হৃদয় পান্ডে
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৭ এএম
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:১২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চারদিক

শিক্ষার্থীদের মানসিক অবক্ষয় ও প্রতিকার

শিক্ষার্থীদের মানসিক অবক্ষয় ও প্রতিকার

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটি ঘটনা শুধু একটি পরিবার বা শিক্ষাঙ্গনের জন্য শোকের কারণ নয়; এটি আমাদের শিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বড় ধরনের ফাঁকফোকরগুলোর দিকেও ইঙ্গিত করে। আত্মহত্যা নিছক একটি ঘটনা নয়; এটি দীর্ঘমেয়াদি মানসিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত প্রকাশ। এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি কেন হচ্ছে, কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমন চরমপন্থা অবলম্বন করছেন—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও তাদের চারপাশের পরিবেশ গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ বাড়ছে নানা কারণে। এটি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায় নয়। পারিবারিক চাপ, সমাজের প্রত্যাশা, কর্মজীবনের অনিশ্চয়তা এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত করে তুলছে। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে; যা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতিতে ভূমিকা রাখছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে নিজেদের টিকিয়ে রাখার চাপে থাকে। উচ্চ নম্বর পাওয়া, ভালো ফল, চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা—এসব দুশ্চিন্তা তাদের মানসিক চাপের অন্যতম প্রধান কারণ। অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজেদের শখ বা ব্যক্তিগত আগ্রহে সময় দিতে পারে না, বরং তারা একটি নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণের দৌড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে মানসিক বিশ্রামের সময় কমে যায়। বিষণ্নতা বা হতাশার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসিক সাপোর্ট সিস্টেমের অভাব রয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। যদিও কিছু প্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং সেবা চালু রয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যাগুলো লজ্জার কারণে প্রকাশ করতে চান না। এ সংকোচের কারণে তারা প্রয়োজনীয় সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়।

শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপের একটি বড় অংশ আসে পারিবারিক এবং সামাজিক প্রত্যাশা থেকে। বিশেষ করে বাংলাদেশে, পরিবার ও সমাজ শিক্ষার্থীদের ওপর উচ্চ প্রত্যাশা আরোপ করে। তাদের অনেক সময় এ চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষত যদি তারা একাধিক ক্ষেত্রে ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়। এ ধরনের চাপ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে এবং তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে কর্মজীবনে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু দেশের কর্মসংস্থানের বর্তমান পরিস্থিতি তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা এবং হতাশা তৈরি করছে। চাকরির বাজারে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা এবং মেধা অনুযায়ী কাজের সুযোগের অভাব তাদের আত্মবিশ্বাস এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে শঙ্কিত করে তোলে। অনেকেই নিজেদের অযোগ্য বলে ভাবতে শুরু করে। এটি তাদের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন করে এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতার দিকে ঠেলে দেয়।

শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা ঠিক রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। মানসিক সেবা সহজলভ্য করা, সচেতনতা কর্মসূচি চালানো এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সহানুভূতিশীল ও সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রফেশনাল কাউন্সেলর এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা উচিত, যারা শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ মোকাবিলায় কার্যকর পরামর্শ দিতে পারবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক অবনতির কারণ বহুমুখী ও জটিল। শিক্ষার্থীরা উচ্চ প্রত্যাশা, সামাজিক চাপ এবং ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে মানসিক সমস্যায় পড়ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়, পরিবার এবং সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব। মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে, শিক্ষার্থীদের সঠিক সময়ে সহযোগিতা প্রদান করলে আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের চর্চা জরুরি ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারে।

হৃদয় পান্ডে, শিক্ষার্থী

মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মসজিদে হারাম ও নববিতে আজ জুমা পড়াবেন যারা

ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের পর প্রথম সামরিক মহড়ায় ইরান

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন ফাঁদ তৈরি করছে উত্তর কোরিয়া

শুক্রবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

২২ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

শুক্রবারে মারা গেলে কি কবরের আজাব মাফ হয়?

বিচারককে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে

২২ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

স্বাস্থ্য পরামর্শ / রান্নায় সরিষার তেলে ঝুঁকি ও অসংক্রামক রোগ

১০

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আবারও দুর্ঘটনা, নিহত আরও ৩

১১

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ৫৮ শতাংশ মার্কিনি : রয়টার্স

১২

স্পেনের বাইরে লা লিগার ম্যাচ খেলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানালেন ফুটবলাররা

১৩

দুবাইয়ে যাওয়ার ৪ মাস পরই ৩ কোটির লটারি জিতলেন প্রবাসী

১৪

এনজো ফার্নান্দেজের মুখে রিয়াল মাদ্রিদের নাম, বাড়ছে গুঞ্জন

১৫

কেশবপুরে নারী সমাবেশ/ / ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি

১৬

সাভারে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দাওয়াতি মাসের শুভ উদ্বোধন

১৭

তারেক রহমান শিগগির দেশে ফিরবেন, নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীও হবেন : এ্যানি

১৮

দলবদলের বাজারে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর রেকর্ড ভাঙা খরচ

১৯

ধর্মগড় সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক চার বাংলাদেশি

২০
X