সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪, ০২:৫৪ এএম
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সাবেক নেতাদের মদদেই বেপরোয়া চবি ছাত্রলীগ

ক্যাম্পাসে অস্থিরতা
সাবেক নেতাদের মদদেই বেপরোয়া চবি ছাত্রলীগ

দিন যত গড়াচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে ততই বাড়ছে উত্তাপ। আতঙ্ক বাড়ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, সাবেক নেতাদের অস্তিত্ব ক্যাম্পাসে টিকিয়ে রাখতেই ছাত্রলীগে বারবার অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়ছেন চবির বর্তমান শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের তরুণ নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি চবি ছাত্রলীগে বারবার সংঘর্ষের কারণ খুঁজতে গিয়ে এমন তথ্যই বেরিয়ে এসেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগের অস্থিরতার পেছনে কিছু শিক্ষককে দায়ী করেছেন সাবেক নেতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপগ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষগুলো বাধছে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের মদদেই। সাবেকরা ক্যাম্পাস ছেড়ে গেলেও তাদের কর্তৃত্ব ও আধিপত্য রয়ে গেছে গ্রুপগুলোতে। এমনকি চবি ছাত্রলীগের এই গ্রুপগুলোর নেতাকর্মীদের নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে চাঁদার একটা অংশ যায় এই ‘বড় ভাই’দের কাছে। তাদের মধ্যে অন্যতম কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক বহিষ্কৃত সহ-সম্পাদক সাইফুল আলম লিমন। তিনি চবি ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিক্সটি নাইনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এখনো তার প্রভাব রয়ে গেছে গ্রুপটিতে। বলা হয়, তার দিকনির্দেশনাতেই গ্রুপটি চলছে বছরের পর বছর। বর্তমানে লিমন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগে পদ পেতে চেষ্টা করছেন। তবে তার নামে রয়েছে জোড়া খুনের মামলা।

সাইফুল আলম লিমন কালবেলাকে বলেন, ‘ভুলত্রুটি সবার আছে। কিন্তু চবি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর সাবেকদের কোনো ধরনের ভূমিকা আছে বলে আমার মনে হয় না। যদি কারও কোনো স্বার্থ না থাকে, তাহলে কোনো সাবেক নেতা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কথা বলবেন না।’ তিনি বলেন, ‘চবির রাজনীতি যেহেতু করে আসছি, সেই হিসেবে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ তো আছেই। রাজনীতির কারণে সবার সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যেতে হবে।’

আরেকজনের নাম এম এ খালেদ। যিনি চবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উত্তর জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি চবি ছাত্রলীগের উপগ্রুপ ভার্সিটি এক্সপ্রেসের (ভিএক্স) সাবেক নেতা। এখনো তিনি দলটিকে দেখভাল করছেন, নানা সুবিধা দিচ্ছেন। ভিএক্স গ্রুপের মধ্যেও রয়েছে আরও দুটি ভাগ। এর একটিতে রয়েছে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মো. রেজাউল করিমের প্রভাব। তিনি এই গ্রুপের সাবেক নেতা। তবে নেতৃত্ব ছাড়লেও এখনো পর্যন্ত তার নির্দেশেই গ্রুপটির একটি অংশ পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের মহেশখালী উপজেলা যুবলীগে পদের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন।

ভিএক্সের আরেকটি অংশে প্রভাব রয়েছে চবি ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান বিপুলের। ক্যাম্পাস ছেড়ে নিজের এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িতে বর্তমানে তিনি ঠিকাদারি হিসেবে কাজ করলেও তার বড় একটি প্রভাব রয়ে গেছে গ্রুপটিতে। তবে বর্তমানে তিনি রাজনীতিতে অতটা সক্রিয় নন।

এদিকে চবি ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিক্সটি নাইনের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুরও রয়ে গেছে বড় একটি প্রভাব। অনেকের দাবি, ছাত্রলীগের গত কমিটিতে স্বচ্ছ রাজনীতি করা একজন নেতা এই ইকবাল হোসেন টিপু। যার কারণে তার অধীনে রয়ে গেছেন গ্রুপটির অনেকেই।

শুধু বড় গ্রুপগুলোতে যে সাবেকদের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে তা-ই নয়, ছোট দলগুলোতেও রয়ে গেছে সাবেকদের প্রভাব। এর মধ্যে অন্যতম একাকার গ্রুপটি। শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মঈনুল ইসলাম রাসেল এর নেতৃত্ব দিলেও তিনি সবকিছুর জন্য ছুটে চলেন গ্রুপটির সাবেক নেতা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের বর্তমান ঊর্ধ্বতন সহকারী কাজী তানজিম হোসেনের কাছে। কাজী তানজিম হোসেনের দিকনির্দেশনাতেই চলছে গ্রুপটি। উল্লিখিত নেতাদের সবাই সাবেক সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দীনের অনুসারী বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত ছিল।

অন্যদিকে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থিত বা অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেওয়া গ্রুপগুলো অবস্থাও একই রকম। চবি ক্যাম্পাসে মূলত চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) ও বিজয় নামের দুটি গ্রুপ বর্তমানে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর নাম ভাঙায়। ওই গ্রুপের সাবেক এক ছাত্রনেতাকে ঘিরে ক্যাম্পাসে নানা গুঞ্জন রয়েছে। ক্যাম্পাসে প্রচলিত আছে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সিএফসির নেতা রেজাউল হক রুবেল তার কথাতে উঠতেন-বসতেন। এমনকি, বর্তমান নেতা সাদাফ খানও তার কাছে ধরনা দেন। তবে, এক্ষেত্রে এতদিন ব্যতিক্রম ছিল বিজয়। সাবেকদের প্রভাব ছাড়া গ্রুপটি এতদিন চলে এলেও কিছুদিন আগে সোহরাওয়ার্দী হলে থাকা বিজয়ের একাংশ গ্রুপটির নেতা, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। আর সেই সুযোগটি নেন দলটির সাবেক নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন। তিনিই এখন বিজয়ের সোহরাওয়ার্দী হল অংশটিকে শেল্টার দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এমনকি গত কয়েকদিন আগে মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে ক্যাম্পাসে সাবেক নেতা সুজনের অস্তিত্বের জানান দেয় গ্রুপটি।

অভিযোগ অস্বীকার করে চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক রুবেল কালবেলাকে বলেন, ‘অস্ত্র নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির জন্য আমরা কাজ করি। এসব রাজনীতিতে ছাত্ররা প্রতিহিংসাপরায়ণ কিংবা সংঘর্ষে জড়িয়ে যাওয়ার পেছনে কাজ করছেন শিক্ষকরা। কিছু শিক্ষক ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ভিসি-প্রক্টর তথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপে রাখার চেষ্টা করেন। একইভাবে চবির টেন্ডারসহ নানা ইস্যুতে ছাত্ররা নীরব থাকলেও শিক্ষকদের উসকানিতে অস্থির হয়ে পড়েন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনোদিন টেন্ডার বাণিজ্যসহ কোনো অনিয়মে জড়িত ছিলাম না। অনেকেই টেন্ডারের কাজ করে, কিন্তু তারা সংঘর্ষে লিপ্ত নয়। নিরপেক্ষ হিসেবে কাজ করতে চাইলেও শিক্ষকদের স্বার্থের জন্য তরুণ নেতাকর্মীরা নানাভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জীবিকার তাগিদে বের হয়ে প্রাণ হারালেন রফিকুল

হঠাৎ অসুস্থ একই স্কুলের ২২ ছাত্রী

কয়েকটি ইসলামি দলের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে : সালাহউদ্দিন 

দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোয় পরিবহনমন্ত্রীকে জরিমানা!

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে হামলাকারীদের কী সাজা হতে পারে

গকসু নির্বাচন : প্রথম দিনে ১৩টি মনোনয়নপত্র বিতরণ

ববির আবেগঘন পোস্ট

খুলনায় নদী থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার

প্রয়োজনে কেয়ামত পর্যন্ত অডিট বন্ধ থাকবে : এনবিআর চেয়ারম্যান

১ বলে ১৩ রান নিলেন ভারতের তারকা ওপেনার

১০

ডাকসু নির্বাচন / প্রচারণার প্রথম দিনই শিবিরের ব্যানার ভাঙচুর

১১

হিজাব বিতর্কে ভিকারুননিসার সেই শিক্ষিকা বরখাস্ত

১২

এই ৩ ভুল করছেন? শত চেষ্টাতেও কমবে না মেদ

১৩

একদিন পর ভেসে উঠল ইসমাইলের মরদেহ

১৪

বিশ্বে প্রথমবার মানব শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন

১৫

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই : হাসনাত

১৬

ডাকসু নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী ৪৭১

১৭

আমি বিবাহিত, ফেসবুকে প্রমাণ করার কিছু নেই : অপু

১৮

বাংলাদেশে শুরু হলো দ্বিতীয় আইসিএফপি সম্মেলন

১৯

মালয়েশিয়ায় নিবন্ধিত বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা প্রকাশ

২০
X