সংখ্যায় কম হলেও গুণী মানুষ সর্বদাই থাকেন। তাই তো সমাজ এখনো সুন্দর। নীরবে-নিভৃতে তারা পরিপার্শ্বকে আলোকিত করার কাজে নিয়োজিত থাকেন। এমনই একজন মহীয়সী বেগম রুখসানা সামাদ। তিনি ১৯৫১ সালের ১৯ জুন ভারতের বর্ধমান জেলায় বিখ্যাত এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সৈয়দ জিল্লুর রহমান ও মাতা আমাতুল উমদা বেগম। তিনি ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। নম্রতা-ভদ্রতা, মানুষের প্রতি আন্তরিকতা, ভালোবাসা, মমত্ববোধ প্রতিটি গুণই তার মধ্যে ছিল।
বেগম রুখসানা সামাদ লন্ডনে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন। ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি ১৯৭১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পিএলসির প্রতিষ্ঠাতা বীমা শিল্পের কিংবদন্তি এম এ সামাদ এবং ঢাকা লেডিস ক্লাবের ৩৮ বছরের সফল সভানেত্রী বেগম ফওজিয়া সামাদের সুযোগ্য পুত্র বিজিআইসির বর্তমান চেয়ারম্যান তওহিদ সামাদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর থেকেই তাদের সংসার ছিল ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। এক স্বর্গরাজ্য।
তিনি শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নিবিড়ভাবে। সংগীতের প্রতি ছিল অগাধ ভালোবাসা। গান গাইতে পছন্দ করতেন। একসময় নিজেকে চলচ্চিত্র প্রযোজনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, লেডিস ক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অত্যন্ত বিনয়ী ও হাস্যোজ্জ্বল মানুষ ছিলেন। নরম সুরে কথা বলতেন। খুব মনোযোগ দিয়ে অন্যের কথা শুনতেন। সহজেই কারও আপনজন হয়ে যেতে পারতেন। অনেক সাধারণ মানুষের আশ্রয়স্থল ছিলেন তিনি। যে কোনো মানুষ তার কাছে কোনো আবদার নিয়ে গেলে কখনো ফিরিয়ে দিতেন না। তার ব্যবহার, আচার-আচরণে সবাই মুগ্ধ হতো। অসহায় মানুষের প্রতি সবসময় ছিলেন উদার। আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি তিনি অনেক অসহায় মানুষকে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন। ছিলেন প্রচারবিমুখ একজন মানুষ। জনসেবামূলক এসব কাজ করতেন নীরবে-নিভৃতে।
স্বামী তওহিদ সামাদের সব কর্মের পেছনে প্রধান উৎসাহ ও প্রেরণা ছিলেন রুখসানা সামাদ। প্রতিটি কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। তওহিদ সামাদ এডুকেশন সায়েন্টিফিক টেকনোলজি কালচারাল ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের তিনি প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান হিসেবে ধারাবাহিকভাবে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন।
রুখসানা সামাদ সংসারের দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করার পাশাপাশি স্বামীর ব্যবসা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যেভাবে সুনামের সঙ্গে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে সফলতার সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন, সেসব বিষয়েও ভূমিকা রাখতেন প্রতিনিয়ত। গতকাল ২৪ ডিসেম্বর ছিল রুখসানা সামাদের প্রয়াণ দিবস। ২০১৯ সালে তিনি এক পুত্র, তিন কন্যাসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রুখসানা সামাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার বিদেহী আত্মার চিরশান্তির জন্য পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করছি; তাকে যেন জান্নাত নসিব করেন। আমিন।
লেখক: ইভিপি, জনসংযোগ, বিজিআইসি পিএলসি