শেখ হারুন
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৪, ০২:৪৩ এএম
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সংকটকালেও বিলাসী সার্কিট হাউস ঢাকায়

সরকারি কর্তাদের জন্য অত্যাধুনিক ভবন
সংকটকালেও বিলাসী সার্কিট হাউস ঢাকায়

ত্বকসহ শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সজীব রাখতে উন্নত দেশের বিলাসবহুল হোটেলগুলোতে আছে নানা ধরনের গোসলের ব্যবস্থা। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাষ্প গোসল (স্টিম বাথ)। এই গোসলের জন্য থাকে সৌনা কক্ষ, জ্যাকুজি, সাধারণ স্টিমসহ নানা ব্যবস্থা।

এবার বাংলাদেশেও সংযোজন হতে যাচ্ছে অতিবিলাসী এমন গোসলের ব্যবস্থা। তবে সেটা কোনো পাঁচতারকা হোটেলে নয়। বিপুল অর্থ ব্যয়ে শরীর আর মন সতেজ রাখার এমন সুবিধা যুক্ত হবে ঢাকা জেলার নতুন সার্কিট হাউসে। রাজধানীর বেইলি রোডের পুরোনো সার্কিট হাউসের জায়গায় নির্মাণ করা হবে নতুন সার্কিট হাউস ভবন। এতে থাকবে আধুনিক নানা সুযোগ-সুবিধা। পাঁচতারকা মানের হোটেলে যা যা থাকে, তার সবটাই পাওয়া যাবে এখানে। সুইমিংপুলের পাশাপাশি থাকবে সৌনা, জ্যাকুজি এবং স্টিম বাথের মতো বিলাসবহুল ব্যবস্থা।

এমন সব চমক রেখেই ‘ঢাকা জেলায় বিদ্যমান সার্কিট হাউস ভবনের স্থলে নতুন অত্যাধুনিক সার্কিট হাউস ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘স্বাস্থ্য সচেতন’ কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে। তবে অর্থনীতিতে চলমান সংকটের মধ্যে অতিবিলাসী এই ভবন নির্মাণকে অযৌক্তিক ও সরকারি অর্থের অপচয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে, নতুন সার্কিট হাউসটি যেমন অত্যাধুনিক হবে, তেমনি দেশের অন্যান্য সার্কিট হাউসের তুলনায় খরচ হবে কয়েক গুণ বেশি। সাধারণত দেশের বিভিন্ন জেলায় সার্কিট হাউস নির্মাণে খরচ হয়েছে সর্বোচ্চ ৮০ কোটি টাকা। সেখানে ঢাকা জেলা সার্কিট হাউস নির্মাণে খরচ হবে ৩৩৪ কোটি টাকা। মূলত অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রাখার কারণেই অন্য সার্কিট হাউসগুলোর তুলনায় বেশি খরচ হবে।

নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আনা সরকারি কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রীয় অতিথিদের সাময়িক রাত্রিযাপনের জন্য ভবনটি ব্যবহৃত হবে। সার্কিট হাউস ভবেনর অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় ব্যবহার করা হবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপানি পণ্য। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৩৩৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক সার্কিট হাউসটি নির্মাণ করবে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নতুন সার্কিট হাউসে দুটি বেজমেন্টসহ একটি ১৩ তলা এবং আরেকটি ৮ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। সার্কিট হাউস ভবনে জ্যাকুজি স্থাপনে খরচ হবে ৪৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়া উষ্ণ বাষ্প গোসলের জন্য সৌনা রুম এবং স্টিম বাথের জন্য খরচ হবে ১৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে সরকারি কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রীয় ভিভিআইপি অতিথিদের শারীরিক প্রশান্তি এবং বাষ্প গোসলের জন্য খরচ হবে ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

সার্কিট হাউসের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় ব্যবহার করা হবে অত্যাধুনিক সব পণ্য। যেসব পণ্য দিয়ে সার্কিট হাউস ভবনের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা করা হবে, সেগুলো হবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জাপানের। অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় খরচ হবে ১৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া সুইমিংপুল বাবদ খরচ হবে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। দুটি ভবন নির্মাণে খরচ হবে ২৩৯ কোটি টাকা। একটি গার্ড রুম নির্মাণে খরচ ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া এসি, লিফট, বাউন্ডারি ওয়াল, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, সুয়্যারেজ সিস্টেম, জেনারেটর এবং বিদ্যুৎ বাবদ বাকি টাকা খরচ হবে।

নতুন সার্কিট হাউস নির্মাণের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ঢাকায় আসতে হয়। তাদের সাময়িক রাত্রিযাপনের জন্য ঢাকা জেলা সার্কিট হাউসটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বিদ্যমান সার্কিট হাউসটি অনেক পুরোনো হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী স্থান সংকুলান সম্ভব হয় না এবং পুরোনো সার্কিট হাউসটিতে তেমন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নেই। এ ছাড়া রাষ্ট্রের ভিভিআইপি অতিথিদের রাত্রিযাপনের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত রেস্টহাউস নেই। তাই কর্মকর্তাদের ঢাকায় সাময়িক আবাসন সুবিধা বাড়ানোর জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন নতুন সার্কিট হাউস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অত্যাধুনিক এই সার্কিট হাউস নির্মাণের উদ্যোগ সম্পর্কে মন্তব্য চাওয়া হলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসনে বলেন, ‘সরকারের কথার আর কাজের যে মিল নেই, এটি তারই একটি বাস্তব উদাহরণ। দুই বছর ধরে সরকার সাশ্রয়ের পথে থাকার কথা বলে আসছে। অথচ এ ধরনের বিলাসী প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এ সময়ে এমন বিলাসবহুল অত্যাধুনিক ভবন তৈরিতে দেশের অর্থনীতিতে বা সরকারের দক্ষতা বাড়াতে কী অবদান রাখবে সেটা, বিবেচনা করা উচিত ছিল। এসব জায়গায় সাশ্রয় করে কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে না পারলে তো কথার সঙ্গে কাজের মিল থাকবে না।’

জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘বর্তমান সময়ের প্রক্ষাপটে এটা অযৌক্তিক। এ ধরনের প্রকল্প অনুমোদনের আগে বাস্তবতা বিবেচনা করা উচিত ছিল। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের সময় জনগণের টাকায় এমন বিলাসবহুল প্রকল্পের প্রয়োজন আছে কি না, সেটা সরকারের বিবেচনা করা উচিত। এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমিরাতে লটারিতে ৬৬ কোটি টাকা জিতলেন প্রবাসী হারুন

আকাশপ্রেমীদের জন্য এ মাসে দারুণ খবর

আজ ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

এসএসসি পাসেই চাকরি দিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ

৪ অক্টোবর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

সেপ্টেম্বরে বিশ্ব খাদ্যমূল্য সূচক কমেছে : এফএও

টিভিতে আজকের যত খেলা

‘বিদেশি নম্বর’ থেকে ফোন করে ওসিকে হত্যার হুমকি

ইসরায়েলকে বোমাবর্ষণ থামাতে ট্রাম্পের আহ্বান

১০

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়বৃষ্টি

১১

৪ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১২

শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৩

গরুর মাংসে হাড়-চর্বি বেশি দেওয়ায় সংঘর্ষ

১৪

‘বিএনপি ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না’

১৫

এক ইলিশ ১০ হাজার টাকা

১৬

ভাতের হোটেলের পাওনা চাওয়ায় গুলি

১৭

ব্যক্তি স্বার্থে দলকে ব্যবহার করা যাবে না : সেলিমুজ্জামান

১৮

‘জনগণের অধিকার ও মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে কাজ করছে বিএনপি’

১৯

নিউইয়র্কের প্রবাসীদের এনআইডি কার্যক্রমের উদ্বোধন

২০
X