অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রমে বাংলাদেশ ও ভারত যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তা দূর করতে সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লির হোটেল তাজ প্যালেসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে কথা বলেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে চ্যালেঞ্জগুলো অনুভব করছি, তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি। সৌজন্য সাক্ষাতের আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, এ সাক্ষাতে উভয় দেশে নতুন সরকার গঠনের পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার অংশীদারিত্বকে আরও এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দুই নতুন সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। তাই দুই দেশে নতুন ভিশন যুক্ত হবে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে, এই সম্পর্ককে এখন নতুন অধ্যায়ে নেওয়া যেতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, এই নতুন অধ্যায় বাণিজ্য ক্ষেত্রে করা হবে। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে লজিস্টিক, জ্বালানি ও কানেকটিভিটি খাতে গভীরভাবে কাজ করতে চায়। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের হীরকজয়ন্তী উদযাপনের জন্য দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিমসটেকের (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) জন্য একটি নতুন ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান জয়শঙ্কর। সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিমসটেকের পরবর্তী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন জয়শঙ্কর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয়ে একমত হন, বিমসটেক শক্তিশালী হলে তা অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, কানেকটিভিটি ও ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে। সাক্ষাতে ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে কর ও রাজস্ব সংগ্রহ এবং জনগণকে সেবা প্রদান উন্নয়ন করাসহ ডিজিটাল কর্মসূচির উন্নয়নে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী দুই প্রতিবেশী দেশের প্রকল্প দ্রুত ও সহজে শেষ করার ওপর জোর দেন। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একমত হন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, মিয়ানমার সরকার ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন প্রয়োজনে বিমসটেকে মিয়ানমারকে বাদ দিয়ে অন্য সদস্য দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। কারণ মিয়ানমারের কারণে ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নয়াদিল্লিতে উষ্ণ অভ্যর্থনা শেখ হাসিনাকে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দুদিনের সরকারি সফরে গতকাল বিকেলে নয়াদিল্লি যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ২৯ মিনিটে নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক (পালাম) বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাকে স্বাগত জানিয়ে লোকনৃত্য পরিবেশন করা হয়। এ সময় নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সফরকালীন আবাসস্থল হোটেল তাজ প্যালেসে যান। বিমানবন্দর থেকে তাজ প্যালেসে যাওয়ার রাস্তার দুপাশ বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি ও প্ল্যাকার্ড দিয়ে সাজানো হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজিতে বিভিন্ন উদ্ধৃতির প্ল্যাকার্ড দেখা যায় রাস্তার দুপাশে।
এর আগে দুপুর ২টা ৮ মিনিটে নয়াদিল্লির উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়েন তিনি। টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার গঠনের পর নয়াদিল্লিতে এটিই কোনো সরকারপ্রধানের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। এর আগে নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ৯ জুন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও যোগ দেন শেখ হাসিনা।
দ্বিপক্ষীয় এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা। আজ শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নয়াদিল্লির ফোরকোর্টে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে। সেখানে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজঘাট যাবেন। সেখানে তিনি মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে তিনি হায়দরাবাদ হাউসে যাবেন। সেখানে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথ সংবাদ বিবৃতি দেবেন। পরে হায়দরাবাদ হাউসে শেখ হাসিনা তার সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজ অংশ নেবেন। বিকেলে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের কার্যালয়ে তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তিনি পুনরায় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন। সেখানে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ করবেন। নয়াদিল্লি সময় বিকেল ৬টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ বিমানে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।