রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। শুরু থেকেই তারা নানারকম অনিয়ম, দুর্নীতি, সংঘাত ও সহিংস কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর একে একে তারা ‘এনআইডি’ কার্ড সংগ্রহ করে, এদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে এবং এই পাসপোর্ট নিয়ে তারা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায়। বিদেশে গিয়েও তারা নানারকম অনিয়ম, দুর্নীতি ও সহিংস কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে। এখন তারা দেশের মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংসহ নানা রকম আর্থিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তারা মাদক চোরাচালানে সহযোগিতা করছে।
শনিবার কালবেলায় প্রকাশিত ‘রোহিঙ্গা কবজায় মোবাইল ব্যাংকিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনৈক শফি আলম টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মোচনীপাড়া এলাকার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বড় এজেন্ট। বেশি লেনদেনের কারণে মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে তিনি সেরা এজেন্টের পুরস্কারও পেয়েছেন। গত কয়েক মাসে তার এজেন্ট নম্বরের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে অন্তত অর্ধকোটি টাকা। ওই এলাকায় এজেন্টদের মধ্যে শফি আলম বেশ প্রভাবশালী। তবে এই শফি বাংলাদেশের নাগরিকই নন! তিনি মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা। দেশটি থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে টেকনাফে স্ত্রীসহ আশ্রয় নিয়েছেন। এখন তিনি দুই সন্তানের বাবা। তাদের পুরো পরিবারই জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত। কাগজপত্র অনুযায়ী শফি আলম পরিবার নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকার কথা। কিন্তু তিনি এখন মোচনীপাড়ায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বড় এজেন্ট! মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য কোনো মোবাইল ফোন অপারেটরের নিবন্ধিত সিম দরকার। মোবাইল ফোনের সিমের সেই নিবন্ধন বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের কোনো নাগরিকের পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু রোহিঙ্গা হয়েও শফি আলম তা পেলেন কীভাবে এবং এত টাকার লেনদেনের নেপথ্যেই বা কী! টেকনাফে বড় ব্যবসা-বাণিজ্যও নেই। তবুও টেকনাফে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড পরিমাণ লেনদেনে আলোচনায় এ এলাকাটি। শফি আলম ছাড়াও বিপুল পরিমাণ লেনদেনের কারণে অসংখ্যবার পুরস্কারও পেয়েছেন সেখানকার অনেক স্থানীয় মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট। টেকনাফে আছে প্রায় সব ব্যাংকের শাখাও। টেকনাফের সীমান্ত এলাকায় এই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অস্বাভাবিক পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের নেপথ্যে মাদকের কারবারিরা। মাদকের অবৈধ টাকা লেনদেনে এই এলাকায় গড়ে উঠেছে শক্তিশালী মোবাইল ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক। এর প্রায় পুরো নিয়ন্ত্রণ রোহিঙ্গাদের হাতে।
রোহিঙ্গারা যে হুন্ডির মাধ্যমে মাদক চোরাচালানের টাকা পরিশোধ করছে একথা স্বীকার করেছেন খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাদকের টাকা লেনদেন হচ্ছে, বিষয়টি সত্যি। টেকনাফের মতো একটি ছোট উপজেলায় এত বড় বড় অঙ্কের লেনদেন সন্দেহজনক। বিভিন্ন সময় তদন্তে এবং আসামি ধরতে গিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি উঠে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে কথাও বলেছি যে, এত বড় বড় লেনদেন কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কারা করছে—বিষয়টি আরও ভালোভাবে নজরদারি করার জন্য।’
আমরা মনে করি, টেকনাফের জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সহযোগিতা ছাড়া রোহিঙ্গাদের এহেন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়াটা সম্ভব নয়। তাই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।