..
দেশে ভোগ্যপণ্য নিয়ে কারসাজি নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এবার চিনি নিয়ে কারসাজি করতে গিয়ে ফেঁসে গেছে দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ আব্দুল মোনেমের মেসার্স আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি দুই ধাপে বন্ড সুবিধায় আনা প্রায় ৫ লাখ টন চিনি অবৈধভাবে অপসারণ করেছে। এতে সরকারের হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। তার পরও সরকারের পাওনা দিতে গড়িমসি করছে তারা। কিস্তিতে দেওয়ার কথা থাকলেও ৬৭৪ কোটি টাকা কোনোভাবে আদায় করতে পারছে না ঢাকা দক্ষিণ বন্ড কমিশনারেট। সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারির সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। বন্ড কমিশনারেট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বেসরকারি খাত। এই খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান মেসার্স আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি বন্ডেড সুবিধায় চিনি এনে অবৈধভাবে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে, যা বন্ডেড সুবিধার অপব্যবহার। প্রথম ধাপে ঢাকা দক্ষিণ বন্ড কমিশনারেটের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯১৯ টন চিনি ওয়্যারহাউস
থেকে অবৈধভাবে অপসারণ করে, যার প্রমাণ পেয়েছে বন্ড কমিশনারেট। এতে প্রাথমিকভাবে মামলা করা হয়। রায়ে অর্থদণ্ডসহ প্রতিষ্ঠানটির কাছে পাওনা দাঁড়ায় ৬১২ কোটি ২৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৪৪ টাকা। পাওনা আদায়ে প্রতিষ্ঠানটির আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি ব্যাংক হিসাব জব্দের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মহিউদ্দিন মোনেমের মোবাইল ফোনে বারবার ফোন দেওয়া হয়; কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে বন্ডের অপব্যবহারের বিষয়টি উল্লেখ করে খুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, প্রথম ধাপের অনিয়ম করে পার পেয়ে ফের অনিয়মে জড়িয়ে যায় নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারি। প্রতিষ্ঠানটি দ্বিতীয় ধাপে অবৈধভাবে আরও ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৩০ টন চিনি অপসারণ করে। এ ঘটনায়ও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করে বন্ড কমিশনারেট। এই মামলার রায়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে জরিমানাসহ রাজস্ব পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৮২ কোটি ৪৬ লাখ ৪২ হাজার ৮৯৮ টাকা।
দুই ধাপে প্রতিষ্ঠানটিকে অনিয়মের দায়ে অর্থদণ্ড এবং শুল্ক-করাদিসহ ১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা পরিশোধের রায় দেয় ঢাকা দক্ষিণ বন্ড কমিশনারেট, যা সুদসহ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ আদেশ জারির পর প্রতিষ্ঠানটিকে ৬ কিস্তিতে ই-পেমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধেরও সুযোগ দেয়া হয়; কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ৫৩৩ কোটি টাকা পরিশোধ করলেও বাকি ৬৭৪ কোটি টাকা পরিশোধে গড়িমসি করছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দ ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কাস্টম আইন-১৯৬৯ এর ধারা ২০২ (১)(এ)(বি)(সি)(ডি)(ই) এবং (এফ) অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ব্যাংক ও কাস্টম হাউসগুলোতে চিঠি দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ বন্ড কমিশনারেট। আইনের এসব ধারায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা থেকে প্রতিষ্ঠানটির পণ্য কোনো কাস্টম হাউস বা ওয়্যারহাউসে থাকলে, তা বিক্রয় করে সরকারের পাওনা আদায়ের বিধান রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার খালেদ মোহাম্মদ আবু হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে বন্ড কমিশনারেটের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পাওনা আদায়ে সব কাস্টম হাউস এবং ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। অর্থাৎ পণ্য খালাস স্থগিত করা হয়েছে। পাওনা আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের এসব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।