প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল, সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। তার নেতৃত্বে দেশটি আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ আজ অনন্য উচ্চতায় আসীন। প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে (১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল) তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হলে, শেখ হাসিনার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ও গণমুখী কর্মসূচি স্থগিত হয়ে যায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয় নিয়ে তিনি ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর টানা তিন মেয়াদে অর্থাৎ ১৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকবর্তিকা হিসেবে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারকে ‘ভিশন ২০২১’ হিসেবে অভিহিত করে জাতির কাছে তার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার চিত্র তুলে ধরেন। সেই পরিকল্পনার প্রায় শতভাগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিনি নিজেকে একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, কর্মবীর ও সত্যিকারের জনহিতৈষী মহান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি যখন সেই নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা করেছিলেন, তখন অনেকেই তা নিয়ে নেতিবাচক ও ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এখন বাস্তবতা। জাতি আজ এর সুফল ভোগ করছে। শেখ হাসিনা এরই মধ্যে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার কর্মপরিকল্পনা ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন।
শেখ হাসিনা একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, একজন রাজনৈতিক দার্শনিক ও ক্যারিশমেটিক নেতা। একজন মানুষকে তার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য প্রয়োজন অদম্য সাহস, দৃঢ় সংকল্প ও একনিষ্ঠ কর্মস্পৃহা। একজন রাষ্ট্রনায়ক ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার মধ্যে এই সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। প্রখ্যাত ভারতীয় রাজনৈতিক নেতা গোপাল কৃষ্ণ গোখলের একটি মন্তব্য এখানে প্রণিধানযোগ্য। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তিনি বলেছিলেন, ‘What Bengal thinks today, India thinks tomorrow.’ (বাংলা যেটা আজকে চিন্তা করে, ভারত সেটা আগামীকাল চিন্তা করে)। তার বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, ‘শেখ হাসিনা আজকে যেটা চিন্তা করেন, বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা সেটা ভাবেন আগামীকাল।’
দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালসহ অসংখ্য মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেখ হাসিনার সরকারের অনেক বড় সাফল্য। পদ্মা সেতু এখন বাঙালি জাতির গৌরব ও আত্মমর্যাদার স্মারক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতার প্রতীক। কারণ তিনি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রসহ একাধিক চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এটি সফল করেছেন।
বাংলাদেশ এখন পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশের ক্লাবের গর্বিত সদস্য। এটাও শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফসল। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ নানা ধরনের ভাতা দেওয়ার কার্যক্রম চালু করেছেন এবং এই খাতে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। সব নাগরিকের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছেন। শেখ হাসিনার সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে প্রায় ১০ লাখ ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। এগুলো সবই তার সরকারের গণমুখী কর্মকাণ্ডের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শেখ হাসিনা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত কিছু কিছু সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছেন। ভারতের সঙ্গে ছিটমহল সমস্যার নিষ্পত্তি এবং ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক সীমানা নির্ধারণ দেশের জন্য শেখ হাসিনার অভাবনীয় অর্জন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও খুনিদের ফাঁসি কার্যকর এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে শেখ হাসিনা অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি নানাবিধ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপ ও হুমকিকে উপেক্ষা করে অত্যন্ত দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন তিনি তার পিতা বঙ্গবন্ধুর মতোই নির্ভীক, কোনো চাপের কাছে মাথানত করেন না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধ করেছে, তাদের বিচারের মধ্য দিয়ে দেশ কিছুটা হলেও কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিবাদ দমনে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় তথা বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে দেশে জঙ্গিবাদের ব্যাপক উত্থান ঘটেছিল। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় শেখ হাসিনার সরকারের ‘জিরো-টলারেন্স’ নীতি এবং এই ধর্মীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অব্যাহত অভিযানের কারণে জঙ্গিবাদ এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ বছরের মে মাসে কমিউনিটি ক্লিনিককে শেখ হাসিনার ব্রেনচাইল্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সর্বসম্মতভাবে জাতিসংঘে রেজল্যুশন গৃহীত হয়। এ কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনার এমন এক অসামান্য উদ্ভাবন, যা স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীকে তার কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্যোগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটি বিশেষ সম্মানে ভূষিত করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। তখন দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৮৩ শতাংশ। বর্তমানে দেশে দারিদ্র্যের হার কমে ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৩৫তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই অপ্রতিরোধ্য অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা রক্ষায় ও চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সচল রাখতে হবে এবং সর্বোপরি জনগণের সার্বিক কল্যাণে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই।
লেখক : সাংবাদিক