রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা নিয়ে আবারও সোচ্চার হতে যাচ্ছে বিএনপি। পেশাজীবীসহ সুধী সমাজের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর এ নিয়ে রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তার আগে রমজানজুড়ে ইফতার মাহফিলসহ সাংগঠনিক নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সক্রিয় করা হচ্ছে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বিএনপি এখন রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফাকে ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চাইছে। রূপরেখাটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩১ দফার প্রতিটি দফা নিয়ে সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা হবে। রাজধানী ঢাকা থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় শহরে সম্প্রসারিত হবে। সেমিনারের পাশাপাশি ছোট ভিডিও তৈরি করে রিলের মাধ্যমেও তা জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্র মেরামতের এ রূপরেখায় নতুন কিছু সংযোজনের প্রয়োজন আছে কি না, সে বিষয়ে পেশাজীবী ও সুধী সমাজের মতামত নেওয়া হবে। দলের মিডিয়া সেলের মাধ্যমে এ কার্যক্রম চালানো হবে। মিডিয়া সেলের সদস্যরা এ নিয়ে সম্প্রতি তিন দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি কালবেলাকে বলেন, ‘৩১ দফাকে আমরা নতুন করে ব্র্যান্ডিং করব। এখন আমাদের প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। ঈদের পর এটাকে আমরা তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের কাছে নিয়ে যাব।’
বিএনপির দাবি, এই ‘৩১ দফা’ হচ্ছে দেশ ও জনগণকে নিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা। অর্থাৎ বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে মানুষের জন্য কী কী করবে, সেটার একটি দলিল। দলের ২৭ দফা রূপরেখাকে সম্প্রসারিত করে গত বছরের ১৩ জুলাই এই ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা করে বিএনপি, যেটাকে তখন বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি বলা হয়েছিল। দলের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল, বিএনপি একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বিজয়ী হলে সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ বা জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। সেই ‘জাতীয় সরকার’ই রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করে রাজপথের আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। কিন্তু ‘জনগণের জন্য বিএনপির কোনো ভিশন নেই’, নির্বাচনের পরেসহ বিভিন্ন সময় সরকার ও সরকারি দলের এমন অপপ্রচারের জবাব দিতেই মূলত এখন এই উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি।
জানা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর আন্দোলনে ব্যর্থতা অনুসন্ধানে গত ১৩ জানুয়ারি যুগপৎ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। সেখানে আলোচনার এক পর্যায়ে বিএনপির ভিশন সম্পর্কিত সরকারের নানা অপপ্রচার রোধে মঞ্চের নেতাদের পরামর্শে ৩১ দফাকে নতুন করে ব্র্যান্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের দাবি ছিল, যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি ৩১ দফাকে আমরা দেশবাসীর কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারিনি। এ কাজটি যথাযথভাবে করতে পারলে সরকারের এসব অপপ্রচার মিথ্যা প্রমাণিত হবে। একই সঙ্গে বিএনপি ও বিএনপি জোটের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনাও দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার হবে।
এরপর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্যদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন দলের হাইকমান্ড। সেখানে ৩১ দফাকে নতুন করে মানুষের কাছে তুলে ধরতে মিডিয়া সেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিকে দল ও দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে সরকারের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পাশাপাশি তাদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিষয়গুলোও সুনির্দিষ্টভাবে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে চায় বিএনপি। এ ক্ষেত্রে রাজনীতি, ব্যাংকিং-বিদ্যুৎ খাত, মানবাধিকার, কর্মসংস্থান, গণমাধ্যমসহ এ রকম মোট ১০টি সেক্টরকে চিহ্নিত করা হয়। ওই বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে মিডিয়া সেলকে এই দায়িত্বও দেওয়া হয়। এ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পেপার তৈরি করতে মিডিয়া সেলের সদস্যদের দায়িত্বও বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, দলের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি সেক্টরের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। এ নিয়ে গত ৯ ও ১০ মার্চ মিডিয়া সেলের সদস্যদের সঙ্গে দলের হাইকমান্ডের ফের ভার্চুয়ালি বৈঠক হয়েছে। সেখানে সেক্টরভিত্তিক দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ সংক্রান্ত কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয় এবং দ্রুততম সময়ে তা সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এসব তথ্য-উপাত্ত লিখিতভাবে প্রস্তুত হলে তা ব্যাপকভিত্তিতে নানা প্ল্যাটফর্মে প্রচার করা হবে। এই উদ্যোগ সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সহায়ক হবে বলে মনে করছে বিএনপি।