দীর্ঘ ২০ মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় সংঘাত পরিস্থিতি চলছে। সহিংসতার অবসানে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও ইসরায়েলি আগ্রাসন কমেনি। ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে গাজায় মানবিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি গাজার অবকাঠামো পুরোপুরি ধসে পড়েছে। অবরুদ্ধ গাজায় নিয়মিত স্থল অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের কাছে বর্তমানে ২ হাজারেরও বেশি ট্যাঙ্ক রয়েছে। এসব ট্যাঙ্ক দিয়ে স্থল অভিযানের পাশাপাশি তারা আকাশপথেও হামলা চালাচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্টের (এসিএলইডি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ৩২৫টি হামলা চালিয়েছে। এসব হামলার মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে গাজার অবকাঠামো ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। অন্যদিকে তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ৩০ হাজার টনের বেশি বোমা-গোলাবারুদ ফেলেছে। এসব বোমা-গোলাবারুদের বেশিরভাগই অবিস্ফোরিত রয়ে গেছে।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এসিএলইডির প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, পশ্চিম তীর দখল ও নিয়ন্ত্রণের জন্য এসব হামলা পরিচালিত হয়েছে। এ ছাড়া গাজার তুলকারম, নুর শামস ও জেনিন শরণার্থী শিবিরের পাশে স্থায়ী সামরিক শিবির স্থাপন করেছে ইসরায়েল। অন্যদিকে গাজার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও অবকাঠামো ধ্বংসের বিষয়ে নজর রেখেছে ইউনেস্কো। ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর গাজায় অন্তত ১১৩টি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী অবকাঠামোয় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এর মধ্যে ১৩টি ধর্মীয় স্থাপনা, ৭৭টি ভবন ঐতিহাসিক বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী, ৩টি স্থানান্তরযোগ্য ঐতিহ্য, ৯টি মনুমেন্ট, একটি জাদুঘর এবং ৭টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এসব স্থাপনার মধ্যে ১০১টিই গাজা শহরে অবস্থিত।
এ সংঘাতে গাজার অবকাঠামোগত ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক। ইসরায়েল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শহুরে এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছে এবং কিছু অবকাঠামোয় একাধিকবার হামলা চালানো হয়েছে। জাতিসংঘ আরও জানিয়েছে যে, অনেক হাসপাতাল এবং এর আশপাশের এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার একাধিক উদাহরণ পাওয়া গেছে। যার মানে হলো, হাসপাতালগুলো খোলা আছে ঠিকই; কিন্তু তারা দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং জটিল আঘাতের কোনো চিকিৎসা দিতে পারছে না। গাজার ছয়টি পাবলিক কমিউনিটি মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং একমাত্র ইনপেশেন্ট সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালও এখন আর চালু নেই। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় দশ লাখ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার প্রয়োজন, যা মোকাবিলা করা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। এদিকে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চলায় ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ শুধু খাদ্যসংকটই নয়, আশ্রয়ের অভাবেও রয়েছে।
জাতিসংঘের স্যাটেলাইট সেন্টার (উইনিসোট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৮ হাজার ৫৮৮টি ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া ৫১ হাজার ৯৬২টি ভবন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব স্থাপনায় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় অনেকে কোনোমতে ঠাঁই নিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খান ইউনিস, গাজা শহর আর উত্তর গাজার স্থাপনাগুলো। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় গাজার অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর এই ধ্বংসস্তূপ সংস্কারে অন্তত ৫৩ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে।
মন্তব্য করুন