কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪, ১১:১৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কারাগার থেকে বেরিয়ে মামুনুল হকের জ্বালাময়ী বক্তব্য

শনিবার মোহাম্মদপুরে জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া মাদ্রাসায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাওলানা মামুনুল হক। ছবি : সংগৃহীত
শনিবার মোহাম্মদপুরে জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া মাদ্রাসায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাওলানা মামুনুল হক। ছবি : সংগৃহীত

কারাগার থেকে মুক্ত হয়েই জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। শনিবার (৪ মে) মোহাম্মদপুরে জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া মাদ্রাসায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দীর্ঘ সময় বক্তব্য দেন তিনি।

বক্তব্যের শুরুতে মামুনুল হক বলেন, আমি যা করছি তা দুটি পক্ষ প্রত্যক্ষ করছে। একটি পক্ষ হচ্ছে আসমানের আরেকটি পক্ষ জমিনের। আমি দোয়া চাই জমিনের এই কর্তৃপক্ষের প্রভাব থেকে আমার ওপর আসমানের কর্তৃপক্ষের প্রভাব যেন বেশি থাকে। আমি আপনাদের কাছে সেই দোয়াই চাই। আপনারা একান্তে আমার জন্য এই দোয়াটা করবেন।

তিনি বলেন, আমার সহকর্মীরা অনেক কথা বলেছেন। এখানে একটা কথা এসেছে, প্রতি ফোঁটা জুলুমের প্রতিশোধ গ্রহণ করার কথা। এই কথাটা আমি একদিকে প্রত্যাখ্যানও করি আর আরেক দিক দিয়ে সমর্থনও করি। প্রত্যাখ্যাত করি এই কারণে যে, যার আদর্শ অনুসরণে আমাদের এই কারাভোগ, আমাদের এই কারাবরণ, আমরা এই শব্দগুলো বেশি বলি। কারা নির্যাতনের কথা বলব যত কম বলা যায়। এটা কারা নির্যাতন না, মূলত এটা আসলে কারাবরণ। আমরা তো জেনে বুঝেই এই পথে পা বাড়িয়েছি। কেউ যদি মনে করে থাকে তারা জানে না, তাহলে এটা তাদের জন্য ভুল তথ্য।

হেফাজতের এই নেতা বলেন, আমরা জানি, এই পথটা কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এই পথে কখনো কখনো প্রতীকী অর্থে লালগালিচা থাকে। তবে সেই লালগালিচার লালিমাটা যতটা না গালিচার রং দিয়ে লাল হয়, তার চেয়ে বেশি লাল হয় ভাইয়ের শাহাদাতের রক্তের মাধ্যমে। শাহাদাতের রক্ত দিয়েই আমরা সেই পথে পৌঁছাব। যেই পথে শাপলা চত্বরের ভাইয়েরা রক্ত দিয়েছে। যে পথে আমার হাটহাজারির সন্তানেরা রক্ত দিয়েছেন, যে পথে বি.বাড়িয়ার ভাইয়েরা রক্ত দিয়েছেন। আমরা তাদের রক্তকে ভুলব না। আমরা কোনো সময় সেই শাহাদাত অস্বীকার করার প্রবণতাকে এক মুহূর্তের জন্যও বরদাস্ত করব না। আমার ভাই শহীদ হয়েছে, আপনারা অন্তত সরি বলেন। সেটা অন্তত অস্বীকার করার চেষ্টা করবেন না। শহীদের রক্তের সাথে গাদ্দারি করার মতো সেই বেইমান কওমি মাদ্রাসায় জন্ম হয় নাই।

তিনি বলেন, আমরা কোনো প্রতিশোধ গ্রহণ করি নাই, করতে চাই না, করার প্রবণতা যদি আমাদের মন থেকে কখনো উদ্যত হয় সেটা হলো শয়তানের প্ররোচণা। ব্যক্তিগত আক্রোশের কথা বলে থাকতে পারি কিন্তু আমরা প্রতিশোধ পরায়ণ নই। এটাই হলো মূল কথা। এই হিসেবে প্রতিশোধ শব্দটি প্রত্যাখ্যান করলাম। অন্য আরেক অর্থে আমি প্রতিশোধ শব্দটা সমর্থন করছি। শুধু সমর্থন নয়, আমি পুনর্ব্যক্ত করছি, আমরা প্রতিশোধ নেব। আমরা সেই প্রতিশোধ নেব, যেই প্রতিশোধ হিযরতের আগ পর্যন্ত ১২ বছরের জুলুম অত্যাচারে প্রতিশোধ মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে আল্লাহ নবী গ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহর নবী মক্কা বিজয়ের পরে সেই সকল অপরাধীকে ক্ষমা করার মধ্য দিয়ে আল্লাহর জমিনে দ্বীনের ঝাণ্ডা সমুন্নত করার মাধ্যমে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছিলেন।

তিনি হুঁঙ্কার দিয়ে বলেন, আমি আবার বলছি, আমি এই দেশে ভাড়াটিয়া থাকব না। এই জমিনের মালিকানাসূত্রে বসবাস করি, এই জমিনকে আল্লাহর জন্য মুক্ত করেই ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর দিনের বিজয় সেটাই হবে আমাদের মধুর প্রতিশোধ। যারা আমাদের শত্রু ভেবে আমাদের নিঃশেষ করার চেষ্টা করেছে, অপমান করার চেষ্টা করেছে, আমরা তাদের সম্মানিত করে প্রতিশোধ নেব। আমরা আমাদের আদর্শের শুনানির পথে তাদেরকে বরণ করে নেওয়ার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেব। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দান করুন।

তিনি বলেন, এখানে ভবন নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন। এসব ভবন থাকলে সেটা রক্ষা করার জন্য অনেকের কাছেই তেল মারতে হয়। ভবনও নাই তেল মারার দরকারও নাই। আজ এখানে মাদ্রাসা, কাল কেরানীগঞ্জের কোনো চরে মাদ্রাসা হবে। প্রয়োজন নাই কোনো ভবনের, প্রয়োজন নাই মাদ্রাসার কোনো স্থাবর সম্পত্তির। ওই পুরাতন যুগে ফিরে যেতে হবে আমাদের। স্থায়ীভাবে আমি এই কথা বলছি। এই বিশাল বিশাল আলিশান ইমারত সাজিয়ে তার মধ্যে বিলাসী রুম সাজিয়ে বিলাসী জ্ঞানচর্চা! আজ আমাদের বিলাসী ইলম চর্চা পেয়ে বসেছে। বিলাসী ইলম চর্চা বাদ দিয়ে সেই খেজুর গাছের তলায়, বটগাছের নিচে, ছালার চটের ওপর বসে আমাদের জ্ঞানচর্চা করতে হবে। তাহলেই আমরা কলেমার তত্ত্ব সমুন্নত করতে পারব।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।

খবর পেয়ে হেফাজতের স্থানীয় নেতাকর্মীরা রিসোর্টে গিয়ে ভাঙচুর চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় অবস্থান করেন মামুনুল হক। ১৫ দিন পর ১৮ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা থেকেই মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে মোট ৪১টি মামলা রয়েছে। সব মামলায় জামিন পাওয়ার পর কারামুক্ত হলেন তিনি। সর্বশেষ গত ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় দায়ের করা একটি মামলায় মামুনুল হক জামিন পান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সুনামগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব ২০ পরিবার

জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল ভ্যান হারিয়ে দিশেহারা পরিবার

নিউটনের ‘ভয়ংকর’ যৌন নিপীড়নের তথ্য দিল র‍্যাব

যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত

ট্রাক্টর চাপায় প্রাণ গেল শিশুর

ঢাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের মিছিল শেষে শিক্ষার্থী খুন

ছাত্রলীগ কর্মীকে বেধড়ক কোপাল প্রতিপক্ষরা

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম

অবশেষে লালমনিরহাটে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি

মিষ্টি বিতরণের ধুম / চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত

১০

উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত

১১

টানা কয়েকদিন বৃষ্টির আভাস

১২

পৃথিবীর যে স্থানে কেউ যেতে পারে না

১৩

সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় মামলা

১৪

সংগঠনের অবস্থা জানতে জেলা সফর শুরু করছে যুবদল

১৫

সৌদিতে প্রথমবার সাঁতারের পোশাকে নারী ফ্যাশন শো

১৬

তিস্তা নদীতে গোসল করতে গিয়ে কিশোরের মৃত্যু

১৭

সমুদ্রপাড়ে সিডিএ প্রকৌশলীদের ‘বারবিকিউ পার্টি’

১৮

জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে চাচার হাতে ভাতিজি খুন

১৯

পশুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

২০
X