কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
[দ্বিতীয় পর্ব]

বিপ্লব কেন বারবার ব্যর্থ হয়

আমীর খসরু
বিপ্লব কেন বারবার ব্যর্থ হয়

গণঅভ্যুত্থান ও বিপ্লবের পার্থক্য

গণঅভ্যুত্থান ও বিপ্লবের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের বৈশিষ্ট্য হলো যে, কোনো বিষয়ে ক্ষোভ থেকে গণঅভ্যুত্থানের জন্ম নেয়। এতে জনগণের অংশগ্রহণ থাকে। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নানাভাবে প্রকাশিত হতে পারে। এটা সামাজিক বা অর্থনৈতিক অথবা রাজনৈতিক হতে পারে। গণঅভ্যুত্থান বড় আকারের হতে পারে। আবার বিষয়কেন্দ্রিক স্বল্পমাত্রারও হতে পারে। বিভিন্ন ঘটনার ধারাবাহিকতা এ ক্ষেত্রে কারণ অথবা অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। এটি সহিংসও হতে পারে। মূল বিষয় হলো, যে বিষয়টি বা বিষয়গুলো নিয়ে জনগণ অংশগ্রহণ করে তার সমাপ্তি হলে গণঅভ্যুত্থান সাধারণত থেমে যায়। গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে রাষ্ট্রব্যবস্থার কাঠামোগত বা আমূল রূপান্তরের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, যা বিপ্লবের আছে।

গণঅভ্যুত্থান রাষ্ট্রক্ষমতা দখল বা রাষ্ট্রের মৌলিক পরিবর্তনের জন্য হয় না। কিন্তু বিপ্লবে এগুলো বিদ্যমান। প্রতিটি বড় মাত্রার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে বিপ্লবের বীজ থাকে—তবে তা হতে হবে সুনির্দিষ্ট কারণ সাপেক্ষে।

বিপ্লব

বিপ্লব যে শুধু মার্কস-লেনিন অর্থাৎ শ্রেণিসংগ্রামের মাধ্যমে এবং শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে হতে হবে, এমন নয়। বুর্জোয়া বিপ্লবও হতে পারে। যেমন ফরাসি বিপ্লব। ফরাসি বিপ্লব ছিল বুর্জোয়া বিপ্লব, যা মধ্যযুগীয় বর্বরতা ও সামন্ত ব্যবস্থাকে বিপ্লবী পন্থায় বিদায় দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিল ‘বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক’ ব্যবস্থা। এ কারণেই ফরাসি বিপ্লব মহিমান্বিত এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। কার্ল মার্কস The Bourgeois and the counter Revolution, যা ১৮৪৮ সালে প্রকাশিত হয়, সেই লেখায় ফরাসি বিপ্লব সম্পর্কে বলেছেন, ‘বুর্জোয়ারা বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় বুর্জোয়ার বিজয় ছিল এক নতুন সমাজ ব্যবস্থার বিজয়। সামন্ত সম্পত্তির ওপর বুর্জোয়া সম্পত্তির বিজয়।’ ওই সময়ে শুধু যে ফরাসি দেশে বিপ্লব হয়েছে, তা নয়। ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধ অথবা আমেরিকান স্বাধীনতা যুদ্ধকে বুর্জোয়া বিজয় ও বিপ্লব বলা যায়।

অনেকে চীন, রাশিয়া, কিউবা, কম্বোডিয়া বা অন্যান্য দেশের ১৯ শতকীয় বিপ্লব ছাড়া কোনো বিপ্লবকে বিপ্লব মনে করেন না। উনিশ শতক আর দুই হাজার শতকের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, তা সময় ও পরিস্থিতির—তা কু-মতলবে বুঝতে রাজি হন না—সেই তারাই। কাজেই তারা বিপ্লবকে বিপ্লব বলে মানতে নারাজ এবং বিরোধী।

বিপ্লবের প্রধান শর্ত রাষ্ট্র কাঠামোর বদল বা এর মৌলিক পরিবর্তনের চেষ্টা। বিপ্লব দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। চে গুয়েভারার বিখ্যাত মন্তব্য ‘বিপ্লবের কোনো মৃত্যু নেই। বিপ্লব মরে না।’ এ মন্তব্যই মনে করিয়ে দেয়, ‘বিপ্লবের চেতনা, রাষ্ট্র, সমাজ বা রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা—একটি অবিচল শক্তি। এর অর্থ দাঁড়ায়, বিপ্লব আপাতত বা সাময়িক নানা চক্রান্তে ব্যর্থ, নস্যাৎ করা হলেও এর পেছনের অন্তর্নিহিত কারণ বা পরিস্থিতি ও প্রেরণাগুলো অবিচল, অব্যাহত থাকবে। আর ভবিষ্যতে জনগণ আবার বিপ্লব গড়ে তুলবে প্রয়োজনমতো।

গণঅভ্যুত্থান সাময়িক, কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়কেন্দ্রিক এবং এটা লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায়।

বাংলাদেশে ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবের মূল আদর্শ হচ্ছে, তারা রাষ্ট্র কাঠামোর বদল চেয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চেয়েছেন। তারা সংবিধানসহ সব মৌলিক বিষয়ের বিলোপ করে ন্যায়, ইনসাফ ও সাম্যের ভিত্তিতে নতুন ব্যবস্থা চেয়েছেন। এজন্য তারা ‘সেকেন্ড রিপাবলিকের’ কথা বলেছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্য, এটি বুঝতে না পারার বিষয়টি আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অদক্ষতা, অজ্ঞতাজনিত বুঝতে না পারা বা কু-মতলবের একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।

বর্তমানে বড় একটি দলের বড় একজন নেতা যখন প্রশ্ন তোলেন—বিপ্লবী দল ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছাড়া বিপ্লব হয় না। তার ভাষ্য হচ্ছে ১৯ শতকের। তিনি চীন, রাশিয়া, কিউবা বা কম্বোডিয়ার উদাহরণ দেন। অতীতমুখী চিন্তাভাবনা বা মতলবি মনোভাব থেকে এটা বলা হয়। ফরাসি বিপ্লব বা জার্মান বিপ্লবের নাম উচ্চারণ তারা করেন না। সম্ভবত এ বিষয়ে বোঝাপড়ার ঘাটতি বা না জানার বিষয় থাকতে পারে।

জার্মান বিপ্লব, যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার। তাদের নেতৃত্বে মূলত চার্চের প্রভাব থেকে মুক্তির আন্দোলন শুরু হয় ১৩শ শতক থেকে। জার্মানিসহ অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশে প্রাধান্য বিস্তার করছিল ক্যাথলিক চার্চ, তা ছিল সামন্ততান্ত্রিক সমাজের অতিগুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিষ্ঠান ও ভাবাদর্শীয় হাতিয়ার। এই চার্চ এমন শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে রূপ নিল যে, প্রজাদের বিশাল অঙ্কের অর্থ এই চার্চকে দিতে হতো। দিনে দিনে চার্চ আরও এমন ক্ষমতাশালী হয়ে উঠল যে, তারা বেশি বেশি অর্থ দাবি করত এবং অত্যাচার-নিপীড়ন করত। তারা ‘স্বর্গের সার্টিফিকেট বিক্রি ও বরাদ্দ’ পর্যন্ত শুরু করল। কিন্তু অধিপতি শ্রেণির একটা সংগঠন হিসেবে তারা ক্রমশ বিস্তার লাভ করেছিল। এর বিরুদ্ধে শুরু হয় নগরকেন্দ্রিক মানুষ ও বুর্জোয়া শ্রেণির আন্দোলন। এই আন্দোলন একপর্যায়ে রূপ নেয় সামন্ততন্ত্রবিরোধী—সঙ্গে সঙ্গে চার্চের বিরুদ্ধেও। কৃষক সম্প্রদায় ও শহুরে নিম্নবিত্তরাও এতে শামিল হলো। মার্টিন লুথার একাই যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, তা নয়। লুথারের সঙ্গে সঙ্গে অন্য সংস্কারবাদীরা তাত্ত্বিক ও মাঠপর্যায়ে এই আন্দোলনের সূচনা করেন। ইউরোপজুড়েই তখন এই আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। তারা যুক্তি দেন—‘রাষ্ট্র গির্জার কাছে নয়; বরং গির্জারই উচিত ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধীনে থাকা। রাষ্ট্র গির্জার কাছে নয়, ঈশ্বরের কাছে জবাবদিহি করবে।’ সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ল। তবে মূল ঘটনাটি ঘটল ১৫২৫ সালে—ব্যাপক কৃষক বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে। এই বিদ্রোহে সমর্থন দিল নতুন গড়ে ওঠা উঠতি অর্থবিত্তশালী শ্রেণি। চার্চের ক্ষমতা কমার সঙ্গে সঙ্গে খ্রিষ্টান ধর্মের বিভক্তি হয় নানাভাবে। মার্টিন লুথারকে প্রোটেস্টাইন খ্রিষ্টধর্মের মূল প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয়। খ্রিষ্টান ধর্ম মূলত ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্টাইন অর্থাৎ দুভাগে ভাগ হয়। এ ছাড়া আরও কিছু কিছু ছোটখাটো বিভাজন রয়েছে।

এই পুরো বিষয়টিকে কি আমরা গণঅভ্যুত্থান বলব? না বিপ্লব বলব? অবশ্যই বিপ্লব বলব। অথচ এই পুরো ঘটনায় একক কোনো নেতৃত্ব ছিল না। কৃষক সমাজ আন্দোলন করেছে, সমর্থন দিয়েছে নব্য অর্থবিত্তশালী শ্রেণিও। শুধু জার্মানি নয়, ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের বহু দেশে এ ধরনের বিপ্লবের ঘটনা ঘটেছে।

বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখুন রাজনৈতিক মতবাদের ইতিহাস-১ প্রথম খণ্ড, প্রগতি প্রকাশনী, মস্কো, ১৯৮৭ (A History of Political Doctrines); ঢাকায়-অধুনা প্রকাশনী; ডিসেম্বর ২০১৪; পৃ-২৩৬-২৪৬)

ফরাসি বিপ্লবের তাত্ত্বিক ও দার্শনিক ছিলেন জ্যঁ জঁ রুশো, ভলতেয়ার, মতোকু। আর নেতা ছিলেন একাধিক। যেমন—রোবেসপিয়ের, জর্জেস জাস্টন, পবেব সিইয়েস, লাফায়েত। একক নেতা যেমন ছিলেন না, তেমনি একক কোনো কেন্দ্রও ছিল না। শুধু মূল প্রতিপাদ্য ছিল Liberty, Equality and Faternity বা স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী। বিপ্লবের কারণগুলো হচ্ছে—১. রাজা ষোড়শ লুই-এর অযোগ্যতা, পাশাপাশি বিলাসী জীবন। যাতে বিপুল অর্থ ব্যয় হতো, যা প্রজাদের করের ওপরই নির্ভর করত। এতে চেপে বসে মাত্রাতিরিক্ত করারোপ। ২. সামন্ত প্রথার শোষণ—অর্থাৎ ফ্রান্সে সামন্ত প্রথা বিদ্যমান ছিল, যেখানে অভিজাত ও চার্চের যাজক শ্রেণি ভূমি ও সম্পদের মালিক ছিলেন। কৃষক ও সাধারণ মানুষ তাদের দ্বারা মাত্রাতিরিক্ত করারোপসহ নানা অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হতো। ৩. সামাজিক বৈষম্য ফরাসি সমাজে বিভক্তি ছিল স্তর বিন্যাসে—প্রথমত, চার্চের যাজক; দ্বিতীয়ত, অভিজাত শ্রেণি; তৃতীয়ত, সাধারণ মানুষ। এদের ‘এস্টেট’ বলা হতো। তৃতীয় এস্টেট বা কৃষকসহ সাধারণ মানুষই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু তারা কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা বা সুযোগ-সুবিধা পেত না। তাদের ভাগ্যে ছিল অভিজাত ও যাজক শ্রেণির অত্যাচার। ৪. তীব্র অর্থনৈতিক সংকট। ৫. নবজাগরণ বা রেনেসাঁর (Renaissance) আদর্শের প্রভাব তাদের উদ্দীপ্ত করেছিল। এ ক্ষেত্রে রুশো, ভলতেয়ারের মতো দার্শনিকদের উদ্দীপনাময় লেখা ও তাত্ত্বিক ভিত্তি পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তোলে। আর ফরাসি বিপ্লবকে করে তোলে অনিবার্য ও মহিমান্বিত।

এই পর্যায়ে আরেকটি বিষয়ে আলোচনা খুবই যুক্তিসংগত মনে করি। আমাদের দেশের অনেক বয়স্ক বা খুবই সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা—রক্তাক্ত জুলাই আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের ‘ছেলে-পেলে’ বাচ্চা বা অপরিপক্ব বলে মন্তব্য করেন। তাদের অবশ্যই জানা উচিত, রাজনৈতিক পরিপক্বতা বা নেতৃত্বের যোগ্যতার কোনো বয়স নেই। কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো প্রধানমন্ত্রী হন মাত্র ৩২ বছর বয়সে। প্রকৃত অর্থে বিপ্লবের প্রধান হিসেবে মাত্র ২৬ বছর বয়সে বিপ্লব সম্পন্ন করেন। লিবিয়ার মোয়াম্মার গাদ্দাফি বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা নেন ২৭ বছর বয়সে। বিপ্লবী চে গুয়েভারাও বিপ্লবের নেতা হন ২৫ বছরে এবং কিউবার মন্ত্রী হন মাত্র ৩০ বছর বয়সে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা গ্রহণ করেন ৩৫ বছর বয়সে। বর্তমান সময়ে অর্থাৎ দুই হাজারে যদি আসি, তাহলে দেখা যাবে বুরকিনা ফাসোর বিপ্লবের প্রধান পুরুষ ইব্রাহিম ক্রাউরে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে রাষ্ট্রপ্রধান হন। আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বয়স এখন মাত্র ৩৭ বছর। এ রকম অসংখ্য উদাহরণ মিলবে—আগে বা বর্তমানের। রাজনীতিতেও অবসর বা রিটায়ারমেন্ট প্রথা থাকা উচিত। প্রবীণ বা বয়োবৃদ্ধ হলেই যে রাজনীতির ‘ঝুনা বা পরিপক্ব নারকেল’ হওয়া যাবে, এমন কোনো কথা নেই। সবাই মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী হবেন, তেমন কোনো গ্যারান্টি নেই। শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম মন্ত্রী হয়েছিলেন মাত্র ৩৩ বছর বয়সে। তিনি আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের সাধারণ সম্পাদক হন মাত্র ৩১ বছর বয়সে। মাত্র ৫৪ বছর বয়সে তিনি যা কিছু বৃহৎ রাজনৈতিক অর্জন করেছেন, তা যথেষ্টের চাইতেও অনেক বেশি। কাজেই রাজনীতিতে পরিপক্ব বা প্রবীণ বয়োবৃদ্ধ অথবা ‘অভিজ্ঞতার ভারে নুয়ে পড়েছেন’ বলে কোনো কথা নেই। দুনিয়ায় যা কিছু মহত্তম ও আকর্ষণীয় কাজগুলো করেছে, তা তরুণ সমাজই করেছে।

জুলাই বিপ্লব ২০২৪ এই কারণেই ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় যে, এ বিশাল ঘটনাটির নায়করা কেউই ২৫ থেকে ৩০ বছরের বেশি নন। তাদের ওপর সর্বস্তরের জনগণ, কৃষক-শ্রমিকসহ সবাই আস্থা রেখেছে। অথচ যারা ছেলেপেলে বা নাবালক বলে বিপ্লবের নায়কদের কটাক্ষ করেন—সেই বয়োবৃদ্ধ-প্রবীণ রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপরে ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৫ বছরে ব্যর্থ আন্দোলনে জনগণ আস্থা রাখতে পারেনি। কাজেই সর্বজনের আস্থা অর্জন করতে হয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে—বয়সের মাপকাঠিতে নয়।

মূলত আলোচনা করা হচ্ছে তিনটি বিষয়ে—১. জুলাই-আগস্টের সংগ্রাম কেন গণঅভ্যুত্থান নয়; বিপ্লব বা অন্তত বিপ্লবের প্রথম ধাপ, ২. বড় ধরনের আন্দোলন-সংগ্রাম কেন বিপ্লব হয়ে উঠতে পারল না এবং ৩. বিপ্লবকে বা বিপ্লবের প্রথম ধাপকে অথবা সম্ভাবনাকে বারবার ‘নিহত’ করল কে বা কারা?

ফিরে দেখা—

ব্রিটিশ অবিভক্ত বাংলায় প্রথম উপনিবেশবাদবিরোধী যে কৃষক আন্দোলনগুলো হয়েছিল, সে সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করা প্রয়োজন। পলাশী যুদ্ধে পরাজয় অর্থাৎ ১৭৫৭ সালের পরপরই অর্থাৎ ১৭৬০ অর্থাৎ ব্রিটিশ উপনিবেশের পুরো গোড়াপত্তনের পাঁচ বছর পরই অবিভক্ত বাংলায় কৃষক সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়। আর এই সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহ চলে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত। বাংলা প্রভিনস বলতে তখন বাংলা-বিহার-ত্রিপুরাসহ বিশাল এলাকা ছিল। দফায় দফায় বিভিন্ন স্থানে আলাদাভাবে এই সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহ হয়। শমসের গাজী, ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরানী, ফকির বিদ্রোহের নায়ক ফকির মজনু শাহ, নুরল দীন থেকে শুরু করে তিতুমীর, হাজী শরিয়তউল্লাহসহ অনেক নেতা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ত্রিপুরার শমসের গাজী ৮ হাজার সদস্যের এক সুশিক্ষিত, তখনকার দিনে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাল্টা বা প্যারালাল সৈন্য বাহিনী গঠন করে সবচেয়ে ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও সুসংগঠিত কৃষক আন্দোলন করেছিলেন, যাকে ‘নীলকর বিদ্রোহ’ বলা হয়—যার সময়কাল ১৮৫৮-৫৯ থেকে ১৮৬০; তাও সফল হয়নি। নীল বিদ্রোহ আমার দৃষ্টিতে বাংলায় প্রথম ব্রিটিশ উপনিবেশবাদবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লব। ব্যর্থ বিপ্লবের কারণ সম্পর্কে প্রখ্যাত গবেষক সুপ্রকাশ রায় বলেন, আধুনিক ভারতকে একদিকে কৃষক বিদ্রোহগুলোকে দান করিয়াছে—‘বৈদেশিক শাসন এবং দেশীয় শাসক গোষ্ঠীর’ বিদ্রোহের বিরুদ্ধে আপস না করা আত্মসমর্পণহীন স্বাধীনতা সংগ্রামের আদর্শ; আর অপরদিকে শিল্পপতি, মালিক গোষ্ঠী, জমিদার ও মধ্য শ্রেণি তাহাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়া দান করিয়াছে—‘বৈদেশিক শাসকশক্তির নিকট আত্মসমর্পণ ও উহার সহিত আপস স্থাপনের আদর্শ।’ [সুপ্রকাশ রায়; ভারতের কৃষক বিদ্রোহ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম; পৃ-মুখবন্দ ২৩] [এটা প্রমাণ করে যে, বিপ্লব-বিদ্রোহবিরোধী ও আত্মসমর্পণকারী সব সময়ে থাকে]।

একইভাবে ১৮৫৭ সালের ভারতজুড়ে সিপাহিদের সশস্ত্র সংগ্রামকেও শুধু নিছক একটি বিদ্রোহ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে—‘উপনিবেশকৃত ইতিহাসে’। ১৮৫৭ সালের সিপাহি সংগ্রামকে কার্ল মার্কস ব্রিটিশ ভারতের ‘প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম’ বলে অভিহিত করেছেন। কার্ল মার্কস বলছেন, ‘ব্রিটিশ অনুপ্রবেশকারী, দখলদার লুণ্ঠনজীবীদের লুটপাটের নীতি এবং এ লক্ষ্যে তারা (ব্রিটিশ) ঔপনিবেশিক বর্বরতার পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে এবং এটাই ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের কারণ।’ [marx... The Indian Revolt; New York Tribune; Sept-16, 1857] (চলবে)

লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

সিপাহি সংগ্রামের মতো ইতিহাস সৃষ্টিকারী এবং বিশাল ঘটনাবলি বাংলাসহ ভারতজুড়ে ঘটছে; ঠিক তখনই ব্রিটিশের এদেশীয় দালাল ও আত্মসত্তা-বিলোপকারী একদল ভারতীয় ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে কঠিন হাতে এই ‘বিদ্রোহ’ দমনের জোর পরামর্শ দেয়। বিশেষ করে ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময়ে লাভবান দালাল শ্রেণি এতে নেতৃত্ব দেয়। অথচ ১৮৫৭ সালের সিপাহিদের সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে হিন্দু-মুসলিম, শিখসহ ভারতীয়দের সর্বাত্মক ও মিলিত ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের সশস্ত্র আন্দোলনের ফসল ছিল এটি। বিশেষ করে হিন্দুদের বর্ণ-জাত-পাত প্রথা ভাঙার বিশাল ঘটনাটি ঘটে ১৮৫৭ সালের সিপাহি সংগ্রামে।

তবে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন—বাংলার কৃষক সংগ্রাম এবং সিপাহিদের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিপূর্ণ বিপ্লব হয়ে উঠতে পারেনি প্রধানত কয়েকটি কারণে—১. ভারতীয় দালাল শ্রেণির বিরোধিতা, ২. জনসম্পৃক্ততা সৃষ্টি করতে না পারা, ৩. কেন্দ্রগুলোর মধ্যে যোগাযোগের সমন্বয়হীনতা, ৪. দুর্বল মোগল সম্রাটের ওপর একাংশের সিপাহিদের অতিমাত্রায় নির্ভরতা, ৫. আর্থিক সংকট, ৬. একযোগে সংগ্রাম শুরু না করা; যাকে Staggered বা ধাপে ধাপে বা নানা প্রান্ত থেকে সংগ্রাম—একেক সময় শুরু করা বা অ-বিকেন্দ্রায়িত সংগ্রাম।

একইভাবে অসংখ্য উপনিবেশবাদবিরোধী সংগ্রাম করেছেন কৃষক, ভেঙে পড়া শ্রমিক শ্রেণি, সাধারণ মানুষ। এই সংগ্রামী আন্দোলন যার কথার ভিন্ন অর্থাৎ জাল বয়ান আছে উপনিবেশকৃত ইতিহাসে। কেন বারবার বিপ্লবকে হত্যা করা হয়—এ ক্ষেত্রে উত্তর-উপনিবেশিকতার বিষয়ে সামান্য আলোচনা প্রয়োজন। প্রয়োজন এ কারণে যে, ১৯৪৭-এর পর থেকে ’৭১ এবং পরবর্তীকালেও অর্থাৎ বাংলাদেশে যেসব বিপ্লব হতে পারার সম্ভাবনা সৃষ্টিগুলোকেও কু-মতলবে, সুকৌশলে হত্যা করা হয়েছে।

সংক্ষেপে উত্তর উপনিবেশবাদ হচ্ছে—উপনিবেশের অনুপস্থিতিতে উপনিবেশ থেকে আপাতমুক্ত দেশটির সমাজে, রাষ্ট্রে, অর্থনীতিতে, সংস্কৃতিতে, ইতিহাসে, শিক্ষায়, শাসনে-শোষণে অর্থাৎ সর্বস্তরে উপনিবেশের তীব্র প্রভাবের বিদ্যমানতা। এ প্রভাব এমন সূক্ষ্ম যে, সাধারণ মানুষ বুঝতেও পারে না যে, তারা ওই প্রভাব বলয়ের মধ্যে রয়ে গেছে। উপনিবেশবাদের মনস্তাত্ত্বিকসহ সামগ্রিক প্রভাব দেশজ অর্থাৎ আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র আর সমাজের থাকে না। এক কথায়—পরিস্থিতি এমনভাবে তৈরি করা হয়—যাকে Illiusion of Colonialism বা উপনিবেশবাদের প্রতি মোহজাল সৃষ্টি করে।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ‘ঐক্যবদ্ধ ভারত’ তত্ত্ব কিংবা হিন্দুদের জাত-পাত প্রথাও থ্রিলস উপনিবেশবাদের তৈরি বয়ান এবং সৃষ্টি। তারা তৎকালীন ভারতের অর্থনৈতিক শোষণ অথবা শিল্প খাতই ধ্বংস শুধু করেনি, দেশজ রাজনৈতিক পদ্ধতিকেও বিনষ্ট করেছে।

[বিস্তারিত আলোচনার জন্য, R Palme Dutt; India Today, victor Crollance ltd., London 1940 এবং Shashi Tharoor; Inglorious Empire; Scribe Publication, Victoria, Australia; 2017]

উত্তর উপনিবেশবাদ সম্পর্কে এসে সেজায়ার তার বিখ্যাত বই ‘ডিসকোর্ট অন কলোনিয়ালিজম’-এ বলেছেন, ‘আমি লাখ লাখ মানুষের কথা বলছি, যাদের মধ্যে চতুরতার সঙ্গে ভয় এবং হীনম্মন্যতা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাদের অন্তরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে হতাশা এবং কম্পিত অবস্থায় থাকতে, হাঁটু গেড়ে বসতে এবং চামচার মতো আচরণ করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’ (বিস্তারিত আলোচনার জন্য ফ্রাঙ্ক ফানোর Black Skin, white Mask বইয়ে। যার বাংলা অনুবাদ হয়েছে।

এসব হচ্ছে উত্তর-উপনিবেশবাদের কর্মকাণ্ড। এই পরিস্থিতি অর্থাৎ উত্তর-উপনিবেশবাদ আমাদের ইতিহাসকে পর্যন্ত বদলে দিয়েছে। বিপ্লব কেন বারবার ‘নিহত’ হয়, এর বিশ্লেষণের জন্য ইতিহাসকে কীভাবে উত্তর-উপনিবেশবাদ বা পোর্ট কলোনিয়ালিজম পাল্টে দেয়, তা ব্যাখ্যা করা খুবই জরুরি। প্রখ্যাত জন ইতিহাসবিদ বা পিপলস হিস্টোরিয়ান হাওয়ার্ড জিল এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি বলছেন, ‘অতীত বা ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার করা একটা কঠিন কাজ নয়। আবার অপছন্দের মন্তব্য না শোনার জন্য সত্যিকে আড়াল করাটাও সহজ।’ (এ পিপলস হিস্ট্রি অব দি ইউনাইটেড স্টেটস, বাংলা অনুবাদ—আহমেদ হেলাল, অঙ্কুর প্রকাশনী, পৃ-৩৪)

হাওয়ার্ড জিনসহ ইতিহাসবিদ বা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, উত্তর-উপনিবেশবাদ ইতিহাসকে বদলে দেয়, সত্যকে ধামাচাপা দেয়, লুকিয়ে রাখাসহ হেন কাজ নেই, যা করে না। আর এটা সুচারুরূপে সম্পন্ন করে—দেশে দেশে উপনিবেশ যে নিকৃষ্ট উত্তরাধিকার রেখে গেছে সেই দালালগোষ্ঠীর মনস্তাত্ত্বিক শিষ্যরা। হাওয়ার্ড জিন বলছেন, ইতিহাসে সভ্যতার বিকাশ ও প্রগতির নামে যারা ইতিহাস ধ্বংস করেছে—তারা আগ্রাসন, যুদ্ধ, গণহত্যার নাম দিয়েছে ‘প্রগতি’। কারণ তারা আগ্রাসনকারী, তাদের সরকার, মহান নেতা। সবচেয়ে দামি এবং উল্লেখযোগ্য কথাটি বলেছেন হেনরি কিসিঞ্জার তার প্রথম বই A world Restored-এ। তিনি বলেন, ‘ইতিহাস হলো একটা পুরো জাতির বা দেশের স্মৃতি। কোনো ব্যক্তিবিশেষের স্মৃতি নয়।’ একইভাবে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রমিলা থাপার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আপনি যা বিশ্বাস করেন তা ইতিহাস নয়। ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের ভাবনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে, এ কথাও মানা যাবে না।’

এখন দেখা যাক, উপনিবেশবাদ শুধু যে একটি দালাল শ্রেণি তৈরি বা জনগোষ্ঠীর মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন করেছে, তাই নয়। এই ‘কঠিন রোগ’ সমাজ, রাষ্ট্রসহ সব ক্ষেত্রে রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে। যে কারণে ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে রাষ্ট্রব্যবস্থা চলছে ঔপনিবেশিক আমলের মনস্তত্ত্ব দিয়ে। প্রখ্যাত রাজনৈতিক বিশ্লেষক, তাত্ত্বিক এবং পণ্ডিত বলে খ্যাত হামজা আলাভী যে তত্ত্ব দিয়েছেন তা হলো, Over Devoloped state বা ‘অতিবিকশিত রাষ্ট্র’। তার মতে, এ রাষ্ট্রটি অর্থাৎ উত্তর-উপনিবেশিকতার নষ্ট প্রভাবে যে রাষ্ট্রটি গঠিত হয় তার শাসক পরিবর্তন হয়। কিন্তু পুরো রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামো যা উপনিবেশিকতাবাদের প্রভাবে আচ্ছন্ন। আরও স্পষ্ট করলে বিষয়টি দাঁড়ায় এমন যে, শুধু ‘মগজবিহীন মাথা নেই’; কিন্তু যার উপরে প্রতিস্থাপিত হয়েছে ওই মাথা সেই মানুষের শরীর অপরিবর্তিত বা ঠিক আগের মতোই রয়ে গেছে। এটা কি কোনো পরিবর্তন? এক কথায় না। হামজা আলাভী মনে করেন, ঔপনিবেশিক জমানা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রাষ্ট্রযন্ত্র বা কাঠামো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। হামজা আলাভী বলছেন, ‘সুস্পষ্টভাবে বলতে গেলে উত্তর-ঔপনিবেশিক সমাজে বেসামরিক ও সামরিক গোষ্ঠীতন্ত্র বা মুষ্টিমেয়তন্ত্রের আঁতাত ও ঐক্য খুবই সর্বজনীন একটি ব্যবস্থা বা প্রচলিত উপসর্গ। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, কীভাবে দেশীয় বুর্জোয়া শ্রেণি, মেট্রোপলিটন নয়া উপনিবেশবাদী বুর্জোয়া শ্রেণি, ভূস্বামী শ্রেণি ঐক্যবদ্ধ হয়। আবার এই শ্রেণিগুলো কীভাবে ওই সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়। এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয় একটি ব্যাপকভিত্তিক গোষ্ঠী বা মুষ্টিমেয়তন্ত্র। রাজনৈতিক দলগুলোও এই সমীকরণের বাইরে নয়। তিনি বলছেন, এই অলিগার্কি বা মুষ্টিমেয়তন্ত্র রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং ক্ষমতার আসল মালিক হয়। যে রাজনৈতিক দল এবং নেতৃত্ব যারা বৈধ ক্ষমতার অধিকারী তাদের সঙ্গে জনগণের দায়বদ্ধতা, জবাবদিহির বিষয়গুলো কীভাবে ভেঙে যায়, সরকার, রাজনৈতিক দল জনবিচ্ছিন্ন হয়। যদিও পুরো পরিস্থিতির দায়ভার এসে পড়ে রাজনৈতিক সরকার বা ওই ব্যবস্থার ওপর। এর ফলে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক সংকট। ক্ষমতার ও বৈধতার। কিন্তু এসব দায়ভার অলিগার্কি নেয় না। সাম্প্রতিক প্রবণতা হচ্ছে এই যে—এই অলিগার্কি বৈদেশিক শক্তি বা তাদের এজেন্ট এবং করপোরেটদের সঙ্গে হাত মেলায় এবং সুযোগ নেয়।

[বিস্তারিত আলোচনার জন্য—Hamza Alavi; The State in Post Colonial Societies; Pakistan and Bangladesh, New left riview; 1972]

পরিস্থিতি এমন হয় যে, দুর্বল গণতান্ত্রিক সমাজে মুষ্টিমেয়তন্ত্র বা অলিগার্কি শক্তিশালী হয়। অলিগার্কি ফাঁদ পাতে এবং দুর্বল গণতান্ত্রিক শাসকরা তখন ওই ফাঁদে পা দেয়, যা থেকে কোনো মুক্তি মেলে না।

তাহলে বিপ্লবকে কেন বারবার হত্যা করা হয় সুকৌশলে—তার কারণ ব্যাখ্যা করতে পেরেছি বলে মনে করি। এখন পর্যালোচনা করা হবে, আমাদের দেশে কেন এমনটি হচ্ছে সে সম্পর্কে? এ ক্ষেত্রে ১৯৪৭ থেকে ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবের বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

তবে তার আগে দেখা যাক, একই সময়ে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ থেকে মুক্তি পাওয়া ভারত ও পাকিস্তানের দিকে। রাজনীতিবিজ্ঞানী আয়েশা জালাল ১৯৯৫ সালে এক নিবন্ধে পর্যালোচনা করেছেন এ সম্পর্কে। সবল নেতৃত্বের কারণে ১৯৪৭ থেকে ৯৫ সময় অর্থাৎ ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সঠিকভাবে যথাসময়ে ৫ বার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়েছে। যার কৃতিত্ব তিনি দিয়েছেন ওই দেশের সবল রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং দৃঢ় নেতৃত্বের ওপরে। অন্যদিকে, পাকিস্তানে ১৯৪৭ থেকে শুরু করে ১৯৭০ সাল ছাড়া কোনো জাতীয় নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হয়নি। এজন্য রাজনৈতিক প্রথা—প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে দেওয়া হয়নি—এমন ব্যর্থতাকে তিনি দায়ী করেছেন। এ ক্ষেত্রে অলিগার্কির ভূমিকা স্পষ্ট। [বিস্তারিত আলোচনার জন্য Ayesha Jalal; Democracy and Authoritarianism in South Asia; Cambridge University Press; 1997]

১৯৪৭ থেকে যাত্রা শুরু

১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগ শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশাল অংশের মানুষের সঙ্গে জড়িত। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের অত্যাচার-নিপীড়ন-নির্যাতন, অবাধ লুণ্ঠন, দুর্ভিক্ষ দফায় দফায়, দাঙ্গাসহ নানা কারণে সাধারণ মানুষ মুক্তি চাইছিলেন। কংগ্রেস বা মুসলিম লীগের আন্দোলনেও তেমন কোনো কাজ হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হলেও, ব্রিটিশ উপনিবেশবাদবিরোধী নানান ধরনের আন্দোলন, সংগ্রাম, বিদ্রোহ এর পেছনে কাজ করেছে। এ নিয়ে কোনো আলোচনায় যেতে চাই না।

কিন্তু শুধু উপরিতলার ক্ষমতাশালী নেতৃত্বের তথাকথিত সমঝোতার মাধ্যমে নয়, ১৯৪৭-এর দেশবিভাগ যদি সর্বস্তরের মানুষকে বিবেচনায় নিয়ে, সম্পৃক্ত করে কখনো শান্তিপূর্ণ উপায়ে, কখনো সশস্ত্র আন্দোলন-সংগ্রাম—যা বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লব যদি হতো ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে, তাহলে সে পথই হতে পারত সর্বাত্মক সফল এবং সর্বোত্তম পন্থা। কিন্তু তা না করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে উপনিবেশবাদকে বিদায় দেওয়ার মাধ্যমে যা করা হয়েছে তা রক্তপাত, দেশভাগের বেদনা, মানুষ থেকে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করাসহ নানা উত্তর-উপনিবেশিকতার বিষবৃক্ষকে আরও দৃঢ়ভাবে সমাজে ও বিভক্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে প্রথিত এবং বিস্তারের পথকে উন্মুক্ত করা হয়েছে। যদি উপরিতলার অভিজাত, ব্যবসায়ী ও উপনিবেশবাদের দালালমুক্ত থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব সঠিক পথে দক্ষতা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে দেশভাগ করতেন, তাহলে উত্তর-উপনিবেশবাদের সংকটগুলোর উত্তরাধিকার এখন পর্যন্ত বহন করতে হতো না। হয়তো মুক্তি পাওয়া যেত। আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশবাদ থেকে মুক্তির জন্য বিপ্লবের যে পথ বেছে নিয়েছে ভারতে, তাহলে বহু আগে ভারত ব্রিটিশমুক্ত হতো। সঙ্গে সঙ্গে উপনিবেশবাদের উপসর্গ থেকে মুক্তি মিলত।

এ প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে বলে রাখি—বাস্তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে ব্রিটিশ রাজতন্ত্র বা ব্রিটিশ সরকার আর ভারতকে ঔপনিবেশিক রাখতে আগ্রহী ছিল না। এ সম্পর্কে বিপ্লব প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনার পরে পর্যালোচনা করা যাবে এবং করব।

আলোচনা হচ্ছিল বিশ্বের বহু দেশের সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বি-উপনিবেশীকরণ বা উপনিবেশ থেকে মুক্তি সফল হয়েছে। এটা যদি হতো তাহলে আমাদের বিপ্লবগুলো বারবার, দফায় দফায় ব্যর্থ হতো না বলেই বিশ্বাস। তাহলে অলিগার্কি, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্য, মেট্রোপলিটন বুর্জোয়া শ্রেণি, ঔপনিবেশিক মানসিকতার রাজনৈতিক নেতৃত্ব হয়তো গড়ে উঠত না।

এ ধরনের সশস্ত্র বিপ্লব হয়েছে অসংখ্য দেশে। ১৭৯১-১৮০৪ পর্যন্ত সশস্ত্র লড়াই-সংগ্রাম হয় হাইতিতে। ইতিহাসের প্রথম দেশ হিসেবে যাদের গণ্য করা হয়। এ ছাড়া যারা ঔপনিবেশিক শাসনমুক্ত হওয়ার জন্য যেমন আমেরিকা, চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আলজেরিয়া, নিকারাগুয়াসহ লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়ার অসংখ্য দেশ রয়েছে।

ভারতের দেশভাগ হয়েছে অহিংস পথে। অনেকেই গান্ধীর এই পথকে ‘অতিমানবিক’ বলে উল্লেখ করেছেন। ব্রিটিশদের মতো, উপনিবেশ এই অহিংস পন্থায় ভারত ত্যাগ করত কি না, সে সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেন অনেকেই। শশি থারুর তার বইয়ে বলছেন, ‘গান্ধীর অহিংস পন্থার প্রতি গভীর একনিষ্ঠতা এবং অনুরক্তি এবং কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতাদের প্রতি জেল-জুলুমের কারণে ‘কুইট ইন্ডিয়া’ আন্দোলন ‘উগ্রপন্থি মাথা গরম’ গ্রুপের হাতে পড়ায় একপর্যায়ে তা স্তিমিত হয়ে যায়। তৎকালীন Times of India-র মন্তব্যেও এমন অভিমত ব্যক্ত করা হয়। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিলও ছিলেন ভারত ত্যাগের বিপক্ষে অনড়। (Shashi Tharoor; Inglarious Empire, Scribe Publication, Victoria, Australia; পৃ-১২১-২২)

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক Robert E. Klilaard তার এক লেখায় গান্ধীর সত্যাগ্রহ ও অহিংস পন্থাকে একটি নিছক ‘কৌশল’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, Satyagraha is often seen as the hope of the future, a long awaited means of Peaceful conflict resolution. [অর্থাৎ সাধারণত সত্যাগ্রহকে দেখা হয় ভবিষ্যতের আশাবাদ বা প্রত্যাশা হিসেবে, দ্বন্দ্ব বা বিবাদ নিরসনে (Conflict resolution) এটা এক দীর্ঘ প্রতীক্ষার শান্তিপূর্ণ পথ]। (Gandhi’s Non-Violence as a tactic; sage Journal-1971)

এ ক্ষেত্রে বিপ্লবী সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গণঅভ্যুত্থান বা পথের কথা বলেছেন Frantz Fanon তার The wretched of the Earth বইয়ে। তিনি বলেন, ‘বি-উপনিবেশীকরণ বা উপনিবেশক থেকে মুক্তি আসলে একটি বিশৃঙ্খলা বা শান্তিভঙ্গের পথ। এটা তারই এজেন্ডা। তবে এটাও সত্য যে, কোনো জাদুর কাঠি বা অলৌকিক লাঠি দিয়ে সম্ভব নয়। প্রলয়কাণ্ড না ঘটিয়ে অথবা ভদ্র মানুষের মতো উপনিবেশিকতা এবং এর উত্তর-উপনিবেশের ব্যাধি দূর করা যাবে না। কারণ বিনা নোটিশে শান্তশিষ্টভাবে এটা সম্ভব নয়। বি-উপনিবেশীকরণ হচ্ছে ইতিহাসের ধারা, যা ‘ভায়োলেন্স’ ছাড়া নির্মূল করা যায় না। (‘on violence’ chapter; Grove Press- New York- Page-2-6)

আমরা আলোচনা করছি কেন বাংলাদেশে বিপ্লবকে হত্যা করা হয়, ব্যর্থ করার জন্য এর সম্ভাবনাকে। আমরা এ ক্ষেত্রে ১৯৪৭ সাল নিয়ে আলোচনা করছি। শেষ পর্যন্ত ভারত ভাগ হলো হাজার হাজার সাধারণ মানুষের জীবন দিয়ে। দেশত্যাগের দগদগে আঘাত, বেদনা আর হতাশার মধ্য দিয়ে। আমরা কতটা স্বাধীনতা পেয়েছি তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, অন্তত মনে এই প্রশ্ন জাগে, স্বাধীনতা না দেশভাগ? স্বাধীন মানুষ না লাখে লাখে উদ্বাস্তু? হয়তো সশস্ত্র বিপ্লবী পন্থায় ব্রিটিশ উপনিবেশবাদকে বিদায় করলে এসব ঘটনাবলি ঘটত না! হয়তো ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়—লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়’ স্লোগানটিও শুনতে হতো না? কাজেই বিপ্লবী পথকে হত্যা করা হয়েছে ১৯৪৭ সালেই—দেশভাগের মধ্য দিয়ে।

তবে উল্লেখযোগ্য এবং আশ্চর্যজনক অধ্যায় যে ইতিহাস লুকিয়ে রাখা হয়েছে তা হলো, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বিশেষ করে ১৮৫৭ সালের সিপাহি সংগ্রাম, ১৯৪৬ সালের নৌ-সেনাদের সশস্ত্র সংগ্রাম, ১৯৪৩-এর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ এবং ১৯৪৬ সালের কলকাতাসহ বাংলাজুড়ে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এ ছাড়া পাঞ্জাবসহ ভারতের অন্যান্য অংশে দাঙ্গা-ব্রিটিশদের মনে ভয় ঢুকে গিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিল-এর পরও অনড় এবং অবিচল থাকলেন ভারতকে হাতছাড়া না করতে। কিন্তু তিনি ভারত থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের যে সীমাহীন অর্থ ব্যয় হলো এবং এর ফলে ইংল্যান্ডে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় হলো সে কারণে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের ব্যয় হয়েছিল তৎকালীন সময়ে সাড়ে ৩০০ কোটি পাউন্ড। এর মধ্যে শুধু ব্রিটিশ ভারতকেই দিতে হয়েছে ১৬০ কোটি পাউন্ডের বেশি। এ চাপই মূলত ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগের অন্যতম কারণ। আর তাড়াহুড়া করে ব্রিটিশরা ঔপনিবেশিক ভারতকে বিভাজনে এত আগ্রহী করে তোলে। আর এ কারণেই উত্তর-উপনিবেশিকতার মনস্তাত্ত্বিক শৃঙ্খল থেকে ভারতের বিভক্ত দেশ দুটি আর রক্ষা পায়নি।

তা ছাড়া দেশভাগের ব্যাপারে ভারতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের তাড়াহুড়াটা ছিল মাত্রাতিরিক্ত। তারা চাইছিলেন, যেনতেন প্রকারে হলেও ভাগটা সম্পন্ন হোক। তারা ব্রিটিশদের স্বেচ্ছায় ভারত ত্যাগের সিদ্ধান্তের বিষয়টি মাথায়ই নিলেন না। আর এই অসম্ভব তাড়াহুড়াই পরবর্তীকালে নানামুখী যেমন সীমানা নির্ধারণ, ঔপনিবেশিক মনস্তত্ত্বসহ অন্যান্য বিষয় রয়েই গেল। বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো। ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গের যারা বিরোধিতা করেছিলেন, সে তারাই ১৯৪৭-এর দেশভাগের শিকার হলেন। বাংলা থেকে আসাম, ত্রিপুরা তো গেলই, বাংলাও বিভক্ত হলো। মূলত বাংলার কৃষক সমাজ যারা পাকিস্তান আন্দোলনের স্বপ্ন দেখেছিলেন—তারা প্রতারিত হলেন।

এর ‍ওপরে অধ্যাপক তাজুল ইসলাম হাশমী তার বই Pakistan as a peasant Utopia (অর্থাৎ পাকিস্তান হচ্ছে কৃষকদের অলীক স্বপ্নরাজ্য বা কাল্পনিক রাষ্ট্র।) [বিস্তারিত আলোচনার জন্য বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রকাশ করে Routledge Publishing-London, New York-1992]

শুধু যে বাংলায় দেশভাগের সমস্যাটি হয়েছে, তা নয়। ভারত ও পাকিস্তানের পাঞ্জাব নিয়ে সংকটটি আরও তীব্র ও ব্যাপক। পাঞ্জাবে ১৯৪৭ সালে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়। সমস্যা রয়ে গেছে কাশ্মীর নিয়ে। এসব হয়েছে ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ব্রিটিশ রাজতান্ত্রিক সরকারের কূটকৌশলের কারণে।

তাড়াহুড়াটা এমন ছিল যে, তৎকালীন ব্রিটিশ সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক লিওনার্দ সোজলে তার বই ‘দ্য লাস্ট ডে’জ অব দ্য ব্রিটিশ রাজ’, যা ১৯৬১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়, পরে বলছেন, “ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়ার ব্যাপারে ব্রিটেনের সদিচ্ছা থাকলেও কোনো প্রস্তুতি ছিল না। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব এবং একের পর এক মারাত্মক ভুলভ্রান্তি বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। জিন্নাহর পাকিস্তান পরিকল্পনা মেনে নেওয়া হলেও এর পরিণাম সম্পর্কে ভেবে দেখা হয়নি। অবিভক্ত সেনাবাহিনী বিভক্তির ব্যাপারেও পূর্বাহ্ণে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। তখনো দেশভাগের মাত্র ৬ সপ্তাহ বাকি। ১৯৪৭-এর মে মাসে দেশবিভাগ সম্পর্কিত ঘোষণাটি প্রচার করা হলেও জুন মাসের শেষ দিক পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণ কমিশন নিয়োগ করা হয়নি। ১৫ আগস্ট দেশ ‘স্বাধীন’ হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার দুদিন পরেও আমজনতা জানত না—কে কোন দেশের নাগরিক।” মোজলে আরও বলেন, ‘একটু ধৈর্য ধারণ করলেই হয়তো সংকট এড়ানো যেত। পাকিস্তান সৃষ্টি শুধু একটা মানুষের কাজ—ইনি হলেন জিন্নাহ। ...নেহরু, প্যাটেল এবং অন্যান্য ক্ষমতাপাগল কংগ্রেস নেতাদের মাউন্টব্যাটন ক্ষমতার লোভ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এই লোভ তারা ........

লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইনসাফভিত্তিক শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে জুলাই সনদ ইতিহাস হয়ে থাকবে : লায়ন ফারুক

বাল্ক সেলস বিভাগে নিয়োগ দিচ্ছে মোল্লা সল্ট

২৭ পরীক্ষার্থীর ২২ জন ফেল

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাতে চায় টাইগাররা

হাত-পা ঝিনঝিন বা তালু চুলকানো কীসের ইঙ্গিত?

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্চ জ্বালিয়ে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ

জুলাই যোদ্ধাদের নতুন কর্মসূচি রোববার

পাকিস্তানির হামলায় নিহত ৩ ক্রিকেটারের নাম প্রকাশ করল আফগান ক্রিকেট বোর্ড

ভাইয়ের বিয়েতে যেতে না পেরে নারীর কাণ্ড

আব্রাহাম চুক্তিতে সৌদি আরবকে যুক্ত করতে চান ট্রাম্প

১০

শিশুর চোখের সমস্যার এসব লক্ষণ খেয়াল রাখুন

১১

পাকিস্তানের হামলায় ৩ ক্রিকেটার নিহতের ঘটনায় যা বললেন রশিদ খান

১২

জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলার নিন্দা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

১৩

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১৪

শীত আসছে, ঠোঁটের যত্ন নিন এ সহজ ৫ উপায়ে

১৫

ফ্রান্সে কালবেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

১৬

টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র / ট্রাম্পের সঙ্গে কী কথা হলো, জানালেন জেলেনস্কি

১৭

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

১৮

১৮ অক্টোবর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৯

বাংলাদেশের ম্যাচসহ টিভিতে আজকের যত খেলা

২০
X