বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় যুক্তরাজ্য। গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে এই মনোভাবের কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক। তবে উভয় দলের সঙ্গে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে কোনো কিছু বলেনটি ব্রিটিশ এই কূটনীতিক। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি যে দাবির কথা বলছে, সে বিষয়ে বিদেশিদের কোনো বক্তব্য নেই। নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হোক, সেটা নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথা আছে। তারা সংসদের বিলুপ্তি চায়, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়। কিন্তু এগুলো নিয়ে বিদেশিরা কথা বলেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীর সেতু ভবনে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিদেশিরা আমাদের অবস্থান জানতে চেয়েছে, আমরা কীভাবে নির্বাচন করতে চেয়েছি বা করতে চাই। নির্বাচন প্রক্রিয়াটা কেমন হবে। বিরোধীদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন? এসব নিয়ে তারা আলোচনা করছে বা করবেই। তিনি আরও বলেন, বিএনপি যে নির্বাচনে আসবে, এমন কোনো ইঙ্গিত ইশারা কি দিয়েছে? তারা
একদফা দাবিতে চলে গেছে, তারা নির্বাচনে আসার অনুকূলে নেই। নির্বাচনে আসা বিএনপির অধিকার। বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের উসকানি এরই মধ্যে শুরু করেছে উল্লেখ করে কাদের বলেন, দলটি জানান দিচ্ছে, তারা অশান্তির দিকে যাচ্ছে। অশান্তি সন্ত্রাস করবে, নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করতে চাইবে। এসব উদ্দেশ্য নিয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের বলেছি তারা যেন বিএনপির উসকানিতে শান্ত থাকে। তারা উসকানি দেবে, কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীদের মাথা গরম করা চলবে না। বিএনপি যে কোন পথে যাচ্ছে, তা পরিষ্কার। এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তাদের যা করার তাই করবে। একটা দেশে একদল সন্ত্রাস করবে, অফিস ভাঙবে, পুলিশকে মারতে যাবে, যেখানে সেখানে মারামারি করতে যাবে; সেখানে কি সরকার চুপ করে বসে থাকবে? এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, আমি তো কাউকে জোর করতে পারব না। বিএনপি কোন পথে যাবে সেটা পরিষ্কার, সেটা ঠিক করেই তারা মাঠে নেমেছে। তারা নির্বাচন ভণ্ডুল করবে। সরকার শান্তি চায় জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা রুলিং পার্টি, শান্তিতে দেশ না চললে, এর ব্যত্যয় হলে ক্ষতি আমাদের। এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সোয়া এক ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের তিন ঘণ্টা পর ব্রিটিশ হাইকমিশনারের পতাকাবাহী গাড়ি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রবেশ করে। ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে ছিলেন হাইকমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর টিমোথি ডকেট। বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের ওপর গণতন্ত্রকামী দেশ ও সংগঠনগুলো যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা মানবাধিকারে বিশ্বাস করে বিশেষ করে আইনের শাসনে, জীবনের নিরাপত্তা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে—সবারই কনসার্ন একটা জায়গায়। এর পরিবর্তনের একমাত্র উপায় হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারত্বমূলক নির্বাচন এবং সেটি বাংলাদেশের জনগণের যেভাবে প্রত্যাশা, তাদের (গণতান্ত্রিক দেশগুলোর) একই প্রত্যাশা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বিষয়ে কনসার্ন সবারই। বিশেষ করে ব্রিটিশ সরকারের সব সময় ছিল। আমরা ওয়েস্ট মিনস্টার ফলো করি। এ বিষয়গুলোই আজকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহের প্রেক্ষাপট যদি ব্যাখ্যা করি—কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, কতজন আহত হয়েছে, কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে, কত মামলা হয়েছে, কোথায় কোথায় ডিসি পোস্টিং হচ্ছে, কোথায় কোথায় পুলিশ অফিসার পোস্টিং হচ্ছে, কোথায় কোথায় টিএনও পোস্টিং হচ্ছে, এই নির্বাচনে চুরি করার যে প্রকল্প এটি গত এক সপ্তাহে তথ্য-নির্বাচনে চুরি করা প্রকল্প, ভোট চুরির প্রকল্প অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বৈঠকের ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে’র তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী—জানতে চাইলে আমির খসরু বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে তাগাদা দেওয়ার অর্থটা কী? কিছুটা লজ্জা-শরম থাকা তো দরকার, তাই না? এর বেশি কিছু বলতে চাই না। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে নির্দলীয় সরকার ইস্যুতে ব্রিটিশ সমর্থন আছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সমর্থন তো শুধু গ্রেট ব্রিটেন নয়, সারা বিশ্বের প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশ বাংলাদেশে কেন আসছে, কেন বার্তা দিচ্ছে, কেন প্রতিনিধিমূলক, অংশীদারত্বমূলক, অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছে? তারা কি সাউথ এশিয়ার অন্য কোনো দেশে যাচ্ছে? তারা কোথাও যাচ্ছে না। তিনি বলেন, কূটনীতিকরা কেন আসছে? বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয় না; এটা কি বলার অপেক্ষা রাখে? তারা যেভাবে কথাগুলো বলছে, এটির অর্থই হচ্ছে বাংলাদেশে নির্বাচন হচ্ছে না, বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিতে পারছে না, জনগণ তাদের সংসদ ও সরকার নির্বাচন করতে পারছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক দেশগুলো নির্বাচন নিয়ে কথাগুলো বলছে। সরকারি দল থেকে বলা হচ্ছে যে, বিদেশিরা নির্দলীয় সরকারের কোনো ধরনের ইন্টারেস্ট ফিল করেনি। কিন্তু আপনারা বলছেন যে, তাদের কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে বাংলাদেশে এরকম সরকারের কথা। এ ব্যাপারে আপনাদের বক্তব্য কী—প্রশ্ন করা হলে আমির খসরু বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হলে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া হবে না, এটি কে না বোঝে বাংলাদেশে। এদিকে যুক্তরাজ্যের ঢাকা দূতাবাস বৃহস্পতিবার একই দিনে টুইটে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুকের বৈঠকের কথা জানায়। টুইটে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক আজ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে তারা যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে উৎসাহিত করে।
মন্তব্য করুন