আমাদের জীবনে নদীর প্রভাব অপরিসীম। অথচ সেই নদী প্রতিনিয়ত অপরিসীম দুঃখ ভোগ করছে। দখল-দূষণ-পীড়ন যেন নদীর আজন্ম নিয়তি। নদী যে আমাদের জন্য নিঃস্বার্থে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছে; আমরা কেন যেন সেটি ভুলে যাই। নদীতে অসংখ্য জীববৈচিত্র্যের বসবাস। সেগুলোও দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে। একসময় অনেক বড় বড় নদীর দেখা মিললেও আজ সেসব নদীর গল্প শুধু কাগজ-কলমে ও মুরুব্বিদের মুখে শোনা যায়। প্রমত্তা, যৌবনদীপ্ত নদীগুলো আজ গল্প, স্মৃতিকথা কিংবা ইতিহাসের পাতায় স্থান নিয়েছে। নদী নিয়ে অসংখ্য সাহিত্য রয়েছে। সেগুলো পড়লেও আমরা বাঙালির জীবনে নদীর অপরিসীম প্রভাব অনুভব করতে পারি। একটি উপন্যাসের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। সেটি হলো, বিখ্যাত ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মণের অসাধারণ উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। এ বইটিতে নদীর সঙ্গে একটি জনপদের আত্মিক সম্পর্ক ছাপিয়ে বাঁচা-মরার সম্পর্কে উঠে এসেছে। বাঙালি ও নদীর সম্পর্কে নিয়ে অনেক বই রচিত হয়েছে।
নদীর এত এত প্রভাব থাকলেও আমরা দিনশেষে এ নদীকে হত্যা করতেও কুণ্ঠা বোধ করি না। নদী হত্যার উদাহরণ অনেক রয়েছে। অথচ সেসব নিয়ে আমাদের কোনো আলোচনা নেই। নেই কোনো প্রতিবাদ! বছরের পর বছর ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বুড়িগঙ্গা থাকে দূষণের শীর্ষে। এ নদীর তীর দিয়ে হাঁটলেও যেন দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। কিন্তু আমরা কয়জন এ নদীর তীরে গিয়ে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছি! নদীটি হতে পারত ঢাকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। পৃথিবীর অনেক রাজধানীই তো নদীর তীরে। কিন্তু আমরা সেগুলোকে দূষিত দেখি না। বড় বড় উৎসবে এ নদীগুলোর তীর বর্ণিল আলোকসজ্জায় ভরে ওঠে। আর আমাদের বুড়িগঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে দম নেওয়াই কষ্ট হয়ে যায়! আর কত দূষণ-যন্ত্রণা ভোগ করলে বুড়িগঙ্গা মুক্তি পাবে? বুড়িগঙ্গার নাম যখন মনে আসল, তার সঙ্গে আরেকটি নদীর নামও স্মৃতিতে ভেসে উঠল। যে নদীটি নিয়ে মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছিলেন, ‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে/সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।’ বলছিলাম, কপোতাক্ষ নদের কথা। এ নদীটিও আজ মরণ যন্ত্রণায় ভুগছে।
ওপরে দুটি নদীর নাম উল্লেখ করেছি। এমন অসংখ্য নদনদী রয়েছে। যেগুলো প্রতিনিয়ত মৃত্যু যন্ত্রণায় পার করছে সময়। নদীর মরণদশা রচিত কেন হবে মাছে-ভাতে বাঙালির দেশে? দখলদার ও কিছু অসাধু মানুষের স্বার্থ চরিতার্থের বলি হচ্ছে অনেক নদী। প্রকাশ্য দিবালোকে নদী হত্যার আয়োজন চলছে! এসব দেখার কি কেউ নেই? নদী রক্ষায় এখনই সবাইকে সজাগ হতে হবে। নদী বাঁচলে, বাংলাদেশ বাঁচবে। তাই দেশের সব সচেতন নাগরিকের উচিত এখনই নিজ নিজ এলাকার নদী রক্ষায় এগিয়ে আসা। নদী হত্যা রোধে প্রতিবাদ জানানো। ব্যক্তিপর্যায় থেকে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে নদী রক্ষায়। আমরা সবাই সচেতন হলে কেউ আর নদী দখলের দুঃসাহস দেখাবে না। আসুন, সবাই নদী বাঁচাতে এগিয়ে আসি।
শুধু নদী রক্ষাই নয়, নদীর যত্ন নেওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে যার যার অবস্থান থেকেও সচেতন হতে হবে। নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। নদী দূষণের শিকার হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। জনসচেতন বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তরুণ শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি নদী হত্যা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। প্রশাসনের কাছে বিনীত অনুরোধ, নদী রক্ষায় আপনারা কঠোর পদক্ষেপ নিন।
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন