তিন দফা দাবিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) সারা দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন কয়েক দিন ধরে। ফলে দেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পুরোপুরি স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মতো গতকাল শুক্রবারও শিক্ষার্থীরা পালন করেছেন সর্বাত্মক ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি। সংশ্লিষ্ট শিক্ষায়তনের এ স্থবিরতা আমাদের কারও কাছেই কাম্য নয়।
মূলত গত মঙ্গলবার থেকে এ আন্দোলনের সূত্রপাত। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার এবং ডিপ্লোমাধারীদের বিরোধের মধ্যে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে বুধবার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা, যার নেতৃত্বে ছিল বুয়েট। এদিন একপর্যায়ে তারা মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাত্রা শুরু করে। পথে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়ে পুলিশ লাঠিপেটা, জলকামান, টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন ছাত্র ও পুলিশ সদস্য আহত হন। এদিন আবার শাহবাগে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে পাঁচ দাবি দেন তারা, যেখানে পুলিশি হামলার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। পরে রেলভবনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন দুই উপদেষ্টা। ডিএমপি কমিশনার রাতে শাহবাগের শিক্ষার্থীদের জমায়েতে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে চলে গেলেও বৃহস্পতিবার সব প্রকৌশল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার কোনো ধরনের ক্লাস পরীক্ষা হয়নি। এর আগে বুধবারের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে দেশের একাধিক প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে বুয়েটের স্নাতক পর্যায়ের বিভিন্ন লেভেল ও টার্মের সব পরীক্ষা আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।
এদিকে সরকার ও ছাত্রপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি করা হয় এ পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের পেশাগত দাবিগুলোর যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাইর জন্য। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের চড়াও হওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে ডিএমপি। বৃহস্পতিবার অনির্দিষ্টকালের জন্য শাটডাউন বলবৎ থাকার ঘোষণাসহ দেশব্যাপী বিভাগীয় প্রকৌশলী সমাবেশ ও সপ্তাহব্যাপী সমাবেশ শেষে ঢাকায় জাতীয় মহাসমাবেশ করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, ছাত্রদের আন্দোলনটি যে তিন দাবি নিয়ে শুরু হয়, তা হচ্ছে—নবম গ্রেড সহকারী প্রকৌশলী পদে শুধু পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ ও ন্যূনতম যোগ্যতা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার করা; দশম গ্রেডে যেন উচ্চ ডিগ্রিধারীরাও আবেদন করতে পারেন এবং শুধু বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং যারা সম্পন্ন করবেন, তারাই যেন নামের আগে প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ার) লিখতে পারেন।
আমরা মনে করি, যে কোনো দাবিদাওয়া জানানোর অধিকার যেমন গণতন্ত্রে স্বীকৃত; আবার তা গণতন্ত্রের সৌন্দর্যও। এ ক্ষেত্রে দাবিদাওয়া যারা জানাবেন, তাদের যেমন দায়িত্বশীল হতে হবে; একই সঙ্গে দায়িত্বশীল ও আন্তরিক হতে হবে রাষ্ট্রকেও। আন্দোলন যেন সহিংস রূপ না নেয়, এ দায়িত্ব যেমন রয়েছে একপক্ষের; একই সঙ্গে আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের কোনো বাহিনী যেন অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ না করে—সজাগ থাকতে হবে সেদিকেও। বুধবার শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের যে অভিযোগ উঠেছে, তা অবশ্যই নির্মোহভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের দাবিদাওয়ার বিষয়টি যেন আলোচনার মাধ্যমে সঠিক যাচাই-বাছাই করে সুরাহা করা যায়, সেদিকে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া জরুরি। মনে রাখতে হবে, যে কোনো সমস্যা বা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনার বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যাশা, যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে, তা আলোচনার মাধ্যমে অচিরেই কাটবে।
মন্তব্য করুন