কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জাতির মুক্তির দূত

নূরুল ইসলাম মণি
জাতির মুক্তির দূত

বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমান এমন এক নাম, যা শুধু একটি রাজনৈতিক পরিচয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা এক দীর্ঘ সংগ্রাম, ধৈর্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রতীক। প্রতিকূলতা, নির্যাতন ও নির্বাসনের কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন এক পরিণত রাষ্ট্রচিন্তক এবং সংযত রাজনৈতিক নেতৃত্ব হিসেবে। যার মূল দর্শনে রয়েছে গণতন্ত্র, জাতীয় সার্বভৌমত্ব, জনগণের ক্ষমতায়ন এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক মুক্তি।

সংগঠন গঠন, রাজনৈতিক আধুনিকায়ন এবং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রকাঠামো নিয়ে চিন্তাশীল অবস্থান তাকে বাংলাদেশের অন্যতম এক শ্রেষ্ঠ নেতৃত্বে উন্নীত করেছে। তিনি এমন এক নেতা, যিনি প্রতিহিংসার ভাষা বর্জন করে সমাধান, ঐক্য ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র পরিচালনার ভাষায় বিশ্বাস করেন। একটি নৈতিক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রত্যাশার প্রতিচ্ছবি হিসেবে তারেক রহমান জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে দৃঢ়ভাবে জড়িয়ে আছেন।

দেশের রাজনীতির ধারাবাহিকতায় নতুন অধ্যায়

প্রায় দেড় যুগ নির্বাসিত জীবন শেষে ২০২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন নিছক কোনো ব্যক্তির দেশে ফেরা নয়, এটি বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ইতিহাসে এক গভীর তাৎপর্যপূর্ণ ও যুগান্তকারী ঘটনা। এ প্রত্যাবর্তন একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের চেয়েও অধিক। এটি একটি আদর্শের পুনর্জাগরণ, একটি সংগ্রামের ধারাবাহিকতা এবং একটি জাতির প্রত্যাশার প্রতিফলন।

উত্তরাধিকার ও মূল্যবোধের যোগ্য উত্তরসূরি

তারেক রহমান জন্মসূত্রেই এমন এক রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠেন, যেখানে দেশ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ছিল প্রতিদিনের আলাপের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি স্বাধীনতার ঘোষক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং আপসহীন নেতৃত্বের প্রতীক বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সন্তান। এই পারিবারিক উত্তরাধিকার তার জীবনে শুধু পরিচয় নয়; বরং একটি দায়িত্ব, একটি আদর্শিক বোঝা এবং রাষ্ট্রের প্রতি অঙ্গীকার।

তার পরিবার থেকেই তিনি শিখেছেন কীভাবে ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতির স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হয়, কীভাবে প্রতিকূলতার মধ্যেও নৈতিক দৃঢ়তা বজায় রাখতে হয়।

রাজনৈতিক জীবনের উত্থান এবং দক্ষ সংগঠক

তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ছিল তৃণমূল সংগঠনের মধ্য দিয়ে। তিনি বিশ্বাস করতেন, রাজনীতি যদি জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, তবে তা অর্থহীন। সেই বিশ্বাস থেকেই তিনি দলীয় কাঠামোকে শক্তিশালী করতে সংগঠনভিত্তিক রাজনীতির ওপর জোর দেন। বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠন, তারুণ্যনির্ভর রাজনীতি এবং নীতিনির্ধারণে গবেষণাভিত্তিক চিন্তা—এ তিনটি ক্ষেত্রে তার অবদান দলীয় রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে।

২০০১-০৬ সময়কালে বিএনপি সরকারের আমলে তিনি নেপথ্য সংগঠক হিসেবে দলীয় আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, যদিও সে সময়েই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়।

অমানবিক নির্যাতন এবং ত্যাগে গড়ে ওঠা নেতৃত্ব

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন খুব কম পরিবার আছে, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে এত গভীর ত্যাগ স্বীকার করেছে, যতটা করেছে শহীদ জিয়াউর রহমানের পরিবার। তারেক রহমানের জীবনও সেই ধারাবাহিক ত্যাগ ও নির্যাতনের এক বাস্তব দলিল।

শৈশবেই তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, কীভাবে একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, কীভাবে একটি পরিবারকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার করা হয়। পিতা শহীদ জিয়াউর রহমানের শাহাদাত শুধু একটি ব্যক্তিগত বেদনা ছিল না বরং এটি ছিল একটি আদর্শকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র। সেই শোক ও শূন্যতা বুকে ধারণ করেই তারেক রহমান বড় হয়েছেন।

পরবর্তী সময়ে, যখন তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হন, তখন সেই প্রতিহিংসার রাজনীতি আরও নগ্ন রূপ নেয়। তাকে বারবার মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার করা হয়। কারাবন্দি অবস্থায় তার ওপর চালানো হয় অমানবিক আচরণ। যার ফলে তার স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি ঘটে। এ নির্যাতন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক দমননীতির অংশ।

একই সঙ্গে তার পরিবারকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। মা খালেদা জিয়া বারবার কারাবন্দি হয়েছেন, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, অবমাননাকর আচরণের শিকার হয়েছেন। জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং সব স্মৃতি মুছে ফেলা হয়েছে। ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে অমানবিক নির্যাতন করে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। জুবাইদা রহমান, শামিলা রহমান এবং জাইমা রহমানসহ পরিবারের সব সদস্য এক ভয়ংকর মানসিক নির্যাতন সহ্য করেছেন। একটি পরিবারকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ভাঙার যে চেষ্টা চালানো হয়েছে, তা দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।

প্রবাসী জীবনেও তারেক রহমানের ত্যাগ শেষ হয়নি। মাতৃভূমি থেকে দূরে থেকে মায়ের অসুস্থতা, দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, গণতন্ত্রের ক্রমাগত সংকোচন—সবকিছুই তাকে নীরবে সহ্য করতে হয়েছে। তবুও প্রতিশোধের ভাষা বেছে নেননি। বেছে নিয়েছেন সহনশীলতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পথ।

এ দীর্ঘ নির্যাতন ও ত্যাগই তারেক রহমানকে গড়ে তুলেছে একজন পরিণত, সংযত ও দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে। ব্যক্তিগত ক্ষোভ নয়, বরং জাতির বৃহত্তর স্বার্থকে সামনে রেখেই তিনি তার রাজনৈতিক অবস্থান নির্ধারণ করেছেন। বাংলাদেশের সব নেতার মাঝে এখানেই তার নেতৃত্বের মৌলিক পার্থক্য—তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়, বরং ক্ষত নিরাময়ের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তার ত্যাগ ও সহনশীলতা আজ তাকে সেই নৈতিক উচ্চতায় দাঁড় করিয়েছে, যেখানে নেতৃত্ব আসে ত্যাগ, সংগ্রাম ও আত্মসংযম থেকে।

নির্বাসিত জীবন: ধৈর্য এবং নেতৃত্বের পরিপক্বতা

দীর্ঘ প্রবাস জীবনে তারেক রহমান শুধু রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়ই ছিলেন না, বরং তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন পরিণত রাষ্ট্রচিন্তক হিসেবে। দূর থেকে তিনি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সংকটকালে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং জাতির সামনে একটি ভবিষ্যৎ রূপরেখা তুলে ধরেছেন। যার কেন্দ্রে ছিল গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন এবং অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা। এ সময়ে তার বক্তব্য ও কর্মসূচিতে লক্ষ করা যায় এক ধরনের সংযম, দূরদর্শিতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির আহ্বান; যা তাকে শুধু দলীয় নেতা নয়, বরং জাতীয় নেতৃত্বের দাবিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: প্রত্যাশার প্রতিফলন

২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন বাংলাদেশ গভীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এ প্রেক্ষাপটে তার প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। একটি ভারসাম্যপূর্ণ, গণতান্ত্রিক এবং সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশা নিয়ে সমগ্র জাতি তার নেতৃত্বের দিকে চেয়ে আছে।

তারেক রহমান প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়, বরং সংলাপ, ঐক্য ও পুনর্গঠনের রাজনীতির আহ্বান জানান। তার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী চেতনা আরও আধুনিক, মানবিক ও সময়োপযোগী রূপ পাবে—এ বিশ্বাসেই আজ দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে আগামীর দিকে।

সর্বোপরি,

তারেক রহমানের দেশে ফেরা কোনো একক ব্যক্তির রাজনৈতিক পুনরাগমন নয়; এটি শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শ, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্ব এবং কোটি কোটি জাতীয়তাবাদী মানুষের সংগ্রামের মহান বিজয়। এ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। যেখানে জাতীয়তাবাদ মানে হবে জনগণের ক্ষমতায়ন, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, রাষ্ট্রের মর্যাদা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপদ বাংলাদেশ।

লেখক: ভাইস চেয়ারম্যান, বিএনপি

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজ ৩০০ ফিটের সব বর্জ্য অপসারণ করবে বিএনপি

শীতে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গা, তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রির ঘরে

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন

‘পাসপোর্ট-টিকিট লুট হয়ে গেল, এখন বিদেশে ফিরতে পারছি না’

ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় তদন্তে নেমেছে তুরস্ক ও লিবিয়া

কুয়াশার চাদরে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা, কমেছে তাপমাত্রা

আলোচনা না যুদ্ধবিরতি? কোন পথে যাচ্ছে সুদান

আজ যেসব কর্মসূচি তারেক রহমানের

ঢাবি বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আজ

সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর শরীয়তপুর-চাঁদপুর রুটে ফেরি চলাচল শুরু

১০

ভুয়া সনদ বানিয়ে কোটিপতি বনে যান শাওন

১১

আজ সারা দিন গ্যাসের চাপ কম থাকবে যেসব এলাকায়

১২

শুক্রবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৩

২৬ ডিসেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৪

তারেক রহমানের আগমনকে ঘিরে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ

১৫

শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ

১৬

যেভাবে ভোট দিতে পারবেন কারাবন্দিরা

১৭

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে একজন নিহতের ঘটনায় যা জানাল সরকার

১৮

তারেক রহমানের আগামী ২ দিন কোথায় কোন কর্মসূচি

১৯

পাত্রী দেখে ফেরার পথে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেপ্তার

২০
X