রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৪, ০২:২৭ এএম
আপডেট : ১৭ মে ২০২৪, ০৮:২৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কর্মসূচির আগে লিয়াজোঁ কমিটি চায় বিএনপির মিত্ররা

আগামীর আন্দোলন
কর্মসূচির আগে লিয়াজোঁ কমিটি চায় বিএনপির মিত্ররা

সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন শুরুর আগে কর্মসূচি প্রণয়ন ও আন্দোলন পরিচালনায় শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি চায় বিএনপির মিত্ররা। তারা মনে করে, লিয়াজোঁ কমিটি না থাকায় বিগত আন্দোলন পরিচালনায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ছিল। কারণ, যুগপতের সব দল ও জোটের সঙ্গে বিএনপির পৃথক বৈঠক শেষে তাদের স্থায়ী কমিটিতে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়াকে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং আন্দোলনের সঠিক প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করে না শরিকরা, বিশেষ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তাই এবার এ প্রশ্নে একটা সিরিয়াস মীমাংসা চান মঞ্চের নেতারা।

বিএনপির সঙ্গে গত বুধবার রাতে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, প্রতিটি জোট ও দল থেকে একজন করে নিয়ে ১০-১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করতে হবে। সেই লিয়াজোঁ কমিটিতে আলোচনার ভিত্তিতে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণীত হবে। তার আগে নিজ নিজ দল ও জোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠকে উপস্থিত হবেন। নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ অতীতের আন্দোলনগুলোতে লিয়াজোঁ কমিটি এভাবে কাজ করেছে। কিন্তু বিগত আন্দোলনে এ প্রক্রিয়ায় কর্মসূচি প্রণীত হয়নি। পাঁচ-দশ মিনিট আগে মিত্রদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হতো এবং কর্মসূচির সঙ্গে সহমত না হলেও সেটাই তারা ঘোষণা করতেন। বৈঠক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

যুগপৎ আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করে সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে ঈদুল আজহার পর মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সেই আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে পরামর্শ নিতে গত রোববার থেকে মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এ ধরনের বৈঠক এবারই প্রথম। এর অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার এনডিএম, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং মিয়া মসিউজ্জামান ও ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়াও এর আগে গত সোমবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে সমন্বয়হীনতা দূরীকরণে যুগপতের সব দল ও জোট থেকে দু-একজন করে নিয়ে শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের ওপর জোর দেন সমমনা জোটের নেতারা।

১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন আট দল, বিএনপি নেতৃত্বাধীন সাত দল এবং বামপন্থিদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ দল মিলে এরশাদ-পরবর্তী সরকার ব্যবস্থা কী হবে, তার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেছিল। ওই বছরের ১৯ নভেম্বর ওই তিনটি জোট আলাদাভাবে সেই রূপরেখা তুলে ধরে। তিন জোটের বাইরে জামায়াতে ইসলামী তখন যুগপৎ আন্দোলনে শামিল ছিল। এর পর তিন জোটের রূপরেখার ভিত্তিতে তুমুল গণআন্দোলন শুরু হয়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন হয়।

গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ছিলেন। অন্যদিকে মঞ্চের পক্ষে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের পরিধি বাড়ছে কি না অথবা জামায়াতে ইসলামীকে একমঞ্চ কিংবা যুগপতে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে কি না, তা জানতে চায় গণতন্ত্র মঞ্চ। আদর্শিক কারণে জামায়াতকে নিয়ে তাদের বিরোধিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করে মঞ্চের নেতারা বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে ২০২২ সালে তৎকালীন ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত করে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, জামায়াতের সঙ্গে তারা আর একত্রে নেই। এমন প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র মঞ্চ যুগপৎ আন্দোলনে শামিল হয়। তাই এখন নতুন করে জামায়াতকে যুগপৎ আন্দোলনে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তাদের জন্য সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। সেজন্য আমরা চাই, যুগপৎ আন্দোলন আগের মতোই থাকুক। এ ছাড়া এই মুহূর্তে একমঞ্চ গঠনেরও বিরোধিতা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তাদের যুক্তি ছিল, একমঞ্চ বা ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে আন্দোলনের সর্বশেষ স্টেপ। এটা ব্যর্থ হলে আর কোনো কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। তা ছাড়া নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত যুগপৎ আন্দোলন মাঠেই গড়ায়নি। তবে আগামীতে আন্দোলনে বিজয়ের সম্ভাবনা দেখা দিলে তখন পরিস্থিতি ও সময়ই বলে দেবে, কী করতে হবে?

বৈঠকে উপস্থিত গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক নেতা কালবেলাকে বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামীর আন্দোলনে একমঞ্চ গঠনের পপুলার ডিমান্ড আছে। শরিকদের থেকে যুগপতের পরিধি বাড়ানোরও প্রস্তাব আছে। তবে এখন যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে নতুন কোনো মেরূকরণ হচ্ছে না। জামায়াতের সঙ্গে তাদের আনুষ্ঠানিক কোনো সম্পর্ক নেই। দলটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনার মধ্য দিয়ে সম্পর্কোন্নয়ন কিংবা যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার কোনো পরিকল্পনাও বিএনপির নেই। তবে জামায়াত পৃথকভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে থাকলে সেক্ষেত্রে বাধা দেওয়ারও কিছু নেই। তখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতের এমন অবস্থানে গণতন্ত্র মঞ্চের এবারও আপত্তি থাকবে না বলে বিএনপিকে জোট নেতারা জানান।

জানা যায়, বিগত আন্দোলনের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে বিএনপি কোনো পর্যালোচনা বা মূল্যায়ন করেছে কি না, সে বিষয়টি আলোচনায় তোলেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। কারণ, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের এক সপ্তাহ পর ১৩ জানুয়ারি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে মঞ্চের নেতারা এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এখন পর্যন্ত বিএনপি সে পর্যালোচনা করেনি। বুধবারের বৈঠকে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের একজন নেতা বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এ পর্যালোচনা করবেন।

গণতন্ত্র মঞ্চ মনে করে, ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলনে রাজপথের কর্মসূচির পাশাপাশি বৈশ্বিক রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী ক্ষমতাধর দেশগুলোর সঙ্গে থাকা সম্পর্ককেও কাজে লাগানো দরকার ছিল; কিন্তু একাধিকবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পরও বিএনপি সে বিষয়ে খুব দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। বৈঠকে এমন মূল্যায়ন তুলে ধরে মঞ্চের নেতারা বলেন, আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে এসব দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন কিংবা নবায়ন করতে হবে। প্রতিবেশী পরিবর্তন করা যায় না বিধায় পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গেও সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। সেটি কীভাবে করবে, আন্দোলনের প্রধান স্টেকহোল্ডার হিসেবে তা বিএনপিকেই ঠিক করতে হবে।

বিএনপির সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালবেলাকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিটা আমরা পর্যালোচনা করার চেষ্টা করেছি। যুগপৎ আন্দোলনটা কীভাবে নতুনভাবে পুনর্গঠিত করা যায়, এ ব্যাপারে বিএনপির চিন্তা-ভাবনা কী, আমরা সেটা জানতে-বুঝতে চেয়েছি। নতুন পরিপ্রেক্ষিতে, নতুন বাস্তবতায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সমস্ত শক্তিকে কীভাবে কার্যকরভাবে রাজপথে নামানো যাবে—সেটা নিয়েও আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি। পুরো আন্দোলনের প্রক্রিয়াটাকে কীভাবে আরও প্রতিনিধিত্বমূলক ও অংশগ্রহণমূলক করা যায়—সেটাও আলাপ-আলোচনায় এসেছে। তারা দলীয়ভাবে আলোচনা করে আমাদের জানাবেন বলেছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘ভারতের মানচিত্রও মুছে যাবে’, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হুঁশিয়ারি

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : আনোয়ারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টা ও ওসিকে হত্যার হুমকি যুবলীগ নেতার

অ্যানথ্রাক্সে মরছে গরু, আতঙ্কে কমেছে মাংস বিক্রি

নিখোঁজ ৫ জেলের সন্ধান মেলেনি সাত দিনেও

দক্ষ এমডির চরম সংকটে ব্যাংকিং খাত : গভর্নর 

তারেক রহমানের পক্ষে শতাধিক কোরআন বিতরণ

বিশ্ব রোবটিক্স প্রতিযোগিতা / জিহাদের উদ্ভাবিত রোবট ‘হেক্সাগার্ড রোভার’ পেল স্বর্ণপদক

‘অসৎ মানুষের কাজে নয়, সমাজ ধ্বংস হয় সৎ মানুষের নীরবতায়’

গাজা অভিমুখে শহিদুল আলম, তারেক রহমানের ফেসবুক পোস্ট

১০

ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ডলারের মালিক হলেন ইলন মাস্ক

১১

বিনা অস্ত্রোপচারে ৮ নবজাতকের জন্ম

১২

রেকর্ড গড়ে স্বর্ণের নতুন দাম ২ লাখ ছুঁইছুঁই

১৩

যদি বেঁচে থাকি, ভবিষ্যতে তাদের গলায়ও গামছা পরাব : নুর

১৪

যেখানে ইতিহাস আর ভালোবাসা মিলেমিশে একাকার

১৫

সাংবাদিকদের দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির দাবি 

১৬

কর্ণফুলী টানেলে মিনিবাস উল্টে আহত ৪

১৭

মার্কস অলরাউন্ডারে ১ কোটি টাকারও বেশি উপহার ও শিক্ষাবৃত্তি

১৮

চট্টগ্রামে প্লাস্টিকের কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট

১৯

সাদাপাথর লুটের ঘটনায় এবার আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

২০
X