হাসানুল হক ইনু
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৪৮ এএম
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:১৩ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
হাসানুল হক ইনুর বিশেষ সাক্ষাৎকার

শেখ হাসিনার অধীনে যথাসময়েই নির্বাচন হবে

হাসানুল হক ইনু। ছবি: কালবেলা
হাসানুল হক ইনু। ছবি: কালবেলা

হাসানুল হক ইনু : রাজনীতিবিদ ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের সভাপতি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা। ষাটের দশকের কৃতী ফুটবলার ইনু বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে বিএসসি-ইন-কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি নেওয়া হাসানুল হক ইনু ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭০ সালের ৭ জুন ছাত্রলীগের জয় বাংলা বাহিনীর মার্চপাস্টে নেতৃত্বসহ ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পল্টনে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনে নেতৃত্ব দেন। এরশাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাসদের সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০২ সালে জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন কালবেলার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা

কালবেলা: সরকার আগামী বছরের জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন করতে চাইছে কিন্তু বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল বলছে, বর্তমান সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে কি কোনো সংশয় তৈরি হয়েছে?

হাসানুল হক ইনু: যে কোনো দেশের সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্বাচন করতে হয়। দেশ পরিচালনায় ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে, সমাজেও ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়। সমালোচনা, আত্মসমালোচনা হয়, সংশোধনও হয়। ফলে একটা সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে কিছু জায়গায় সবাইকে একমত থাকতে হয়। নতুন নতুন আইনকানুনের প্রয়োজন হয়। এসব কিছুর একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া রয়েছে। আর সেই ধারাবাহিক প্রক্রিয়াটি চলে সাংবিধানিক ধারার ছায়াতলে। সাংবিধানিক ধারা যদি বারবার বানচাল হয়ে যায়, তাহলে সমাজ সংশোধনের কাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন সাংবিধানিক ধারা আবার ঠিকঠাক করতে অনেক সময় লাগে। জাতি একবার পিছিয়ে পড়লে সেটা থেকে টেনে তুলতে অনেক কষ্ট হয়।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বলপ্রয়োগ করে যেভাবে সাংবিধানিক ধারা অদল-বদল করা হয়েছে, তা বাংলাদেশকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। দুর্নীতি, বৈষম্য, দরিদ্রতা, নারী অধিকার, শিশুদের নিরাপত্তা, সন্ত্রাস ও দলবাজি, জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতাসহ আরও অনেক সমস্যা রয়েছে এ দেশে। এ সমস্যাগুলো কখনোই রাতারাতি সমাধান করা যায় না। ধারাবাহিকভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে হয়। এসব সমস্যার সমাধান করতে হলে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়। তবে সেই মাথা ঘামানোর কাজটি বন্ধ হয়ে যায় যদি সাংবিধানিক ধারা বানচাল হয়ে যায়। সেজন্য একটি দেশের অগ্রগতি নির্ভর করে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার ওপর। যথাসময়ে নির্বাচন করা এবং সাংবিধানিক ধারার ছায়াতলে ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রীয় জীবনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সংশোধন করার আন্দোলনটাই জরুরি। এটা করলে সমাজ আরও সুন্দর হবে, রাষ্ট্র আরও মানবিক হবে এবং অংশগ্রহণমূলক হবে। সাংবিধানিক ধারা রক্ষা করার জন্য একমাত্র পন্থা নির্বাচন। যথাসময়েই নির্বাচন করতে হবে। সেই পন্থাকে অস্বীকার করে বারবার সরকার উৎখাতের চেষ্টা করা হলে বাংলাদেশ এক হাজার বছরেও তার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারবে না।

কালবেলা: বিরোধীরাও নির্বাচনের কথাই বলছেন। তবে তারা সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছেন। তাহলে এখানে দ্বিমত থাকে কি?

হাসানুল হক ইনু: একটি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি হলো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও নিয়মকানুন রয়েছে। অনেক সময় এ আইনকানুনগুলো অদল-বদল করা হয় আরও ভালো নির্বাচন করার জন্য। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন একটি সরকার থাকে, সেই সরকারও কিছুটা ভূমিকা রাখে। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু করার প্রাথমিক শর্ত হলো— নির্বাচন করানোর জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, যে আইনকানুন ও পদ্ধতিগুলো রয়েছে, সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা। এরপর আসে সরকারের ভূমিকা।

গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার ক্ষমতায়নের পর থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদ্ধতি, প্রতিষ্ঠান ও আইনকানুনগুলোতে অনেক পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে। আর এর ফলেই দেড় কোটির মতো ভুয়া ভোটার চিহ্নিত করা হয়েছে। ভোটের পদ্ধতি আরও সুন্দর করার জন্য ছবিসহ আইডি কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিবর্তন করা হয়েছে অনেক আইনকানুন। আগে নির্বাচন কমিশনের যে ধরনের ক্ষমতা ছিল না, এখন নির্বাচন কমিশনকে সেই ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ঢাকায় বসেই একটি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করতে পারে। স্থানীয় নির্বাচনেও যদি কোনো কর্মকর্তা অসৎ কাজে জড়িয়ে পড়ে এবং নিজের খেয়াল খুশিমতো আচরণ করে, সেটা মোকাবিলার জন্য নির্বাচন কমিশনকে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

কালবেলা: বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের ভূমিকা কীভাবে দেখছেন?

হাসানুল হক ইনু: সাম্প্রতিককালে বিএনপি, জামায়াত এবং বিদেশিরা বাংলাদেশে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য হয়রান হয়ে গেছে। কিন্তু তারা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইনকানুন ও পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো প্রস্তাব দিতে পারেনি। একমাত্র ইভিএম নিয়ে তর্কাতর্কি করেছে তারা। কিন্তু আইনকানুন সম্পর্কিত কোনো প্রস্তাব তাদের নেই। বিদেশি প্রতিনিধিরা দিনের পর দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৈঠক করছেন। তারা স্রেফ সময়ের অপচয় করছেন। তারা এত কথা বলছেন কিন্তু নির্বাচন পদ্ধতি, প্রতিষ্ঠান এবং আইনকানুন, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা এবং এখতিয়ার নিয়ে কিছু বলছেন না। যদি কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে, যদি কোনো ঘাটতি থাকে সেগুলো খুঁজে দেখা বা সংশোধন করার দিকে তাদের কোনো মনোযোগ নেই। তাদের কাজ দেখে মনে হচ্ছে যেন সরকারকে উৎখাত করলেই নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়ে যাবে। তারা বলতে চান, সরকার উৎখাত করে একটি নতুন সরকার এলেই শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি।

কালবেলা: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে তেমন বিতর্ক তো হয়নি...

হাসানুল হক ইনু: ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮—এ চারটি নির্বাচন হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। চারটি নির্বাচনই বিতর্কিত। বাংলাদেশের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি কেউ এ চারটি নির্বাচনকে পুরোপুরি গ্রহণ করেনি। অন্য ছোট দলগুলোর কথা যদি নাও বলি, নির্বাচনে যারা বিরোধী দল হয়েছে তারা পরাজিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচনের ফলাফলকে অস্বীকার করেছে এবং সংসদকেও অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করেছে। পরাজিত হওয়ার পরেই তারা সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করেছে। যার ফলে বাংলাদেশে কয়েকবার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে উৎখাত করতে হয়েছে। সেখানে শেখ হাসিনা সরকার একমাত্র সরকার, যারা তথাকথিত সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। কিন্তু এতকিছুর পরও যে ফল এসেছে, সেই ফল আমরা গ্রহণ করতে পারিনি।

আমরা সরকারকে এবং সংসদকে একটি কারচুপির সরকার হিসেবে চিহ্নিত করে আন্দোলনের সূচনা করেছি। অর্থাৎ ১৯৯১ থেকে পরবর্তী ২০ বছর আমরা রাজনৈতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। যারা মনে করেছিল একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনই দেশে শান্তি দেবে সেই প্রতিপাদ্য ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আমরা গণতন্ত্রে বসবাসের মধ্যেই দেখেছি সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, যুদ্ধাপরাধী চক্রের উত্থান, যা নব্বইয়ের আগে এমনকি সামরিক শাসনের আমলেও ঘটেনি। গণতন্ত্রকে ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী এ দেশে হালাল হয়েছে। গণতন্ত্রকে ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের সঙ্গে রাজনৈতিক পার্টনারশিপ করে সরকার গঠন করা হয়েছে। সীমাহীন জঙ্গি সন্ত্রাস এবং তাণ্ডব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সমাজের ওপর। সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য যে অগণতান্ত্রিক সরকারের কথা বলা হচ্ছে, তারা তো চারবার সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারেনি। তাহলে পঞ্চমবারে তারা কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবে?

বিরোধী দল চাইছে আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৪ দলীয় জোটের সরকারকে উৎখাত করতে। সেখানে এই মুহূর্তে তারা সংবিধান পরিবর্তন করে ও দলীয় সরকারের নতুন কোনো সাংবিধানিক কাঠামো দিতে পারছে না। সরকার উৎখাতের পর যারা আন্দোলনে বিজয় হবে তাদের পছন্দমতো কতিপয় লোকের একটি সরকার গঠন হবে। সুতরাং বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি এবং সরকার উৎখাতের যে আন্দোলন চলছে, তাতে তারা আসলে চায় বিএনপিপন্থি ছদ্মবেশী একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা রাজাকারদের ও কোণঠাসা যুদ্ধাপরাধীদের, জঙ্গিবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে এবং দুর্নীতির দায় দণ্ডিত মানুষদের নির্বাচনের মাঠে আবার ফেরত এনে হালাল করতে চায়। সুতরাং তারা নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করার নামে এবং নির্বাচনের সমান সুযোগ প্রতিষ্ঠার নামে কার্যত দণ্ডিত দুর্নীতিবাজ, ’৭১ ও ’৭৫-এর খুনি, সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদ গোষ্ঠীকে আবার রাজনীতির ময়দানে ফেরত আনতে চায়, যা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জার ও দুঃখের।

কালবেলা: বর্তমান সরকারের অধীনে দেশে দুটি নির্বাচন হয়েছে ২০১৪ ও ’১৮। দুটি নির্বাচন কি আগের চারটি নির্বাচনের চেয়ে ভালো হয়েছে?

হাসানুল হক ইনু: ২০১৪ ও ’১৮-এর নির্বাচনে কিছু ঘাটতি থাকলেও সেখানে সাংবিধানিক ধারা রক্ষা হয়েছে। ২০১৪ ও ’১৮ সালের নির্বাচনের আগে সরকার উৎখাতের এবং সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর রাষ্ট্র ধ্বংস করার একটি ষড়যন্ত্র চলেছে। সেই যুদ্ধের মধ্য থেকেই ২০১৪ ও ’১৮-এর নির্বাচন হয়েছে। ফলে সেখানে আমাদের লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রের কাঠামোকে রক্ষা করা এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। অরাজকতা এবং আগুন সন্ত্রাস যদি না হতো, রাষ্ট্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সেই খেলা যদি না হতো, তাহলে নির্বাচন যতটুকু ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে সেটুকু ত্রুটিমুক্ত করার সুযোগ আমরা পেতাম।

আমি এখনো বলি, নির্বাচনে যত প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে নির্বাচন তত ত্রুটিমুক্ত হবে। নির্বাচন যত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে তত কারচুপির সম্ভাবনা কমে যাবে। নির্বাচন বর্জন এবং সরকার উৎখাত নির্বাচনের জন্য কখনো ভালো পদ্ধতি বয়ে আনবে না। বিএনপি প্রকাশ্যে বলেছে, তারা সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করবে। তার মানে তারা জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করবে। সুতরাং আমরা তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি বিএনপির রূপ। তাদের প্রথম চাওয়া হলো, শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করে ছদ্মবেশী বিএনপিপন্থি প্রক্সি সরকার গঠন করবে। তাদের দ্বিতীয় চাওয়া, তারা রাজাকার জঙ্গিবাদী জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করবে। তারা বলেছে, তারা সংবিধান অদল-বদল করে দেবে।

গত ১৫ বছরে সংবিধানে যতটুকু পরিবর্তন করা হয়েছে, সেখানে সামরিক শাসনের ছাপ, সাম্প্রদায়িকতার ছাপ প্রভৃতিকে আমরা মুছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বিএনপি সেগুলোকে আবার পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করবে। আমরা ৭২-এর সাংবিধানের ‘চার নীতি’তে যাচ্ছি, অন্যদিকে বিএনপি সেই ‘চার নীতি’ থেকে সরে আসতে চাইছে। আমরা বারবার বলছি একটি মীমাংসিত বিষয় সাংবিধানিক বিষয় হয়ে যায়। কিন্তু তারা মীমাংসিত বিষয় মানে না। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে এখানে কোনো বিতর্ক নেই, এখানে বিতর্ক হলো মীমাংসিত বিষয় মীমাংসিত থাকবে কি না। জাতির পিতা একটি মীমাংসিত বিষয়, সংবিধানের ‘চার নীতি’ এটি মীমাংসিত বিষয়, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস একটি মীমাংসিত বিষয়, ৩০ লাখ শহীদ মীমাংসিত বিষয়, আমাদের জাতীয় পতাকা একটি মীমাংসিত বিষয়। এই মীমাংসিত বিষয়ের ব্যাপারেই তাদের ঐকমত্য নেই। একাত্তরের যুদ্ধের মধ্যে রাজাকার এবং মুক্তিযোদ্ধার যে বিভক্তি, গণহত্যা, ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সামরিক শাসন এবং গণতন্ত্রের যে বিভক্তি, ২১ আগস্টে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মধ্য দিয়ে যে বিভক্তি রেখা তৈরি হয়েছে, তা অমোচনীয়। সুতরাং আমি মনে করি এখানে মিটমাটের কোনো জায়গা নেই। যারা মিটমাটের কথা বলে তারা খুনিদের হালাল করতে বলে।

কালবেলা: তাহলে এই দ্বন্দ্ব-সহিংসতার কোনো শেষ নেই?

হাসানুল হক ইনু: যতক্ষণ একপক্ষ হার না মানবে, ততক্ষণ এ সংঘাতের কোনো শেষ হবে না। এখানে বাংলাদেশ পক্ষ হারবে না। হারতে হবে রাজাকার পক্ষকে, হারতে হবে জঙ্গিবাদ পক্ষকে, হারতে হবে সাম্প্রদায়িক পক্ষকে। সুতরাং মীমাংসিত বিষয়গুলোকে মেনে নেন এবং জঙ্গিবাদ, যুদ্ধাপরাধী, সাম্প্রদায়িক পক্ষের সঙ্গে পার্টনারশিপের রাজনীতি পরিহার করেন, বাতিল করেন, তাহলেই মিটমাট হয়ে যাবে। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান; কিন্তু সেই আলোচনা হতে হবে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির মধ্যে। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না, তাদের সঙ্গে আপস ও আলোচনার প্রশ্নই আসে না।

কালবেলা: আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্য বড় দল না আসে তখন কী হবে? তাদের নির্বাচনে আনার কোনো প্রচেষ্টা কি আপনাদের রয়েছে?

হাসানুল হক ইনু: সংবিধানের ধারা রক্ষা করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে। কাউকে নির্বাচনে আনার জন্য কারও মাথাব্যথা নেই, এটা কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়াও নয়। নির্বাচনে কতজন এলো বা কতজন মানুষ উপস্থিত হলো, সেটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি নয়। সুতরাং এটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। বরং যথাসময়ে ভোট করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। মানুষ যাতে নির্বাচন কেন্দ্রে ভোট দিতে আসে সেই পরিস্থিতি তৈরি করার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

কালবেলা: আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থানকে কীভাবে দেখছেন?

হাসানুল হক ইনু: যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। তারা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভিসা নীতি আরোপ করেছে। আমি বলব, এসব স্যাংশন দিয়ে কোনো দিন গণতন্ত্র উদ্ধার হয়নি, এসব করে কোনো দেশে গণতন্ত্রের রক্ষাও হয়নি। তারা এগুলো করছে তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের লক্ষ্যে। বাংলাদেশের জন্য তাদের একটি মাপকাঠি অন্য দেশের জন্য আরেকটি মাপকাঠি। সুতরাং তাদের কোনো স্ট্যান্ডার্ড মাপকাঠি নেই। তাই আমি মনে করি, এটা নিয়ে যতটা হৈ-হল্লা হচ্ছে, সেটার কোনো দরকার নেই।

কালবেলা: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে বাংলাদেশ কি বড় ধরনের চাপে পড়বে না?

হাসানুল হক ইনু: আমি মনে করি না বাংলাদেশ কোনো চাপে পড়বে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে পর্যায়ে রয়েছে, তাতে আমরা নিজেদের মতো করে এগিয়ে যেতে পারব। বাংলাদেশে ভোট হয়ে যাবে, বন্ধুরাষ্ট্র বন্ধু হিসেবেই অবস্থান করবে এবং পৃথিবী সহাবস্থান করবে। সুতরাং পশ্চিমা চাপ নিয়ে আমি মাথা ঘামাচ্ছি না। বাংলাদেশ তেমন কোনো চাপে পড়বে বলে আমি মনে করছি না।

কালবেলা: প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিরোধী দল। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পরেই তারা নির্বাচনে যাবে বলে ঘোষণা করেছে। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?

হাসানুল হক ইনু: বিএনপির এ দাবি সাংবিধানিক ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সুতরাং এ দাবিকে আমি সমর্থন করতে পারি না। বিএনপিকে নির্বাচনেই আসতে হবে। আর নির্বাচনে না এলে তাদের ভাগ্য তারা বরণ করবে। এখানে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে।

কালবেলা: যখন ১৪ দল গঠন করেছিলেন তখন আপনাদের সামনে কিছু আদর্শ ছিল। গত ১৫ বছরে সেগুলোর কতটা অগ্রগতি হয়েছে?

হাসানুল হক ইনু: ১৪ দলের রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল সাম্প্রদায়িকতামুক্ত এবং রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করা। আমরা সেই ধারা আংশিক অর্জন করেছি, কিছু বাকি রয়ে গেছে। আমরা রূপান্তরের পর্যায়ে রয়েছি, আমরা উত্তরণের পর্যায়ে রয়েছি। এই উত্তরণ পর্যায়ের মধ্য থেকেই আমরা আগামী নির্বাচনে যাচ্ছি। সুতরাং ১৪ দল বহাল থাকবে এবং বাকি লড়াইটা আমরা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করব।

শ্রুতলিখন : মুজাহিদুল ইসলাম

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ক্ষোভে জাতিসংঘ সনদ ছিঁড়লেন ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত

দিনটি কেমন যাবে আপনার, জেনে নিন রাশিফলে

বাংলাদেশিদের স্বল্প খরচে চিকিৎসা দেবে ভারতের মণিপাল হাসপাতাল

ঢাকায় বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে আজও

যশোরে ছুরিকাঘাতে কলেজছাত্র খুন

এসএসসির ফল দেখবেন যেভাবে

১২ মে : নামাজের সময়সূচি

রোববার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

বিশ্ব মা দিবস আজ

হঠাৎ রঙিন হয়ে উঠলো রাতের আকাশ

১০

আজ থেকে বাসের ‘গেটলক সিস্টেম’ চালু

১১

এসএসসি ও সমমানের ফল জানবেন যেভাবে

১২

‘প্রত্যেক নারী পাবেন ১ লাখ করে ভাতা’

১৩

বিশ্ব মা দিবস / মিসেস গুলশান আরা বেগম স্মরণে ‘তুমি হাসিছো কাঁদিছি মোরা’

১৪

রাবিতে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ

১৫

এসএসসির ফল ঘোষণা আজ

১৬

৩৫ প্রত্যাশীদের আমরণ গণঅনশন

১৭

আজ থেকে নতুন দামে কিনতে হবে সোনা 

১৮

দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অফিস

১৯

রিয়াল বিক্রির নামে প্রতারণা, মূলহোতা ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

২০
X