসারণবাদী কার্যক্রম প্রতিরোধ করার।”
তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, “স্লোগান, নিন্দা বা উদ্বেগ জানানোর যুগ শেষ। এখন মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সংহতির প্রমাণ দেওয়ার সময়। ইতিহাস আমাদের বিচার করবে- আমরা কি নির্যাতিতদের রক্ষায় এগিয়ে এসেছি, নাকি নীরব থেকেছি।”
মন্তব্য করুন