চাঁদে পা রাখা হলো। এবার সূর্যকেও ছোঁয়া চাই। আদিত্য ওরফে সূর্যের দিকে নজর দিতে এবার ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর মিশন ‘আদিত্য’ শুরু। শনিবার ভারতীয় সময় সকাল ১১টা ৫০-এ লঞ্চ হলো আদিত্য এল১।
সূর্যের চারপাশে L1 ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টে সূর্যকে পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানো হবে আদিত্য এল১। সূর্যের চারপাশের বায়ুমণ্ডলীয় গতিবিদ্যা, মহাকাশ আবহাওয়া ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করবে ওটা। মহাকাশে সেটিকে পাঁচ বছর রাখার পরিকল্পনা আছে ইসরোর। ভারতের সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে রওনা দিয়েছে আদিত্য। অন্ধ্রপ্রদেশের ওই স্পেসপোর্ট থেকেই রওনা দিয়েছিল চন্দ্রযান-৩। আদিত্য এল১-কে বহন করছে পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিক্যাল (পিএসএলভি)।
উৎক্ষেপণের ১২৭ দিন পর এল১ কক্ষপথে পৌঁছানোর কথা রয়েছে আদিত্য এল১ মহাকাশযানটির। তারপর পাঁচ বছর ধরে সূর্যের আলোকমণ্ডল, ক্রোমোস্ফিয়ার ও আরও অনেক কিছু নিয়ে গবেষণা করবে। পুরো যাত্রায় খরচ হতে পারে প্রায় ৪০০ কোটি রুপি। আদিত্য এল১-কে বহন করেছে PSLV-XL রকেট। এর উচ্চতা ৪৪.৪ মিটার। ভর প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার কেজি। এর মোটর শক্তি উৎপাদন করবে প্রায় ৭১৯kN।
পেলোড
বেঙ্গালুরুর ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টারে তৈরি হয়েছে আদিত্য এল১। তবে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকস মহাকাশযানটির মূল সাতটি পেলোড তৈরি করেছে। এগুলো হলো—ভিজিবল এমিশন লাইন করোনোগ্রাফ (ভিইএলসি), সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলস্কোপ, সোলার লো এনার্জি এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার, হাই এনার্জি এল১ অরবিটিং এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার, আদিত্য সোলার উইন্ড পার্টিকেল এক্সপেরিমেন্ট, প্লাজমা অ্যানালাইজার প্যাকেজ ফর আদিত্য, অ্যাডভান্সড ট্রাই-অ্যাক্সিয়াল হাই-রেজল্যুশন ডিজিটাল ম্যাগনেটোমিটারস।
এর মধ্যে VELC-এর কাজ হলো সৌর করোনার ডায়নামিক প্যারামিটার এবং করোনাল ভর নির্গমনের উৎপত্তি (তিনটি দৃশ্যমান এবং একটি ইনফ্রা-রেড চ্যানেল ব্যবহার করে) পর্যবেক্ষণ করা। VELC পেলোড দৃশ্যমান এবং ইনফ্রা-রেড তরঙ্গদৈর্ঘ্যে করোনার বর্ণালি দেখতে পারবে। গ্রাউন্ড স্টেশনে দিনে ১৪৪০টি করে ছবি পাঠাবে এই যন্ত্র।
এটি ২০০nm থেকে ৪০০nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করবে এবং এটি ১১টি ফিল্টার ব্যবহার করে সৌর বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের চিত্র সরবরাহ করবে। করোনাল হিটিং মেকানিজম অধ্যয়নের জন্য এক্স-রে ফ্লেয়ার নিরীক্ষণ করবে সোলার লো এনার্জি এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার পেলোড।
ASPEX পেলোডের কাজ হলো সূর্যের বায়ুমণ্ডলের বৈচিত্র্য এবং বৈশিষ্ট্যগুলোর পাশাপাশি এর বর্ণালির বৈশিষ্ট্য দেখা। প্লাজমা অ্যানালাইজার সূর্য থেকে আসা শক্তিশালী কণা এবং এর শক্তি বিতরণের গঠন বোঝার চেষ্টা করবে। সূর্যের আশপাশে চৌম্বক্ষেত্রের মাত্রা ও প্রকৃতি পরিমাপ করবে অ্যাডভান্সড ট্রাই-অ্যাক্সিয়াল হাই-রেজল্যুশন ডিজিটাল ম্যাগনেটোমিটারস।
৪০০ কেজির আদিত্য এল১ সূর্যের ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট ১-এর একটি কক্ষপথে থাকবে। যা পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে। এ বিন্দুতে মহাকাশযানটিকে স্থাপনের সুবিধা হলো এখান থেকে সূর্যকে অবিচ্ছিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়। মহাশূন্যে পাঁচটি এমন পয়েন্ট রয়েছে, যেখানে সূর্য ও পৃথিবীর বিপরীতমুখী আকর্ষণের ফলে বস্তু মাঝামাঝি অবস্থানে থাকতে পারে। তাই কক্ষপথ ধরে রাখতে আদিত্যর জ্বালানি খরচ হবে না।
গবেষণা
সূর্য থেকে প্রায় সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ আসে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও এর চৌম্বক ক্ষেত্র সেই রেডিয়েশনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ঢাল হিসেবে কাজ করে বলে আমরা সব বিকিরণ শনাক্ত করতে পারি না। ওই অদেখা বিকিরণের ওপর ভিত্তি করে সৌর গবেষণাও সম্ভব হয় না। তাই সূর্য থেকে আসা সৌর কণা এবং চৌম্বক ক্ষেত্র বোঝার জন্য, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের বাইরে গিয়েই করতে হবে গবেষণা। আদিত্য-এর প্রধান উদ্দেশ্যই হলো এটি। বায়ুমণ্ডলীয় (ক্রোমোস্ফিয়ার ও করোনা) গতিবিদ্যা, লুপ প্লাজমার ডায়াগনস্টিক, সৌর আবহাওয়াসহ বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি সূর্যের বাইরের দিকের করোনাও দেখতে আদিত্য। এ ছাড়া সূর্যের ফটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার এবং বাইরের লেয়ারে থাকা আয়নিত প্লাজমার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করবে। তাছাড়া মাঝেমধ্যে যে সৌরঝড় ঘটে তার কারণও অনুসন্ধান করবে আদিত্য এল১।
মন্তব্য করুন