রাফসান জানি
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৪, ০৪:০৯ এএম
আপডেট : ১৮ মে ২০২৪, ০৮:৪১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ডাকাত সর্দার থেকে অস্ত্র সরবরাহকারী রহিম

শারক্বীয়াকে অস্ত্র দেওয়ায় পেয়েছিলেন ৫ লাখ টাকা
ডাকাত সর্দার থেকে অস্ত্র সরবরাহকারী রহিম

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের রামু এলাকার ত্রাস ছিলেন আব্দুর রহিম। নিজের নামে ছিল ডাকাত দল। অবৈধ অস্ত্র, ডাকাতি, অপহরণসহ এক ডজন মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একটি মামলায় কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ২০১৯ সালে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রতিষ্ঠাতা শামিন মাহফুজ। রহিমকে শারক্বীয়ায় যোগ দেওয়ার দাওয়াত দেওয়া হয়। সেই দাওয়াত গ্রহণ করে বান্দরবানের গহিন পাহাড়ে প্রশিক্ষণে থাকা জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহ শুরু করেন রহিম।

গত ১৫ মে গাজীপুর কালিয়াকৈরের রারইপাড়া চন্দ্ররাবাইপাইল থেকে রহিমকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। তার দেওয়া তথ্যমতে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ছাগলখাইয়্যা এলাকার মনিরুলের পাহাড় থেকে দেশি-বিদেশি অস্ত্র-গোলাবারুদসহ আইইডি তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি কালবেলাকে বলেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের রামুতে একটি ডাকাত গ্রুপের নেতৃত্ব দিতেন রহিম। ২০১৯ সালে জেল থেকে বের হওয়ার পর রহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শারক্বীয়ার নেতা শামিন মাহফুজ। শামিন তাকে অস্ত্র সরবরাহের জন্য বললে বিভিন্ন স্থান থেকে অস্ত্র সংগ্রহ শুরু করেন এবং সেগুলো জঙ্গিদের হাতে তুলে দেন রহিম।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের এক অতিরিক্ত উপকমিশনার বলেন, অস্ত্র সরবরাহের জন্য শামিন ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন রহিমকে। আরও দেওয়ার কথা ছিল। এক দফা অস্ত্র পৌঁছেও দিয়েছিলেন রহিম। দ্বিতীয় দফায় সরবরাহ করার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করেন। কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলে সিটিটিসি, র্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবির লাগাতার অভিযান শুরু হলে নাইক্ষ্যংছড়ির ছাগলখাইয়্যা এলাকার মনিরুলের পাহাড়ের গহিন জঙ্গলে মাটির নিচে অস্ত্রগুলো লুকিয়ে সমতলে ফিরে আসেন। আত্মগোপন করতে গাজীপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি খুঁজছিলেন রহিম।

তাকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যে ওই পাহাড় থেকে একটি ৭.৬৫ বিদেশি পিস্তল, দেশীয় বন্দুক চারটি, দেশীয় তৈরি বারুদ লোডেড গান তিনটি, দেশীয় ওয়ান শুটার গান একটি, একটি ধারালো অস্ত্র, গুলি ১৬টি, কার্তুজ ১১টি, শটগানের খোসা ২৪টি, দুটি বাইনোকুলার, একটি গ্যাস মাস্ক, ওয়াকিটকি, অ্যাসিড সৃদশ তরল পদার্থ ৬ লিটার, ইলেকট্রিক তার ৬০ ফুট, মোবাইল সিগন্যাল বুস্টার, তারসহ এন্টেনা, হাতুড়ি ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়। আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও পাহাড়ের বর্তমান আতঙ্ক আইইডি তৈরির সরঞ্জাম ছিল রহিমের সংগ্রহে।

এই অতিরিক্ত উপকমিশনার বলেন, জঙ্গিদের দেওয়ার জন্য অস্ত্রগুলো পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারসহ অন্যান্য সোর্সে সংগ্রহ করতেন। কিছু দেশীয় অস্ত্র পরিচিত লোক দিয়ে বানিয়ে নিতেন রহিম। এবার পাহাড় থেকে যে পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়া গেছে, তার প্রায় সমপরিমাণ অস্ত্র প্রথম দফায় সরবরাহ করেছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রহিমকে গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে সিটিটিসি। সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার মাস্টারমাইন্ড ও সংগঠনের প্রধান শামিন মাহফুজকে গত বছরের জুন মাসে গ্রেপ্তারের পর শারক্বীয়ার প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও গুলির উৎস, অর্থায়ন সম্পর্কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে একই বছরে ৮ জানুয়ারি শামিন মাহফুজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মো. ইয়াছিন এবং অস্ত্র সরবরাহকারী মো. কবির আহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিনের পাশাপাশি স্থানীয় কবির আহাম্মদ ও আব্দুর রহিম শারক্বীয়ার সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের তথ্য আসে। শামিন মাহফুজ ও অস্ত্র সরবরাহকারী কবির গ্রেপ্তার এবং পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হলে আব্দুর রহিম ও তার সহযোগীরা আত্মগোপনে চলে যায়। আইইডি তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালও সরবরাহ করেন রহিম।

আসাদুজ্জামান বলেন, বান্দরবানের গহিনে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে শারক্বীয়ার সদস্যদের ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। এতে বিভিন্ন ধরনে কেমিক্যাল লাগত। সেই কেমিক্যালও সরবরাহের কথা ছিল। রহিম জঙ্গি সংগঠনে সরবরাহের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার সংগ্রহ করেছিলেন।

বর্তমানে শারক্বীয়ার নেতৃত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আমরা মনে করি সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কেউ নেই। এই সংগঠনের সব শীর্ষ নেতাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। নতুন করে সংগঠিত হওয়ার মতো কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।

গত মার্চ মাসে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের ভারতের প্রধান হারিজ ফারুকী ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের পর খবর বের হয়, হারিজ বাংলাদেশে ছিলেন। এ বিষয়ে সিটিটিসি প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমি আগেই অস্বীকার করেছি। আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের বাংলাদেশে অবস্থান করার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনে কারও অবস্থান করার প্রশ্নই আসে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাতিয়ায় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেপ্তার

বিএনপি নেতা বদরুজ্জামান মিন্টু চিরনিদ্রায় শায়িত

ঢাকা-১৩ আসনে ধানের শীষের সমর্থনে যুবদলের গণমিছিল

নতুন জোটের ঘোষণা দিল এনসিপি

কড়াইল বস্তিতে আগুন, তারেক রহমানের সমবেদনা

কড়াইল বস্তিতে আগুনের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার উদ্বেগ ও সমবেদনা 

গণভোট অধ্যাদেশ জারি করে গেজেট প্রকাশ

জেসিআই ঢাকা ইউনাইটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন মাসউদ

কড়াইল বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে

চীনা দূতাবাস কর্মকর্তার সঙ্গে চৌদ্দগ্রাম জামায়াত নেতাদের মতবিনিময়

১০

নুরুদ্দিন আহম্মেদ অপুর সঙ্গে সেলফি তুলতে মুখিয়ে যুবসমাজ

১১

অগ্রণী ব্যাংকের লকারে শেখ হাসিনার ৮৩২ ভরি স্বর্ণ

১২

শুভর বুকে ঐশী, প্রেম নাকি সিনেমার প্রচারণা?

১৩

৭০৮ সরকারি কলেজকে চার ক্যাটাগরিতে ভাগ

১৪

ইউএস বাংলার সাময়িকীর কনটেন্ট তৈরি করবে অ্যানেক্স কমিউনিকেশনস

১৫

সাদিয়া আয়মানের সমুদ্র বিলাশ

১৬

পৌরসভার পরিত্যক্ত ভবনে মিলল নারীর মরদেহ 

১৭

কড়াইলের আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ জানাল ফায়ার সার্ভিস

১৮

প্রশাসনের ৭ কর্মকর্তার পদোন্নতি

১৯

যুক্তরাষ্ট্রে যোগাযোগ ও মিডিয়া কনফারেন্সে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা

২০
X