অজয় দাশগুপ্ত
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৪, ০২:১১ এএম
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের কি ইউটার্ন বলে কিছু নেই

আমাদের কি ইউটার্ন বলে কিছু নেই

হঠাৎ হঠাৎ একেকটা ঘটনা আমাদের নাড়িয়ে দিয়ে যায়। কোটা বাতিল আন্দোলনকে মাঝপথে রেখে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিক্রির নায়ক এক ড্রাইভার এখন শিরোনামে। একজন পাগলও জানে, ১৫ বছর আগের একজন ড্রাইভার এ কাজ একা করেননি। কে করেছে, কারা করেছে এগুলো নিয়ে লেখালেখি, টকশো বা সমালোচনায় সামাজিক মিডিয়া উত্তাল হবে। কিন্তু কোনোকালেও মূল ঘটনা জানা যাবে না। জানা যায় না। এটাই নিয়তি। আমি তাই এমন উটকো বিষয় নিয়ে লিখব না। আবেদ আলী ধর্ম করলেন, চাঁদা দিলেন, ছেলেমেয়েদের বিত্তবৈভবে বড় করলেন, অথচ কারও টনক নড়ল না? তিনি যার গাড়ি চালাতেন তিনি কোনোদিন প্রশ্ন তোলেননি? সন্দেহ করেননি?

কোনো কাজই ছোট-বড় নয়। গাড়ি চালানোও খারাপ কিছু না। কিন্তু যে সমাজ ধনী-গরিবের ভেদাভেদে জীর্ণ, যেখানে গরিব বা শ্রমজীবীরা বড় লোকদের ড্রয়িংরুমের ভেতরে যেতে পারেন না, সেখানে একজন লোক ইলেকশন পর্যন্ত পৌঁছে গেল, কেউ কিছু বলল না?

এখন সবাই মিলে আবেদ আলীর পেছনে লাগলে কী লাভ! তাই আমি এমন বুদবুদ এড়িয়ে সমাজের কথা বলতে চাই। কবি নির্মলেন্দু গ‍ুণ একটি অসাধারণ কথা লিখেছেন। তার মতে, মাতৃগর্ভে খুনির জন্ম হয় না, খুনি জন্মে সমাজগর্ভে। এই সত্যটা আজ চাক্ষুষ। তলে তলে সমাজকে নিঃশেষ করে দেওয়ার কাজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কেন এই অপপ্রক্রিয়া? যখন কোনো দেশ এগোয়, সমাজ সামনে যায় তখন কি আসলেই একের পর এক ঘটনা ঘটা সম্ভব?

কোথাও একটা গরমিল চলছে। দুনিয়ার বহু দেশে গিয়েছি, আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশ অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করি। উন্নয়ন ও সমাজ যেখানে হাত ধরাধরি করে চলে। সমাজে বহু ধরনের সমস্যা থাকে, এখানেও আছে। কিন্তু ওয়ান অফ। দেশে দেখছি লাগাতার চলছে এসব। এবারের ঘটনাটি ভয়াবহ। বলাবাহুল্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর যারা তা কিনেছিল তারা এখন পদাসীন। যে-সে পদ নয়, দেশ চালানোর মতো পদপদবি। তাদের যোগ্যতা তো সন্দেহের। এখন এসব বিড়ালের গলায় ঘণ্টা পরাবে কে?

প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে কি নজরদারি বলে কিছু নেই? প্রশাসন সরকার আমলাতন্ত্র কোথায়? কোথায় মনিটরিং? কেমন যেন একটা ধোঁয়াশা বাস্তবতা। যতক্ষণ না ঘটনা বের হয়ে আসছে সবাই চুপ। যখনই তা আলোর মুখ দেখল হৈ-হৈ করে একেকটা ঘটনা বের হতে শুরু করে দিল। এত তথ্য, এত দলিল-দস্তাবেজ, এত কাহিনি কোথায় জমা থাকে? কারা জমা করে রাখে?

আমরা এখন প্রবীণ, এই দেশের জন্ম দেখা মানুষ আমরা। কত অপশাসন, কত অঘটন, কত শাসক, যখনই এমন সব ঘটনা বের হতো আমরা আতঙ্কে থাকতাম। এতটা ধারাবাহিক না হলেও সব আমলেই এমন ঘটনা ঘটত এবং তারপর যা হতো বা ঘটত তাতে দেশের অমঙ্গল ছাড়া কিছু ঘটত না। এত বছর পর যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে চলেছেন, তখন এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত।

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এই শিরদাঁড়া যারা ভেঙে দিতে চায়, জাতি নির্মাণের মূল জায়গায় এমন সব অপকর্ম করে তারা মাদক কারবারির চেয়েও ভয়ংকর। আমার মনে হচ্ছে এসব অপপ্রক্রিয়া মূলত চক্রান্ত। খেয়াল করুন এ ঘটনা বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলেও হয়েছিল। একটা ভিডিও ক্লিপে দেখলাম আবেদ আলী খালেদা জিয়ার নামে জয়োধ্বনি দিচ্ছিল। বিএনপির জন্য কণ্ঠফাটা স্লোগান তুলছিল। সেই আবেদ আলী তার নির্বাচনী পোস্টারে লিখেছে আওয়ামী লীগের কর্মী। ব্যবহার করেছে জাতির পিতা ও তার কন্যার ছবি। এগুলো নেতাদের চোখে পড়েনি? কেন পড়েনি?

এই কেন কেন করতে করতে আমাদের কিন্তু আসল কাজ শেষ। যে কথা বলছিলাম, উন্নয়ন মানে কী? হাতে কিছু টাকাপয়সা আসা? বা ড্রাইভাররা বড়লোক বা ধনী বনে যাওয়া? উন্নয়নের মূল বিষয় রাজনীতি বোঝে না। বুঝলে সুষম উন্নয়নের জন্য তারা কাজ করতেন। আজকাল রাজনীতি হচ্ছে টিভির পর্দায় মাইক্রোফোন নির্ভর। জনগণের ধারে পাশে না থাকা এই রাজনীতি বিসিএস হোক আর স্কুলের টেস্ট হোক, কিছুরই খবর রাখে না। এই যে সর্বনাশা যাত্রা এর শেষ কিন্তু খারাপ হতে বাধ্য।

রাজনীতি যদি তার জায়গায় থাকত আজ সংসদে এসব বিষয় নিয়ে ফাটাফাটি হতো। আপনি মাঠে হাজারবার চেঁচানো আর পার্লামেন্টে কথা বলার ভেতর বিরাট ফারাক আছে। আইনপ্রণেতারা সংসদে জরুরি বিষয় নিয়ে কথা বলবেন সেখান থেকে সমাধান বেরিয়ে আসবে এটাই ছিল নিয়ম। অথচ এখন আমরা যারা কলাম লিখি আমরাই মনের মতো সাজিয়ে গুছিয়ে লিখছি বা বলছি আসল কথা কারও কানে পৌঁছায় বলে মনে হয় না।

অনিয়ম যখন নিয়ম হয়ে ওঠে তখন আমরা দেখি স্পর্শকাতর বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। আবেদ আলী একটি উদাহরণমাত্র। অথচ এমন হাজারো আবেদ আলী কপালে দাগ ছবিতে প্রার্থনা দিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে চলেছে। ওই যে বললাম স্পর্শকাতরতা সেটা তারা ঠিক বোঝে। আমি যখন এ লেখা লিখছি, খবরে দেখলাম আবেদ আলী বলেছেন রিমান্ডের মালিক তার প্রভু। তিনি ভালোমন্দ বোঝেন। ধর্মের এমন অপব্যবহার ইহকালে কেউ শুনেছে? ধর্ম তো মানবিকতার আদিপাঠ। সৎ ও সরলতার বাহন। যে মানুষটি পাপ মোছার জন্য বা ভয়ে বা লোক দেখানোর জন্য লেবাস পরিধান করেন, তিনিও যদি সবক দেন তো মানুষ যাবে কোথায়?

আসলে আশ্রয়। এই আশ্রয় বিষয়টি কিন্তু খালি গডফাদারে সীমাবদ্ধ কিছু না। মানুষ যখন পরিবার-পরিজন বা নিকটজনের কাছেও কিছু লুকায় বা লুকাতে বাধ্য হয় তখন অন্ধকারের কাছে আত্মসমর্পণ করে। সেটাও যদি পাপহীন হতো কথা ছিল না, যা দেখছি তাতে এটা স্পষ্ট এসব আচরণমুখিতার আড়ালে আছে ধান্দা। হিন্দু-মুসলমান উভয়ের ধর্ম বা বিশ্বাস পুঁজি করে ধান্দা করার চেষ্টা। যারা প্রকৃত ধার্মিক তাদের এসব করার কোনো দরকার পড়ে না। আর যারা নাস্তিক বা সাপটা কথা বলেন, তাদেরও এসব দরকার পড়ে না। মধ্যবিত্তের শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়ার একটা জঘন্য ষড়যন্ত্র চলছে। দেশে বা সমাজে গান নেই, বাজনা হারাম, নাচ দেখা পাপ, কবিতা আছে কি নেই, নাটক উধাও। আছে কি? সংস্কার আর তার নামে পোশাক খাদ্য আচরণগত কিছু সংস্কার। এর আড়ালে ঢাকা দিয়ে থাকা এসব আলী ভাইয়েরা আজ আমাদের দেশ ও সমাজের দুশমন হয়ে উঠেছে।

বুদবুদ ওঠে, মিলিয়েও যায়। এসব প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা মিলিয়ে যাবে এবং তা মিলিয়ে দিতে আরও একটা ঘটনা এলো বলে। একটু সবুর করেন। অথচ দেশের বাইরে আমাদের দেশ ও জাতির একটা পজিটিভ ইমেজ গড়ে উঠছিল। এখনো তা আছে। কিন্তু এসব ঘটনা যত ঘটবে, যত মেধা আর মেধাবী দেশ ছাড়বে, তত তা চাপা পড়ে যাবে। আমাদের জাতির জীবনে কি ইউটার্ন বা ঘুরে দাঁড়ানো একাত্তরেই শেষ হয়ে গেছে?

লেখক: সিডনি প্রবাসী

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নির্মাণাধীন নভোথিয়েটার ও বিটাক দখলে নিলেন ববি শিক্ষার্থীরা

আইভরি কোস্ট  / প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াতে চান ৬০ জন

রাজধানীতে আজ কোথায় কোন কর্মসূচি

গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘের

আজ আপনার ভাগ্যে কী আছে, দেখে নিন রাশিফলে

২৮ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২৮ আগস্ট : টিভিতে আজকের খেলা

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প কর্মসূচি দিয়ে জবি ছাত্রীসংস্থার আত্মপ্রকাশ

১০

২৮ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

১১

২০৭ কোটি টাকার ঋণ খেলাপী / আসিফ এপারেলসের এমডিসহ ২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

১২

শহীদ আলভীর অসুস্থ পিতার পাশে আমিনুল হক

১৩

বুজতেছি না এ সরকার কি আমাদের, নাকি কাদের: ইব্রাহীম

১৪

কবি নজরুল ছিলেন মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত : ডা. ইরান

১৫

শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু মঞ্চ ও পোশাক কর্মশালা

১৬

এবার চতুর্থ সারির ক্লাবের কাছে হেরে ম্যানইউর বিদায়

১৭

ড. মাসুদের প্রচেষ্টায় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেলো ৩ ইউনিয়নের মানুষ

১৮

বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশ স্পিনার

১৯

রুমিন ফারহানার দুঃখ প্রকাশ

২০
X