ইসরায়েলি কারাগারে নিজের উপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন বিখ্যাত সুইডিশ পরিবেশবাদী কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। তিনি জানিয়েছেন, চলতি মাসের শুরুর দিকে গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করা এক মানবিক বহরে যোগ দেওয়ায় ইসরায়েলি সেনাদের হাতে পাঁচ দিন ভয়াবহ নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
থুনবার্গ জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা তাদের মারধর, লাথি ও গ্যাস দেওয়ার হুমকি দেয়। এমনকি খাঁচার ভেতরে বন্দি রেখে বিদ্রুপ করে। ‘গ্লোবাল সুমুদ’ নামের ওই মানবিক বহরটি গাজার উপর ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ ভেঙে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল।
সুইডিশ দৈনিক আফটনব্লাডেটকে থুনবার্গ বলেন, এটা আমার বা আমাদের নিয়ে নয়। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি— যাদের মধ্যে শত শত শিশু আজ বিচার ছাড়াই বন্দি রয়েছে। তাদের অনেকেই নির্যাতনের শিকার।
তিনি বলেন, মুখোশধারী ইসরায়েলি সেনারা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে নিয়ে নৌবহরে উঠে পড়ে। তাদের ঘিরে রাখে ইসরায়েলি সেনারা। প্রচণ্ড গরমে বসিয়ে রাখা হয়। এ সময় সেনারা ত্রাণসামগ্রী নষ্ট করে, তারা ওষুধ ও খাবার ফেলে দেয়।
গ্রেটা থুনবার্গ বলেন, ফ্লোর অনেক গরম ছিল। আমরা বারবার বলছিলাম, ‘আমাদের পানি দাও’। শেষে চিৎকার করতে শুরু করি। কিন্তু ইসরায়েলি সেনারা বারবার আমাদের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তারা নিজেদের পানির বোতল দেখিয়ে হাসছিল।
গ্রেটা জানান, পরে তাদের নৌকা ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে যাওয়ার পর সহিংসতা আরও বেড়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমাকে টেনে লোহার বেড়া দেওয়া এক স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমার গায়ে ইসরায়েলি পতাকা ঠেকিয়ে লাথি মারা হয়। তারা আমার ব্যাঙের টুপি ছিনিয়ে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে মাড়ায়, আর সুইডিশ ভাষায় গালাগাল দিতে থাকে।’
তিনি জানান, প্রহরীরা নিয়মিতভাবে বন্দিদের গ্যাসের ভয় দেখাত, ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে বা হাঁটু গেড়ে রাখত। অত্যাধিক গরমের মধ্যে ছোট, গাদাগাদি সেলে রাখা হতো। এমনকি তারা আমাদের সামনেই হৃদরোগ, ক্যান্সার, ইনসুলিনের ওষুধ ফেলে দিচ্ছিল। তাদের মধ্যে একটুও সহানুভূতি নেই, মানবতা নেই—তাদের সবকিছুই সহিংস।
গ্রেটা বলেন, এক পর্যায়ে বন্দিদের বাদামি রঙের কলের পানি খেতে বাধ্য করা হয়। এর ফলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। কারাগারের দেয়ালে তিনি গুলির দাগ, রক্তের দাগ এবং আগের ফিলিস্তিনি বন্দীদের খোদাই করা বার্তা দেখেছেন বলেও জানান।
তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে, তা ফিলিস্তিনিদের ভোগান্তির তুলনায় খুবই সামান্য।
মন্তব্য করুন