আজ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এটা বর্তমান সরকারের প্রথম বাজেট। তাই নানা কারণে দেশ ও জাতির জন্য এ বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাই এবার যে সংসদের বাজেট উত্থাপন করা হচ্ছে না, এ কথা বলাই বাহুল্য। জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হবে ভিন্ন আঙ্গিকে। সংসদ না থাকায় এবারের বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে। আজ সোমবার বিকেল ৪টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট উত্থাপন করবেন। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর সরকারি ব্যয় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা চলতি বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি কয়েক বছর ধরে নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব, মুদ্রার বিনিময় ও সুদের হার ক্রমাগত বৃদ্ধি, সর্বক্ষেত্রে সুশাসন ও ন্যায়নীতির নির্বাসন এবং সর্বগ্রাসী লুটপাটের কারণে দেশের আর্থিক খাত ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য শুধু ভূরাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করা চলে না, পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সর্বগ্রাসী লুটপাট ও বিদেশে টাকা পাচারও অনেকাংশে দায়ী। ফলে বাজেট বাস্তবায়নে অপচয় রোধ, অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ এবং সুশাসন নিশ্চিতে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংক খাত সংস্কারে নিতে হবে বড় ধরনের উদ্যোগ।
সরকার গঠিত অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সদস্য ও অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান বলেছেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার যদি পুরোনো ছকে একটু এদিক-সেদিক করে বাজেট করে, তাহলে আশাহত হব। পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য একটি উদাহরণ তৈরি করার সুযোগ অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে ছিল। তারা বৈষম্যবিরোধী চেতনায় একটি কর্মসংস্থানমুখী ও জনকল্যাণের বাজেট তৈরি করতে পারত। এ ক্ষেত্রে সময়ের অভাবের অজুহাত দেওয়া হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ, সরকার ৯ মাস সময় পেয়েছে।’
আমরা মনে করি, ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। মূল্যস্ফীতিকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, গ্রাম হোক কিংবা শহর, মূল্যস্ফীতি সব জায়গার মানুষকেই আঘাত করছে। নিত্যপণ্যের বাজার অনেক দিন থেকে চড়া। অধিকাংশ ভোগ্যপণ্য মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। মূল্যস্ফীতির কারণে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। তাই নিত্যপণ্যের বাজার কীভাবে স্থিতিশীল রাখা যায়—এ ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি কোনো প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ের আগে তা জনগুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কি না, তা বিবেচনা করতে হবে। একই সঙ্গে বাজেটের সফল বাস্তবায়নে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে মনোযোগ বাড়াতে হবে। রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধিতে যেমন জোর দিতে হবে, তেমনি আমদানিতেও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ প্রয়োজন। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমরা অর্থনীতি ও বাজেটে বাস্তবায়নে প্রতিটি ক্ষেত্রে অপচয়, অদক্ষতা ও সুশাসনের অভাব প্রত্যক্ষ করেছি। এসব সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
মন্তব্য করুন