ইন্টারনেট শিশুদের মনে নানাভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। এই ইন্টারনেট আসক্তি তাদের পড়াশোনার মনোযোগ বিশেষভাবে নষ্ট করছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে সময় ব্যয় তাদের স্বাভাবিক জীবনে ‘প্রচণ্ড নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলছে এবং ৫৭ দশমিক ২ শতাংশের স্বাভাবিক জীবনে ‘কিছুটা নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলছে। জীবনের কোনো না কোনো সময়ে মানসিক সমস্যায় পড়েছে এমন শিক্ষার্থীর ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশই মনে করে এর পেছনে ইন্টারনেট ব্যবহারের ভূমিকা রয়েছে। তাদের মধ্যে আবার ২৬ দশমিক ১ শতাংশ এ মানসিক সমস্যার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারকে পুরোপুরি দায়ী করেছে। ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই অবসর কাটাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং অনেকেই আসক্তি অনুভব করছে। সমীক্ষায় বলা হয়, চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সমীক্ষার কাজ হয়েছে। সমীক্ষায় ১ হাজার ৭৭৩ শিক্ষার্থী অংশ নেয়, যার মধ্যে নারী ৪৯ দশমিক ৫ এবং পুরুষ ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের আছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭২ দশমিক ২ শতাংশ জানিয়েছে, তারা জীবনে কখনো না কখনো মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, এ সমস্যার পেছনে ইন্টারনেটের ভূমিকা রয়েছে। শিশুরা বর্তমানে এতটাই ইন্টারনেটে জড়িয়ে পড়েছে যে, তাদের আচার-আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে; কিন্তু এর জন্য দায়ী বর্তমান সমাজব্যবস্থা ও পরিস্থিতি। বাবা-মায়ের ব্যস্ত জীবনে সময় নেই ছেলেমেয়েদের দিকে তাকানোর কিংবা নজরদারি করার। স্কুল বন্ধ থাকায় গৃহবন্দি শৈশব বিশ্ব-প্রকৃতির সংস্পর্শে আসতে পারেনি। পা পড়েনি খেলার মাঠে কিংবা পার্কে। দিনের পর দিন বাড়িতে আবদ্ধ থেকে একঘেয়ে জীবনে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এর থেকে মুক্তি পেতে ক্লাসের ফাঁকে কিংবা বাড়িতে বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে ইন্টারনেট জগতে ঢুকে পড়েছে শিশুরা।
ইউটিউব কিংবা ফেসবুকের পর্দায় ভেসে ওঠা একের পর এক লোভনীয় ছবির দৃশ্যপট শিশুমনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এক অলীক স্বপ্নের জগতে, বাস্তবের সঙ্গে যার মিল নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা বুঁদ হয়ে আছে। পড়াশোনায় আগ্রহ কমে আসছে। হ্রাস পাচ্ছে কল্পনাশক্তি, সৃষ্টিশীলতা। আসক্ত হয়ে পড়ছে বিভিন্ন অনলাইন খেলায়। আর বেশিরভাগ ভিডিও গেমই ‘ভায়োলেন্স’-এ ভরা, যা শিশুদের মনকে বিষাক্ত করছে। প্রভাব পড়ছে তাদের আচার-আচরণে প্রতিনিয়ত। বাবা-মায়েরা কি আদৌ এ ব্যাপারে সচেতন? ট্রেন, বাস, অটোতে দেখি বাবা-মায়ের পাশে বসে তাদের সন্তানরা দিব্যি অনলাইনে গেম খেলে যাচ্ছে। যেসব শিশু এখনো ঠিকমতো কলম ধরে লিখতে শেখেনি, তারা আজ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব সার্চ করে পছন্দের বিষয় খুঁজে নিতে শিখে গেছে। পাশাপাশি আরও এক গভীর আশঙ্কার বিষয় রয়েছে।
তাই শিশুদের ইন্টারনেটে জড়িয়ে পড়া থেকে দূরে রাখতে বাবা-মাকে শিশুদের মোবাইল ব্যবহারের সময় বেঁধে দিতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে যেন ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেট-যুক্ত মোবাইল ফোনের অপব্যবহার না করে। স্কুলে স্কুলে ক্যাম্প করে ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সরকারিভাবেও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ ব্যাপারে জনতাকে সচেতন করা দরকার। শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। শিশুদের মনের বিকলতা ঘটলে আমাদের এ সমাজও বিকলাঙ্গ হয়ে পড়বে।
মন্তব্য করুন